উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তবে মেনে চলুন কিছু পরামর্শ

 উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তবে মেনে চলুন কিছু পরামর্শ

বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় নতুন এক পেশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেটি হলো একজন উদ্যোক্তা হওয়া। সহজ ভাষায়,উদ্যোক্তা হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি সকল প্রকার আর্থিক ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখে,নিজের সৃজনশীলতা,মেধা এবং শ্রমের মাধ্যমে একটি নতুন ব্যবসা কিংবা সেবা পরিচালনা করেন। কিন্তু একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পদার্পণ করতে চাইলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরি।

বর্তমানে দিনের বেশিরভাগ সময় আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচরণ করে থাকি। সেই কারণে আমরা প্রায়ই হুজুগের বর্শবর্তী হয়ে বা অন্য যেকোনো কারণে যেকোনো বিষয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায় ওই বিষয়ে আমাদের আগ্রহ প্রায় শুন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছে। এর ফলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরিবর্তে হতাশার অন্ধকারে ডুবে যায় চারপাশ। তাই এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে ‘যাচাই’ করুন

অনেকেই ভাবতে পারেন যে,উদ্যোক্তা হওয়া খুবই সহজ একটি কাজ। যে কেউ যেকোনোভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে খুব সহজেই। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। উদ্যোক্তা হয়ে উঠার আগে নিজেকে আগে প্রশ্ন করে নেওয়া উচিত যে,’আমি আসলেই উদ্যোক্তা হতে চাই কিনা’।

আমরা সাধারণত যেকোনো পেশার ভালো দিক এবং সুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনা করি। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বে উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে খারাপ এবং কঠিন বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। আপনি কতটা সহনশীল,সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী এবং প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে পারবেন কিনা এসব যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। আপনি যদি নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হোন এবং প্রতিকূল অবস্থায়ও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হোন তবে উদ্যোক্তা পেশাটি আপনার জন্য উপযোগী।

Image:dribbble.com

নিজের ‘সেরা’ গুণটি বাছাই করুন

মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিশেষ গুণের অধিকারী। নিজের সেই সেরা গুণ বা কাজটিকে চিনে নেওয়া খুব জরুরি। পাশাপাশি কোন বিষয়ের প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ বা শখ সেই বিষয়টিও জেনে নেওয়া দরকার।

এজন্য নিজেকে কিছুদিন সময় দিতে হবে এবং বিভিন্ন বিষয় চর্চা করে দেখতে হবে। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিখতে এবং জানতে হবে। এই বিষয়ে গুগল,ইউটিউব বেশ ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারলে যে কেউ তার আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে।

‘উদ্যোগ’ নির্বাচনঃ

উদ্যোক্তা হয়ে আপনি কোন উদ্যোগ বা সেবা নিয়ে কাজ করবেন তা নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এজন্য আপনাকে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে বাজারের বিভিন্ন বিষয় যেমন: বাজারে কোন পণ্যের বা সেবার চাহিদা বেশি,পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা কেমন,সুবিধা-অসুবিধা এবং একই ধরনের পণ্যে সরবরাহে অন্যান্য উদ্যোক্তাদের দুর্বলতা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে উদ্যোগ নির্বাচন করতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনি আপনার ‘সেরা’ গুণটিকেও কাজে লাগাতে পারেন। যেমন: আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজ বেশ ভালো জানেন,তবে আপনি পোশাক ডিজাইনিং,বিজনেস কার্ড ও ইনভাইটেশন কার্ড ডিজাইনিং,গয়নাপাতি ডিজাইনিং,লোগো ডিজাইনিং প্রভৃতি কাজকে উদ্যোগ হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।

বেশ কিছুদিন এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে আপনি এসব ছাড়াও আরো অনেক সুন্দর এবং অনন্য কিছু উদ্যোগের ধারণা পেয়ে যাবেন।

Image:creapills.com

‘যোগাযোগ’ দক্ষতা বাড়ানঃ

যেকোনো পেশায় যোগাযোগ দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তেমনি সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে গেলে যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। কমিউনিকেশন স্কিল হলো এক প্রকার সাইকোলজিক্যাল বিষয়।

মানুষের মন-মানসিকতা বোঝা এবং সে অনুযায়ী সঠিক আচরণ দক্ষতা একজন ভালো উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া প্রত্যেকের সাথে শ্রদ্ধাশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখাও খুবই প্রয়োজন।

সর্বোপরি একজন ভালো এবং সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে পরিশ্রমী,সৎ এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেখা যায়,অনেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে এগোতে চাইলেও খুব বেশিদূর এগোতে পারছেন না।

এজন্য সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা,পর্যাপ্ত মূলধন ব্যয়,সঠিক উদ্যোগ নির্বাচন,পণ্যের গুণগত মান বজায় এবং পণ্য অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা ইত্যাদির ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকা দরকার। আশা করি,উপরিউক্ত বিষয়গুলো জেনে রাখলে এবং সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারলে নতুনদের উদ্যোক্তার জগতে পা রাখা ফলপ্রসূ হবে।

Red Live এর সঙ্গেই থাকুন।

লেখিকাঃ অংকিতা দাশ

RedLive

Related post