আত্বপরিচয় গড়তে ঘরে তৈরি খাবার দিয়েই উদ্যোক্তা আজিজা লিপি

 আত্বপরিচয় গড়তে ঘরে তৈরি খাবার দিয়েই উদ্যোক্তা আজিজা লিপি

এখনো আমাদের দেশে নারীদের জীবনে চলার পথে পদে পদে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়।কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া।এখনো আমাদের সমাজে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।এতসবের মাঝে আর স্বাবলম্ভী হয়ে উঠা হয়না নারীদের।বিভিন্ন কাজের দক্ষতা থাকলেও এসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজে স্বাবলম্ভী হওয়া দুস্কর। কিন্তু পড়াশোনা থেমে যাওয়া, তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়া এসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজেই আজ উদ্যোক্তা নীলফামারী এর আজিজা লিপি।নিজের ঘরে বানানো বিভিন্ন খাবার দিয়ে মুগ্ধ করছেন ক্রেতাদের।অনলাইন অফলাইন দুইভাবেই করছেন ব্যাবসায়।আজ জানব আজিজা লিপি এর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প নিয়ে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা কিভাবে?

ছাত্র জীবণ থেকেই রান্নার পাশাপাশি নানারকম হস্তশিল্প, ও সুচিশিল্পের আকর্ষণ থাকায় স্বপ্ন দেখতাম বড় কিছু করার। ক্রস স্টিচের কাজ ছিল খুব প্রিয়।ইচ্ছে হত আমার যদি বিশাল একটা সেলাই প্রতিষ্ঠান থাকত,যেখানে সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের নিয়ে ক্রস স্টিচ ওয়ার্ল্ড নামে গড়ে তুলবো আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। পিতার শখ ছিল ডাক্তারী পড়াবেন।তবে ভাগ্যে ছিল না।চারটি লেটার নিয়ে এস এস সি পাশ করার পর, এইচ এস সি র আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং খুব কাছাকাছি দুটো বেবী।পড়ালেখার পাঠ চুকে যায় সেখানেই।তবে প্রচন্ড রকমের আত্বসম্মানবোধ থাকায় অভিভাবকদের কাছে নিজ থেকে কিছু নিতে পারতাম না। আর প্রতিটি মানুষের ই নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকে।থাকে কিছু মানবিক চাহিদা আর সামাজিক দায়বদ্ধতা।অনেক কাজ জানা থাকা সত্ত্বেও কোন রাস্তা বেড় করতে পারছিলাম না।তবে তাগাদা অনুভব করতাম আমাকে কিছু করতেই হবে। বিশেষ করে আমার চারপাশের কিছু বিধবা আর ইয়াতীম বাচ্চাদের আমার মত করে পাশে থাকার প্রচন্ড তাগিদ আমাকে আজ উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখাতে সাহস জুগিয়েছে।আমি আমার মত করে কিছু মানবিক চাহিদা পূরণের আর আমার একটা পরিচয় গড়তে এই জার্ণিতে শামিল হয়েছি।

আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাচ্ছেন কাদের?

আমার তিন ছেলেমেয়ে আমার এই কাজে সবসময় পাশে থেকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে এবং অনলাইনে তারাই আমাকে সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। কোনকারনে আমি থেমে যেতে চাইলেও তারাই আমাকে উৎসাহ জুগায়।আল্লাহপাকের রহমত আর তাদের ভালবাসাময় সহযোগীতায় আমার এগিয়ে চলা।

কি ধরনের সম্মুখীন হয়েছেন উদ্যোক্তা হতে?

আর বাধা বলতে, পারিবারিকভাবে তেমন না বললেই চলে।তবে সামাজিক ভাবে তো কিছুটা হতেই হয়।যেগুলোকে ইগনোর করার মত মানসিক শক্তি গেইন করার চেষ্টা করি।

কি ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন এবং এখন কেমন চলছে ব্যাবসায়?

টুকটাক কিছু সবসময় করার চেষ্টা করেছি অফলাইনে।২০১৮সালের ঈদুল আযহার পুর্বে সামান্য কিছু পুজি নিয়ে শুরু করি আমার উদ্যোগ হোমমেইড ফুড নিয়ে।সবধরনের খাবার নিয়ে কাজ করলেও। দূরবর্তী জেলা গুলোতে শুকনো খাবার গুলোই পাঠাতে পারি।আমার ভালবাসার কাজ ছিল হোমমেইড সবধরনের মিষ্টি নিয়ে।কিন্তু উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে সেই কাজ নিয়ে আগানো সম্ভব হয়নি।আমার সিগ্নেচার পণ্য হোমমেইড লাচ্ছা সেমাই,ক্ষীর প্যারা সন্দেশ,স্পেশাল ঘি সন্দেশ।স্পেশালি লাচ্ছা সেমাইয়ের অনলাইন ও অফলাইনে ১০০%ফিডব্যাক আমাকে প্রচন্ডরকমের আশাবাদী করে তুলেছে।উপযুক্ত প্রচারণা পেলে ইনশায়াল্লাহ বড় কিছু করার আশা রাখি ভবিষ্যতে।আরো যা আছে আমার উদ্যোগে (নক্সিপিঠা,ঘি,হাতেভাজা,মুড়ি,চানাচুর,রাতাশাইল চাউল,বাকলাভা,মুড়ালি,নিমকি,গুড়োদুধ,হোমমেইড বিস্কিট) আমার ফেসবুক পেজ ” Sahi Taste”

ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন,পরিকল্পনা কি?

আলহামদুলিল্লাহ, অল্প সময়ে অনেক ভালবাসাময় সাপোর্ট পেয়েছি ও পাচ্ছি।আর তাই তো স্বপ্ন দেখি আমার পেজ Sahi Taste এর একটা ব্র‍্যান্ডে রুপ দেয়ার।স্পেশালি লাচ্ছা সেমাই ও সন্দেশ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই স্বপ্নপুরণের লক্ষ্যে।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।