একরাশ স্বপ্ন নিয়ে সুশমী সাথীর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প

 একরাশ স্বপ্ন নিয়ে সুশমী সাথীর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প

উদ্যোক্তা সুশমী সাথী পৈত্রিক নিবাস ভোলায়। কিন্তু জন্ম,শৈশব কৈশোর বেড়ে উঠা রাজধানী,ঢাকার মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়। পরিবারে স্বামী একজন বাসচালক, তার বাবা এবং শ্বশুড় দুজনেই মুক্তিযুদ্ধা।সশস্ত্র ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সব সময় তাদের কে নিয়ে গর্ব করেন।

সুশমী সাথী সব সময় চেষ্টা করতেন নতুন কিছু করার। এবং পরিবারে কিছুটা আর্থিকভাবে অবদান রাখার।সে ভাবনা থেকে নিজে তৈরি করেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Barakallah363

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

কিভাবে আপনার উদ্যোক্তা পথ চলা শুরু?

আমার নিজের কিছু করার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই ছিলো।কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা সব সময় আমার পথে কাটার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো এবং এখন ও রয়েছে। তবুও কিছু করার স্বপ্ন যেন আমায় স্থির থাকতে দিতো না।আর এই স্বপ্ন আমায় আরো সাহস জুগিয়েছে করোনা কালিন লকডাউনের মধ্যে।যখন পুরো বিশ্ব তথা বাংলাদেশ ও গৃহ বন্দি হয়ে যায়।আমি আগেই বলেছি আমার স্বামী একজন বাস চালক,এবং লক ডাউনের মধ্যে উনি একেবারেই বেকার হয়ে পড়েন।তাই অনেকটা পেটের দায়েই অনলাইনে বিজনেস শুরু করি ২০২০সালের ২৯শে নভেম্বর থেকে,আমার পেইজ Barakallah363 এর যাত্রা শুরু হয়।

আপনি কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

আমি মূলত প্রথম থেকেই চেষ্টা করছি যা নিয়েই কাজ করি না কেন তা যেন‌ শতভাগ খাঁটি এবং আসল পণ্য হয়।যার মান নিয়ে কোন সংশয় থাকবেনা,আমার পন্য গুলো ভালো পণ্য এই নিশ্চয়তা দিয়েই যেন সকলের মন জয় করতে পারি।তাই যে পণ্য গুলো সহজে বাজারে খাঁটিটা পাওয়া যায় না সেগুলো নিয়ে আমি কাজ করা শুরু করি। যেমন- হাতে বেছে ধুয়ে পরিষ্কার করে ভাঙানো বিভিন্ন গুড়ো মশলা যেমন-হলুদ,মরিচ,ধনিয়া এবং জিরা গুড়ো। পাশাপাশি কাজ করছি সম্পূর্ণ হাতে বানানো নারিকেল তেল এবং তেঁতুল কাঠের ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল নিয়ে।এর সাথে স্পেশাল কিছু ডিজাইনের ব্যাগের কাজ করছি।যেগুলোর ডিজাইন অনেকটাই আমি সিলেক্ট করে অর্ডার করি এবং দক্ষ কারিগরেরা তৈরি করে দেন,তাই ব্যাগের মান নিয়েও আমার তেমন কোন সংশয় নেই। আর ব্যাগ,ওয়েল এবং স্পাইসের পাশাপাশি কাজ করছি এখন ইম্পোর্টেড কসমেটিকস নিয়ে।

একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কখনও কি কোন ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি?

উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে নিজের পরিকল্পনার অভাব,বলে আমি মনে করি।যা প্রথমে আমাকে খুবই সমস্যায় ফেলেছিলো,সেটা হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা।আর এই সমস্যা এখন অনেকটাই কমে গেছে।এবং এর জন্য আমি কৃতিত্ব দেবো আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারকে।স্যারে গাইড লাইন ফলো করে এখন আমি অনেকটাই গুছিয়েছি নিজেকে, আলহামদুলিল্লাহ। আর সবচেয়ে বড় বাঁধা আমার জন্য সেটা হলো ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট। কারন,আমার পরিবার অস্বচ্ছল তাই চাইলেও আমাকে কিছুটা আর্থিক সাহায্য করতে পারছেন না। তাঁর পর ততটুকু পাচ্ছি তাই নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি আমার মায়ের পক্ষ থেকে। কারন আমার দুই বছরের একটি মেয়ে আছে আমি যখনই প্রোডাক্ট কেনার জন্য মার্কেটে যাই বা হোম ডেলিভারি করতে যাই কোন প্রোডাক্ট,তখন আমার মেয়েকে আমার মায়ের কাছে রেখে যাই। আমার আম্মুর আমার কাজের ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে অনেকটাই সহযোগিতা ছিল। এই পৃথিবীতে সবার জন্য অমূল্য সম্পদ এর আরেক নাম মা। কিন্তু আমি বলব আমার জন্য আমার মা মানেই হলো সূর্য,যা ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার।

আপনার উদ্যোগটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

আমি তো প্রথমেই বলেছি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমি এমন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে চাই যার আলোয় আলোকিত হবে আমারই মত অসহায় এবং অসচ্ছল মানুষদের জীবন। আমি আমার ছোট্ট পেইজ কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি, আমার এই ছোট্ট পেইজ Barakallah363 এর মাধ্যমে আমি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে তাদের জন্য যাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত অসচ্ছল কিন্তু ঘরে হয়তো ছোট বাচ্চা আছে।ছোট বাচ্চার দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই, তাই চাইলেও বাহিরে চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে পারছেন না। সেইসব অসহায় নারীদের জন্য আমি কিছু করতে চাই। আমার ইচ্ছে আছে আমি সমাজে অবহেলিত শিশু নারী এবং বৃদ্ধদের নিয়ে একটি ফাউন্ডেশন করব, ইনশাআল্লাহ।যেখানে এই অবহেলিত মানুষগুলো নিজেদের জীবনকে নিজেদের মতো করে একটি ফুলের বাগানে ন্যায় সাজিয়ে গুছিয়ে তুলবে। ওরা হবে আত্মনির্ভরশীল যাতে সমাজে কারো উপরে বোঝা নয়।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।