অধ্যবসায় কে নতুন মাত্রায় রুপ দিয়ে উদ্যোক্তা সুলতানা আশরাফী কলি

 অধ্যবসায় কে নতুন মাত্রায় রুপ দিয়ে উদ্যোক্তা সুলতানা আশরাফী কলি

সাফল্য অর্জন করা আর সফল হওয়া এক নয়। সুবিধা পেলে অনেকেই সফল হতে পারে। অনেককে জোর করে সফল বানানো হয়। কিন্তু যে নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে সফল হয় – সেই প্রকৃত সাফল্য অর্জন করে। সাফল্য অর্জনে নিজের মেধা,শ্রমের পাশাপাশি চেষ্টার প্রয়োজন হয়।নিজেকে নিজেই মূল্যায়ন করতে হয়।নিজের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানতে হয়। আজ জানব এমনই একজন উদ্যোক্তা সম্পর্কে যিনি কিনা অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পরও নিজেএ প্রবল ইচ্ছেশক্তি দ্বারা করেছেন অনেক কিছুই।টিউশন থেকে পার্লার এর কাজ ও কাপড় নিয়েও কাজ করেন।বর্তমানে তিনি কাজ করছেন হোমমেইড খাবার নিয়ে।কথা বলছি উদ্যোক্তা সুলতানা আশরাফী কলি ও তার উদ্যোগ ” Ghorer khabar” নিয়ে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মিরপুরের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

আপনারা সম্পর্কে কিছু বলুন?

আমি সুলতানা আশরাফী কলি।আমি ঢাকার মেয়ে শাহজাহান পুর এলাকার স্থানীয়।আমি মতিঝিল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে লেখাপড়া করেছি।

আপনার একজন উদ‍্যোক্তা হয়ে উঠা কিভাবে ?

আমার খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। জীবন যুদ্ধ বলুন আর জীবনে কিছু করে নিজেকে সাবলম্বী করার চেষ্টা বলুন এসব আমার তখন থেকেই শুরু। আমার কিছু একটা করার প্রথম শুরু হলো টিউশনি, আমি অনেক দিন টিউশনি করেছি যখন আমার বড় মেয়ে দুনিয়ায় আসে তখন বাধ্য হয়েই টিউশনি টা ছেড়ে দিতে হয়।এর পর আমি শুরু করি থ্রি পিস এর ব‍্যবসায়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমি থ্রি পিস নিয়ে কাজ করছি এখন পযর্ন্ত। পাশাপাশি আমি পার্লারের কাজ শিখে বাসায় বসে ফেসিয়াল থেকে শুরু করে রিবন্ডিং করেছি, আত্মীয় বান্ধবী প্রতিবেশি বোন সবাই আমার কাষ্টমার। বিয়ের পর থেকে দেখলাম আমি যা–ই রান্না করি সবাই অনেক প্রশংসা করে, তখন রান্নার প্রতি আগ্রহ আমার বেড়েই যায়।আমি ধীরে ধীরে সব রান্না নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলাম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি কেক বানিয়ে দিতাম তখন থেকে একটু করে আমার কনফিডেন্স লেভেল বাড়তে থাকে। গত বছর করোনার সময় যখন লকডাউন দিলো ঘরে বসে সময় কাটতে চাইতো না, একদিন হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার রান্নার একটা ইউটিউব চ‍্যানেল খুলবো এবং খুলে রান্না দেখাতে লাগলাম, অনেককেই বললাম আমার চ‍্যানেল টা যেন সাবস্ক্রাইব করে এর মধ‍্যেই আমার একজন প্রতিবেশি ভাবি বললো আমি যেন উনাকে কিছু ফ্রোজেন ফুড বানিয়ে দেই তখন খুশি খুশি রাজি হয়ে গেলাম। যখন অফিস খুলে দিয়েছে সবকিছু মোটামুটি খুলেছে একদিন আমার হাসব‍্যান্ডের একজন পরিচিত বন্ধু বলল ” ভাবি তো ভালই রান্না করে চ‍্যানেলে দেখি ভাবি কি আমার অফিসে ১৫ জনের দুপুরের খাবার দিতে পারবে?” আমার হাসব‍্যান্ড এসে আমাকে বলে আমি রাজি হয়ে যাই আর তখন থেকেই আমি আমার ঘরের খাবারের পেইজ রেডি করি তখন সাথে সাথে অনেক বন্ধু পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অর্ডার করতে থাকে। আর আমার উদ‍্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন এখন আকাশ চুম্বি।

আপনি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন?

আমি আমার অনেক কাজের মধ্যে এখন পুরোপুরি রান্নার কাজ নিয়েই ব‍্যস্ত। আমি ঘর থেকে খাবার তৈরি করে ডেলিভারি করে থাকি, যেটাকে আমরা বলি “হোম মেইড ফুড”।সব ধরনের খাবার যেমন বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি, পোলাও, রোস্ট, রেজালা, কাবাব, ফাস্টফুড, ফ্রোজেন ফুড, ডেজার্ট আইটেম, কেক, সবকিছু আমি নিজের হাতে তৈরি করে হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি।

উদ‍্যোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং সবচেয়ে কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

আসলে যেকোন কাজেই কিছু না কিছু বাধা আসবেই আমার জিবনেও এসেছিল কিন্তু তেমন কোনো বড় বাধার সম্মুখীন আমি কখনোই হইনি। আলহামদুলিল্লাহ্।যেমন আমার দুই মেয়ে যখন হয় তখন একটু সমস্যা হতো আমি ছোট বাচ্চা রেখে কাজ করতে পারতাম না, তেমন কোনো হেল্প করার মতো কেউ ছিলো না বাধ‍্য হয়ে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল আর তেমন কোনো সমস্যায় পরিনি। আসলে আমার হাসবেন্ড আমাকে জীবনে এতটাই হেল্প করেছে আমার কাছে সব কিছু সহজ মনে হয় যেকোন কাজ আমি আনন্দের সাথে করতে পারি। আমার উদ‍্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার হাসবেন্ডের উনি আমাকে সর্বক্ষন সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে জিনিস কেনা থেকে শুরু করে এমনকি মাঝে মাঝে ডেলিভারি করাতেও আমাকে ও হেল্প করে। একমাএ আমার হাসবেন্ডের কারনে আমার জিবনের সব কঠিন কিছু অনেক সহজ মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ্। আরেক জন যে আমাকে সর্বক্ষন সাপোর্ট করে যাচ্ছে আমার প্রতিটা কাজে হেল্প করে যাচ্ছে সে হলো আমার বড় মেয়ে জারা…. আমার ছোট মেয়ে রানিয়া অনেক ছোট কিন্তু আমার বিশ্বাস একটা সময় সেও আমাকে সাপোর্ট করবে অনেক। হাসবেন্ড আর বাচ্চারা ছাড়াও ছাড়াও যারা আমার জীবনে অনেক বড় ভুমিকা রাখে যারা আমাকে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে সবসময় আমার পাশে থেকেছে তাদের কথা না বললেই নয় তারা হলেন আমার মা বাবা মেজ বোন(জুলি) মেজ দুলাভাই(জাহাঙ্গীর) আমার সেজ ননাস (শিল্পী) সেজ দুলাভাই (অসিম) এই মানুষ গুলো আমার জীবনে অনেক বড় জায়গা দখল করে আছেন এবং থাকবেন উনারা না থাকলে আজকে আমি এত দূর আসতেই পারতাম না।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

ডঃ আব্দুল কালাম স‍্যারের একটা কথা আছে “তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেটা দেখ ঐ টা স্বপ্ন নয়….যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেয় না ঐ টাই প্রকৃত স্বপ্ন” এই কথাটা আসলেই সত্য। আমার হোম মেইড খাবার এর ভবিষ্যত নিয়ে আমি যখনই ভাবি আমার চোখে একটা ব‍্যানার দেখতে পাই, যেখানে লেখা থাকবে “ghorer khabar” যেখানে অনেক মায়েরা মেয়েরা আমার সাথে কাজ করবে আমি একটি রেস্টুরেন্ট দিতে চাই যেখানে সব কিছু করবে মায়েরা মেয়েরা যেখানে রান্নার কাজ থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করা পযর্ন্ত সমস্ত কিছু করবে মেয়েরা।এখানে স্টুডেন্ট মেয়েরা কাজ করতে পারবে গৃহীনিরা কাজ করতে পারবে এবং অনেক মধ‍্য বয়সি মা খালা আছেন যাদের একটা সময়ে এসে আর সময় কাটতে চায় না উনারাও আমার রেস্টুরেন্টে কাজ করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে এটাই আমার পরিকল্পনা।

RedLive

Related post