মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
আমার স্বপ্ন আমার কেকের সুনাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই- শারমিন তাসনুভা

আমাদের সমাজে সফল ব্যবসায়ীর তালিকায় নারীর সংখ্যা খুব একটা নেই বললেই চলে। এর পিছনে বিভিন্ন ধরনের মানুষিক, পারিবারিক এবং সামাজিক কারন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারপরেও কিছু কিছু নারী পিছপা হয়ে থাকেনি। সকল বাঁধা পেরিয়ে নিজেদেরকে সাফল্যের শিখরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বর্তমানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা পূর্বের তুলনায় সহজ। একজন জয়ী ব্যবসায়ী নারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে অবশ্যই ।
আজ আমরা তুলে ধরেছি একজন সফল উদ্যোক্তার কথা। তার রয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান Tasnuva’s kitchen , এবং vabli’s collection। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।
প্রথমে আপনার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাই।
-আমি শারমিন তাসনুভা,যেহেতু আমি ঢাকার মেয়ে এবং ঢাকার বউ সেহেতু দুই ভাবেই আমি ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা।আমি সোহরওয়ারর্দী কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করে এখন বর্তমানে গৃহিণী। আমার হাসবেন্ড একটি প্রাইভেট কম্পানিতে জব করছেন। আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায়।আমার বাবা সরকারী চাকরি করতেন,সেই সুবাদে আমার ডাক বিভাগে চতুর্থ শ্রেণী পোস্টে চাকরি হয়।এক বছর জব করেছি পাশাপাশি পড়াশুনা করেছি,আমি পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ায় আমার উপর বিয়ের চাপ ছিল প্রতিনিয়ত।আমার হাসবেন্ড আমাকে পছন্দ করত বলে দুই পরিবারের সম্মতিতেই একটি অপরিণত সময়ে আমাদের বিয়ে সম্পুর্ণ হয়।বিয়ের পরের জীবন গুলো আমার জন্য সহজ ছিল না,বিয়ের পর আমার স্বামী,আমার শ্বশুর বাড়ির লোক আমার চাকরির পক্ষে ছিলেন না,অনেক সমস্যা দেখা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম,কিন্তু কেন যেন ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগত না।হাসবেন্ডকে বুঝিয়ে একটা স্কুলে জয়েন করি,কয়েক বছর করার পর আমার দ্বিতীয় বেবি হয়,বেবি ছোট থাকায় স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়,আমার পুরাতন স্টুডেন্টরা আমার কাছে প্রাইভেট পড়ার আগ্রহ দেখায়,যার ফলে আমার নিজ বাসায় আমিই তিনটি ব্যাচ পড়াচ্ছি।
আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
-গত বছর করোনা প্যান্ডেমিকে উই এর দেখা পাই,কার মাধ্যমে উইতে জয়েন হয়েছি সঠিক বলতে পারছি না,তবে তাকে মন থেকে ধন্যবাদ ও ভালবাসা দিবো সব সময়। করোনা প্যান্ডেমিকে আমার ব্যাচ পড়ানো অফ থাকে,আমার হাসবেন্ডের অফিস অফ থাকে,অনেকটা হতাশায় দিন গুলো কাটচ্ছিল,উই পোস্ট পড়ে কিছুই বুঝতাম না,তবুও পড়ে যেতাম কেন যেন উদ্যেক্তা হবার পোস্ট গুলো আমার মন কে নাড়া দিত কিছু করার তাড়নায়। উই এর পোস্টগুলো পড়তে থাকতাম,হাসবেন্ডকে অনলাইন বিজনেস করার ব্যাপারে বুঝাতে লাগলাম,কি নিয়ে শুরু করব ,কোথা থেকে শুরু করব,এত টাকা কোথায় পাব এই চিন্তা করতেও দুই মাস লেগে গেল।গত বছর জুন জুলাইয়ের দিকে খিমারের খুব চল শুরু হল।সবার পছন্দ খিমার ,আমার হাসবেন্ডের এক বন্ধুর খিমারের কারখানা ছিল,সে তার বন্ধুর বিশেষ উপকার করে দেয়ায় সে আমাদের খিমার সেলের ব্যাপারে সাইড ছিল।উইতে অক্টোবরের শেষের দিকে পোস্ট করা শুরু করলাম,আমার ভালই খিমার সেল হয়েছে।
শুরুর দিকে আপনার কেমন সেল ছিলো?
-আমি নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ৭৬,৭০০ টাকার খিমার সেল করি,তখন উইতে আমার সেল ৫০%।অনেকেই আমার কাছ থেকে খিমার কিনেছিলেন।
তারপর চলে এল শীতকাল।রাজীব স্যার উনার পোস্টে খেজুরগুড় সেল করার কথা বললেন,তাই আমিও আমার হাসবেন্ড মিলে খিমারের পাশাপাশি ৩০০কেজি নাটোরের খেজুরগুড়ও ১০০ কেজি ঝোলা গুড় সেল করি,৫৬,৩০০টাকার খেজুরগুড় সেল করি।
ক্রেতাদের থেকে কেমন সাড়া পেয়েছিলেন?
-উই এর আপুদের সুন্দর সুন্দর কেক দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতাম আর ভাবতাম এত সুন্দর কেক কিভাবে বানায়!তাই খিমার ও খেজুরগুড় এর লাভের টাকা দিয়ে আমি কেকের তৈরির কোর্স কমপ্লিট করি।প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করি,উই থেকে আমার কেকের অর্ডার আসে । তার চেয়ে বেশী আসে আমার নিজ এলাকা থেকে।আলহামদুলিল্লাহ্! উই হাট বাজারের কারণে আমি অনেক গুলো কেকের অর্ডার পাই।অনেকেই ঈদের জন্য কেক প্রি অর্ডার করে রেখেছেন।হিসেবের খাতা মিলিয়ে দেখি ঈদের অর্ডার সম্পূর্ণ করলে আমি ৫১,৬০০টাকার কেকের অর্ডারের কাজ করা হবে,তার মানে কেক নিয়ে আমি অর্ধ-লাখপতি হয়ে গেলাম।
বর্তমানে আর কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন?
-আমি এখন খিমার সেল অফ রেখেছি।হোমমেড কেক, এবং রোজার ওয়েভের জন্য বেবিড্রেস,খাদি পান্জাবী নিয়ে কাজ করছি।আলহামদুলিল্লাহ্! মোটামুটি সেল হচ্ছে,তবে অনেক গুলো কেকের অর্ডার থাকায় কেকের সেল আপডেট তাড়াতাড়িই দিতে পেরেছি।এই আনাড়ি হাত দিয়ে ছয় মাস যাবৎ কেকের কাজ করছি আর পাঁচ মাস যাবৎ সেল দিচ্ছি। উই আসলে আমার জন্য আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে আজ উই এর কল্যানে আমি আমার স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে পূরণ করতে পারছি।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
-উদ্যেক্তা হতে গিয়ে প্রথম প্রথম অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি,কিন্তু আমার হাসবেন্ড একটা সময় আমাকে চাকরিই করতে দিল না।আর এখন সেই হাসবেন্ডই আমাকে সার্পোট দিয়ে যাচ্ছেন,এটা আমার জন্য অনেক অনুপ্রেরণা কাজ করে।কেকের বেশী অর্ডার থাকলে সে আমাকে হেল্প করে ,ডেলিভারি দিকে সমস্যা হলে সে নিজে গিয়ে দিয়ে আসে,কোনো সংকোচ বোধ করেন না,এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া বলতে পারেন। আমার জীবন টা খুব সহজ ছিল না,অনেক স্ট্রাগল করেই আমি এই পর্যন্ত এসেছি।
আমি মনে করি প্রতিটি মেয়ের একটি আলাদা পরিচয় দরকার,নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য,সংসারে আর্থিক উন্নতির জন্য,প্রতিটি মেয়ের কিছু না কিছু করা উচিত।
আপনার উদ্যোগটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কি?
-আমার স্বপ্ন আমার কেকের সুনাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে যাবে ,আমার পেইজের নামে একটি শপ থাকবে,সেই শপে কিছু সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা কাজ করবে,যেন এখান থেকেই তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়।
তাই আমার খুব ইচ্ছে অসহায় মেয়েদের নিয়ে কিছু করা,যাদের মধ্যে উৎসাহ আছে কিছু করার,কিন্তু সার্পোট পাচ্ছে না সেই সার্পোট টা আমি দিতে চাই।প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু প্রতিভা লুকিয়ে আছে,ধৈর্য্য সহকারে ভেতর থেকে সেই প্রতিভাটাকে কাজে লাগালে ইনশাআল্লাহ সফল হবেই!