মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ উই এর হাত ধরে-উদ্যোক্তা সালমা জাহান

উদ্যোক্তা সালমা জাহান।।ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানায় জন্ম ,শৈশব বেড়ে ওঠা সবই রাজাপুরে। তিনি রাজাপুর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পরে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন।ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। আদরের ছিল বটে।তার একটি উদ্যোগ রয়েছে Sathiya’s Closet ।আজ আমরা তুলে ধরেছি তার এই তিনি কিভাবে উদ্যোগটি শুরু করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।
কিভাবে আপনার উদ্যোক্তা পথ চলা শুরু এবং কেন?
এইচএসসি পাশের পরেই আমার বিয়ে হয়ে যায়।।আমার শ্বশুর প্রাইমারি শিক্ষক ছিলেন তিনি বিয়ের পর থেকেই বলতেন পড়াশুনায় মনোযোগী হতে,তার ইচ্ছে ছিল আমি যেন প্রাইমারি জব করি,আমার হাজবেন্ড ও সেটাই চাইতেন।কেননা আমার শ্বশুর বাড়িতে ম্যাক্সিমাম সদস্য প্রাইমারি জব করে,তাই আমাকে নিয়েও তাদের একই ইচ্ছে ছিল।প্রথম থেকেই কেন জানিনা আমার জবের প্রতি আকর্ষণ খুব কম ছিল। তারপর বিয়ের তিন বছর পরে আমার কোল জুড়ে একটি কন্যা সন্তান আসল,ও আসার পরে আমার পুরো জগৎ টাই বদলে গেল।তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যা কিছুই করব ওর পাশে থেকেই করব,ঘরে বসে পর্দা সহকারে কিছু একটা করতে হবে আমাকে।
উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর দিকের গল্পটা জানতে চাই।
-নিজের একটা আলাদা পরিচয়ের জন্য আমাকে কিছু করতেই হবে যাতে আমি মেয়ে কেও সময় দিতে পারব কাজও করতে পারব,এরকম ইচ্ছে ছিল।।কিন্তু কি করব কি করা উচিত তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ভেবেছি,খুব হতাশা কাজ করত। মনে হত হয়ত আমি কিছুই করতে পারব না,এরকম হতাশাময় সময়ে হঠাৎ আলোর দিশারী হয়ে উই আমার সামনে আসল!আমার পুরো জীবনটাই উই বদলে দিল,উই তে জয়েন হওয়ার পরে চারমাস শুধু উই এর সব আপুদের অনুপ্রেরণা মূলক পোস্ট পড়েছি,রাজীব স্যারের দিকনির্দেশনা গুলো ফলো করেছি।স্যারের একটা কথা আমার মনে খুব দাগ কেটে ছিল;স্যার বলেছিলেন,”যারা পর্দা করেন আর যারা পর্দা করেন না,উই তে সবাই সমান,এখানে কারো ফেস দেখানোকে প্রায়রোটি দেয়া হয়না,এখানে মূলত কাজকে প্রাধান্য দেয়া হয়”।ব্যাস!যেমনটা চেয়েছিলাম সবটা জুড়েই উই!উই তে জয়েন করার চার মাস পরে মাত্র ২৫০০ টাকা দিয়ে কিছু দেশীয় থ্রিপিস নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম,আমার হাজবেন্ড শুরু থেকে আমাকে সাপোর্ট করে এসেছেন,এবং তিনি আমাকে প্রচুর পরিমাণে হেল্প করছেন।।
আসলে নিজের ভালো লাগা থেকেই মূলত ব্যবসায়ে আসা। একজন উদ্যোক্তা সমাজে অনেক অবদান রাখতে পারেন।।এবং অবশ্যই এতে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে,কারো অধীনস্থ থাকতে হয়না।।একজন উদ্যোক্তাই পারেন বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।।মূলত এসব দিক চিন্তা করেই আমার উদ্যোক্তা জীবন বেছে নেওয়া।।
কোন প্রোডাক্ট দিয়ে আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন?
-আমি শুরু করেছিলাম কিছু দেশীয় থ্রিপিস নিয়ে,পরবর্তীতে আমার সিগনেচার পন্য হিসেবে জামদানি কে বেছে নেই,জামদানির প্রতি ভালোবাসা আমার অনেক আগে থেকেই,সেই ভালোবাসা থেকেই জামদানি থ্রিপিস এবং জামদানি পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করছি।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো?
-আলহামদুলিল্লাহ্ উদ্যোক্তা হতে আমার পারিবারিক কোন বাধা ছিল না।তবে ভয় ছিল যদি শ্বশুর আব্বা কিছু বলেন,সেই ভয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার তিন মাস পরে তাকে বলেছিলাম।কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ তিনি আমাকে কিছু বলেননি,আমি যে কাজে স্বচ্ছন্দবোধ করি তিনি তা করতে বললেন এবং তিনি শোনার পরে আমার বিজনেসে ইনভেস্ট পর্যন্ত করেছেন।আর সেই টাকা দিয়েই আমি আমার জামদানির যাত্রা শুরু করেছি আলহামদুলিল্লাহ্।।তবে অনেকে অনেক কথা বলতো,বিশেষ করে আমার হাজবেন্ডের কলিগরা তাকে এটা সেটা বলে বিব্রত করতো,কিন্তু আমার হাজবেন্ড সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। তারপরও আমি হতাশ হয়নি। কারণ আমি ভাবতাম, যে যা বলে বলুক আমাকে আমার কাজটা কনটিনিউ করতেই হবে। সফলতায় পৌঁছাতে বাধা তো আসবেই। অনেকে অনেক কিছু বলেছে,তারপরও আমি আমার স্বপ্ন থেকে একটুও পিছিয়ে যায়নি।।আমার জার্নিটা খুব সহজও ছিল না,কেননা পুরো জার্নিটাতেই আমার মেয়ে টা অনেক অসুস্থ ছিলো,ওর টেককেয়ার করা,সংসার সামলানো,সব কাজ ঠিক রেখে নিজের কাজ করতে হয়েছে,ঐ মুহূর্তে খুব হতাশা কাজ করত,কিন্তু উই থেকে পাওয়া প্রিয় কিছু বোন এবং আমার হাজবেন্ড সর্বদা আমাকে উৎসাহ দিতেন,আর সেজন্যই হয়ত আমি আমার কাজটা কনটিনিউ করতে পেরেছি।।খারাপ পরিস্থিতিতে একটু উৎসাহ মনের জোর বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।।তাই বলবো প্রতিবন্ধকতা তো জীবনে থাকবেই,তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব।।
উদ্যোক্তা জীবনে কে আপনাকে বেশি সাপোর্ট দিয়েছেন?
-উদ্যোক্তা জীবনে আমাকে সবথেকে বেশি সাপোর্ট যে মানুষটি করেছেন,তিনি আমার হাজবেন্ড,শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আমাকে সাহায্য করছেন।।আমার পরিবারের সদস্যরাও আমাকে প্রচুর সাপোর্ট করেছেন,আমার উদ্যোগের প্রথম ক্রেতা আমার বোনেরা আলহামদুলিল্লাহ্।।
আপনার কাজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
-আমি যেহেতু দক্ষিণাঞ্চল থেকে কাজ করছি,তো দক্ষিণাঞ্চলে জামদানির পরিচিতি তেমন নেই বললেই চলে। অনেকটা এরকম যে,আমি যখন প্রথম জামদানি পাঞ্জাবি নিয়ে আসি,এক আত্মীয় প্রশ্ন করেছিলেন জামদানির পাঞ্জাবি হয়,মানে তিনি সেটা জানতেন না।এরকম অনেকেই আছেন যারা জামদানি বলতে শুধু শাড়িকেই চিনেন,জামদানির এখন যে ফিউশন গুলো যোগ হয়েছে সেটা অনেকেই জানেনা বা চিনে না।।তো আমার স্বপ্ন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে জামদানিকে প্রতিষ্ঠা করা,দক্ষিণাঞ্চলে জামদানি বলতে যেন আমার প্রতিষ্ঠান Sathiya’s Closet (আমার পেইজের নাম) কেই সবাই চিনে।নিজের প্রতিষ্ঠানকে জামদানির ব্রান্ড হিসেবে দেখতে চাই,এবং এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চাই।Sathiya’s Closet এর জামদানি শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে দিতে চাই।।