একজন লায়লা নাজনীন শতশত নারীর অনুপ্রেরণা

 একজন লায়লা নাজনীন শতশত নারীর অনুপ্রেরণা

সাধারণত, বাঙালি মেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে খুব সীমিত সুযোগ নিয়ে গড়ে ওঠে, যা তাদের চাকরিক্ষেত্রে সুযোগলাভের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা ক্রমবর্ধমান হারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র-ঋণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে, শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটিয়ে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে নারীদের স্বাবলম্বী হবার মানসিকতা সৃষ্টি করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও নারীরা যেখানেই পা বাড়াচ্ছে সেখানেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছে।একজন কর্পোরেট নারী কিভাবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারেন? তেমনিই একজন নারীর সাথে আজ আমরা আপনাদের কে পরিচয় করিয়ে দিবো যিনি ষ্টার সিনেপ্লেক্স এর হেড অফ আইচ আর এবং অ্যাডমিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন লায়লা নাজনীন

সাক্ষাৎকার টি নিয়েছেন, জান্নাতুল ফেরদৌস,রেড লাইভ হেড অফ পাবলিসিটি।

জান্নাতুল ফেরদৌস: আসসালামু আলাইকুম আপু । কেমন আছেন ?

লায়লা নাজনীন: অলাইকুম আস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি 

জান্নাতুল ফেরদৌস: প্রথমে আপনার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাই।

লায়লা নাজনীন:জন্ম পুরান ঢাকার লালবাগ এ। বাবা একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। বড় হয়েছি  অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে । অদম্য ইচ্ছাশক্তি, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ এবং জীবনে কিছু একটা করবো যা পরিবার, সমাজ, দেশ  ও দশের কাজে লাগবে এই মনবল নিয়েই আজ এই পর্যন্ত এসেছি।

জান্নাতুল ফেরদৌস: ক্যারিয়ার শুরুর গল্প-জানতে চাই? 

লায়লা নাজনীন:এইচএসসি পরিক্ষার পর থেকে বিভিন্ন স্কুল এ জব করি। স্টুডেন্ট ভালো হবার কারণে বিভিন্ন স্কুল গুলোতে শিক্ষিকারা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে তাদের জায়গায় প্রক্সি টিচার হিসেবে কাজ করতে ডাকতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কোচিং এ স্টুডেন্ট পড়াতাম।

পার্মানেন্টলি ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৪ সালে স্টার সিনেপ্লেক্স  এ কাজ করার মাধ্যমে । তখন ও আমি স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করি পাশাপাশি পড়াশুনা করি।  এ জন্য স্টার সিনেপ্লেক্স এর মালিক এবং কর্তৃপক্ষবৃন্দের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

জান্নাতুল ফেরদৌস: জীবনের সবচাইতে সংগ্রামী দিনগুলি সম্পর্কে জানতে চাই?

লায়লা নাজনীন:জীবনে বহুবার বিভিন্ন রকম  সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হয়েছে স্কুল কলেজে থাকা অবস্থায় পড়াশুনা না বন্ধ হয়ে যায় সেটার জন্য দুশ্চিন্তা, চাকুরীর শুরুতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে কর্পোরেট লাইফ এ নিজেকে সেট করে নিতে অতপর ব্যবসায়ী বাবার ব্যাবসায়ে লস হওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে হয়েছে সর্বশেষ মা অসুস্থ হওয়ার পর নিয়মিত হসপিটাল তার চেকআপ , অফিস এর পাশাপাশি পরিবার ওর ঘরের প্রতিটি কাজে নিজেকে গুছিয়ে নিতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমন  ও সময়ে গিয়েছে যখন সারা  রাত জেগে মায়ের সাথে হাসপাতাল এ থেকে সকালে অফিস গিয়েছি , সারা দিন অফিস করে আবার বাসায় যেয়ে রান্না করে রাতে হাসপাতাল গিয়েছি , অকালন্ত পরিশ্রম হতো কিন্তু পসিটিভ মানুষিক মনোবল আমাকে সহায়তা করেছে  সংগ্রাম মোকাবিলা করার।

জান্নাতুল ফেরদৌস: এখন যা যা করছেন।

লায়লা নাজনীন: এখন আমি ষ্টার সিনেপ্লেক্স এর হেড অফ আইচ আর এবং অ্যাডমিন হিসাবে পার্মানেন্টলি কাজ করছি।  এটা আমার মূল কাজ।  তার পাশাপাশি আমি কিছু ভলান্টিয়ারি কাজ করি যেটা আমার স্বপ্ন এবং আদর্শ নাগরিক হিসাবে দায়িত্ব ও বটে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা  সেটা হচ্ছে দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট দের ক্যারিয়ার গাইড লাইন দেয়া, ট্রেনিং এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে গগ্রূমিং করা.  এই জন্য কেরিয়ার প্র নামে  একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নিয়েও কাজ করছি , এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি তে গেস্ট লেকচারার হিসাবে ছুটির দিনে কাজ করি, আগামীর বাংলাদেশ নামে  একটা সংগঠনের এডভাইসর হিসাবে কাজ করছি। কর্পোরেট ট্রেইনার  হিসাবে ও  কাজ করি অবসরে। নিয়মিত লেখালিখি করি ডেইলি বণিক বার্তা এবং ইটিভি ডট কম এ। এছাড়া বিভিন্ন ইভেন্ট প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা , প্রোগ্রাম এ উপস্থাপনা করা ও নিউজ প্রেজেন্ট করে  থাকি শখের বশে।

জান্নাতুল ফেরদৌস:নারী হিসেবে যে বাঁধাগুলো অতিক্রম করে এসেছেন।

লায়লা নাজনীন:আমাদের দেশে পারিবারিক ভাবে মেয়েদের মনে করা হয় বিয়ে দিয়ে দিলে পরিবারের দায়িত্ব শেষ এবং প্রতিষ্ঠান গুলোতে মেয়ে কর্মী কম নিয়োগ করা হয় কারন মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল মনে করা হয় যা মোটেও সঠিক নয়। একটা মেয়ে মানসিক ও শারীরিক ভাবে যথেষ্ট স্ট্রং। তারা পরিবারের খেয়াল রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। নারী কোনো কাজ শুরু করতে চাইলে প্রথম বাঁধা আসে পরিবার ও সমাজ থেকে। এখনও অনেক পরিবার আছে তারা চায় না তাদের মেয়ে সন্তান ও স্ত্রী ঘরের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করুক। আমার বেলাও আরও জটিল ছিল ব্যাপারটা কারন আমরা যখন চাকরি শুরু করেছিলাম তখন আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খুবি খারাপ ছিল, অশ্লীল ছবির কারনে বাংলা মুভি থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আর সিনেমা হলের চাকরি এটা অনেকেই ভালো চোখে দেখতেন না। কিন্তু আমার কিছু করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছে। ঘরের ভেতর-বাইরে নানা বাধা সত্ত্বেও আমি থেমে থাকিনি কখনো ।।।

জান্নাতুল ফেরদৌস:ক্যারিয়ার একজন সফল নারী প্রতিনিধি হিসেবে নারীদের ক্যারিয়ার সফলতা বিষয়ে কিছু বলুন।

লায়লা নাজনীন:যখনি কোনো বাধা আসবে তখনি নিজেকে মানুষিক ভাবে আরো জোরদার করুন যেমন কোবিড  ১৯ থেকে বাঁচতে আমরা বডি ইমুনে সিস্টেম কে বাড়াই। আপনি যখন সফল হবেন যারা আপনার অগ্রযাত্রায় বাঁধা হয়েছিল তারাই আপনাকে একটা পর্যায়ে বাহবা দিবে।

জান্নাতুল ফেরদৌস: ব্যাবসায়ী শিক্ষা বিভাগের একজন কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অবশ্যকরনীয়গুলো কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? 

লায়লা নাজনীন:ব্যাবসায়ী শিক্ষা বিভাগের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য সফ্টস্কিল গুলো ডেভেলপ করা উচিত , আমি জোর দিবো কমিনিকেশন স্কিল- শুধু ভার্বাল না , নন ভার্বাল বডিল্যাংগুয়েজে ,একটিভ লিস্টানিং, র্রেপট  বিল্ডিং, ফার্স্ট ইম্প্রেশন , ইন্টারভিউ স্কিল, টীম বিল্ডিং , প্লানিং অর্গানাইজিং , স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট , ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট এই সব সফ্ট স্কিল গ্রাডুয়েলি ডেভেলপ করা।  এক্সট্রাকারিকুলাম এর উপর মনোযোগী হওয়া উচিত।যদি সম্ভভ হয় পড়াশুনার ক্ষতি না হলে পার্টটাইম কোনো কাজে যোগ দেয়া বা কলেজ ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন ক্লাব বা সংঘঠনে কাজ করা।

জান্নাতুল ফেরদৌস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?

লায়লা নাজনীন:ভবিষৎ পরিকল্পনা পি এইচ ডি করা, দেশের বেকারত্তদূরীকরণে সক্রিয় ভাবে কাজ করা , ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট এর জন্য কাজ করা

জান্নাতুল ফেরদৌস:আপনার প্রিয় শখ কি ? অবসর সময় কীভাবে কাটে ? 

লায়লা নাজনীন:যদিও প্রতিদিন রান্না করি তবে নতুন নতুন আইটেম রান্না করা আমার শখ।

জান্নাতুল ফেরদৌস: জীবনে কোন অপ্রাপ্তি ? জীবন সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি কেমন ?

লায়লা নাজনীন:অপ্রাপ্তি নিয়ে চিন্তা করে কখনো সময় নষ্ট করি না। তার চেয়ে বরং সময় টা কে  কাজে লাগালে। অনেক কিছু করা যায়, আমার কাছে সফল হওয়া থেকে জীবনে সুখী হওয়া জরুরি মনে হয়।আমি বিশ্বাস করি সফলতার পিছনে না ছুটে নির্বিগ্নে কাজ করে যাওয়া উচিত সফলতা একদিন আপনার পিছনে ছুটবে।

জান্নাতুল ফেরদৌস: তরুণদের জন্য পরামর্শ।

লায়লা নাজনীন:তরুন দের উপর অনেক দায়িত্ব পরিবারের পাশা পাশি সমাজ ও দেশের পরিবর্তন ও উন্নয়নে এগিয়ে আসা। এই দায়িত্ববোধ থেকে সর্বপ্রথম নিজেকে পরিবর্তন করা । আর কোনো কাজ এই ছোট না তাই ময়লা ফেলা থেকে শুরু করে চায়ের দোকান যে কোনো সৎ কাজ কে সম্মান করতে হবে।

RedLive

Related post