মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
কীভাবে একজন উদ্যেক্তা সহজ পদ্ধতিতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে

Image source: benedettocristofani.net
ব্যবসায় হলো একজন উদ্যেক্তার সাহস, বিনিয়োগ, ও আত্মবিশ্বাসের অন্য নাম।ব্যবসায় শুরু করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত মূলধন ও আত্মবিশ্বাস।একজন নবীন উদ্যেক্তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আত্মবিশ্বাস থাকলেও মূলধনের কারনে তাঁকে পিছিয়ে পড়তে হয়। কিন্ত এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মূলধন যোগাড় করা যেতে পারে।
মূলধন কিংবা অর্থ যোগাড় করার সঠিক নিয়ম ও পথ জানা থাকলে একজন নবীন উদ্যেক্তাও খুব সহজেই ব্যবসায় স্টার্টআপের জন্য পেতে পারেন ব্যাংক ঋণ অথবা মূলধন। একজন উদ্যেক্তা কীভাবে ব্যাংক ঋণ নিতে পারেন কিংবা কোন কোন উৎস হতে অর্থের যোগান দিতে পারেন সে বিষয়ে আজকে আলোচনা করবো।
নতুন ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ নেওয়া খুবই জটিল কাজ মনে হলেও বর্তমানে তা সহজ করেছে দেশের কিছু ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা এবং বেশ পরিচিত কিছু ব্যাংক।কিন্তু কীভাবে একজন নবীন উদ্যেক্তা হয়ে ঋন নিতে পারি? যেহেতু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ব্যাংক গুলো তাঁদের পরিচিত গ্রাহকদের সাথেই লেনদেন করে থাকেন অর্থাৎ ঋণ দিয়ে থাকেন।
নবীন উদ্যেক্তার ঋণ সংগ্রহ
বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা ব্যবসায়ের জন্য নবীন ও একমালিকানা ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকেন অনায়াসে। যাতে করে একজন স্বপ্নবাজ তরুণ তাঁর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আত্মবিশ্বাসের সাথে চালিয়ে যেতে পারে নিজ উদ্যোগের ব্যবসায় এবং পরিচিতি লাভ করতে পারে একজন সফল উদ্যেক্তা হিসেবে।
আর এইসব উদ্যেক্তাদের কথা ভেবে এসএমই-ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসাবে যাত্রা শুরু করে।নবীন উদ্যেক্তাদের জন্যে ক্ষুদ্র ঋণ সেবার ব্যবস্থা করে আসছে এসএমই। ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে অর্থায়নের মাধ্যমে ১৫ লাখেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।এছাড়া কোনো বন্ধকী ছাড়া সম্পূর্ণ জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা প্রধান করছে এসএমই – ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।
জামানত ছাড়া ঋণ
বেসরকারি খাত গুলোর পাশাপাশি সরকারি খাত থেকেও বর্তমানে ঋণ নেওয়া খুবই সহজ। সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক গুলো নবীন উদ্যেক্তাদের কোনরকম জামানত ছাড়াই ঋণ প্রধান করে আসছে। তেমনই একটি খাত কর্মসংস্থান ব্যাংক।জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে সরকারি খাতের বিশেষায়িত ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক’।
দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে সরকারি মালিকানায় এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়।সারাদেশে ব্যাংকের মোট ২১২ টি শাখা রয়েছে।উপজেলা সদরে রয়েছে ১৪২ টি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।ঋনের অঙ্ক সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।
এছাড়া ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।ঋন নিতে হলে একশো টাকা মূল্য ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তির বয়স হতে হবে ১৮-৪৫ বছর সে সাথে ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব থাকতে হবে।এছাড়াও আরও কিছু বিশ্বস্ত ব্যাংক থেকে একজন নবীন উদ্যেক্তা ঋণ নিতে পারেন : গ্রামীণ ব্যাংক এবং আশা বাংলাদেশ।

শপআপ ই-লোন
সরকারী বেসরকারী খাতগুলোর পাশাপাশি কিংবা ব্যাংক ও ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা গুলোর পাশপাশি শপআপ দিচ্ছে ই-লোন। বর্তমান তরুণ-তরুণী নিজ উদ্যেগে ব্যবসা করার জন্যে বেছে নিচ্ছে ই-বিজনেস।ফেসবুক ব্যবহারের পাশপাশি সচেতন তরুণরা নিজ অর্থায়নে প্রাথমিক ভাবে শুর করছে ই-বিজনেস।
নিজ অর্থায়নে শুরুটা হলেও ব্যবসায়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে দরকার হয় কিছু পর্যাপ্ত মূলধনের। ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্যে যে মূলধন অধিক কার্যকর। আর এই বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংক ঋণ হতে বঞ্চিত হওয়া তরুণ-তরুণীদের ঋণ দিচ্ছে শপআপ।
ঋণ নিতে হলে একজন উদ্যেক্তার যা প্রয়োজন :
- সেলস রিপোর্ট (৬ মাসের)
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড /জন্মসনদ
- নোমিনীর ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্মসনদ
- পার্সপোট ছবি
- বর্তমান ঠিকানার বিদুৎ ও পানির বিল
শপআপ একজন উদ্যেক্তা কে ২৫০০০- ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।কে কত বেশি ঋণ নিতে পারবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির বর্তমান সেল এর উপর।শপআপ ই-লোন এর মেয়াদ সর্বনিম্ন ৯-১২মাস পর্যন্ত।
তাই একজন উদ্যেক্তার উচিত প্রাথমিক অবস্থায় সল্প পরিমাণে ঋণ নেওয়া এবং পরবর্তীতে আরেকটা ঋণ নেওয়া।শপআপ সাধারণত অনলাইন বিজনেস গুলোকে ঋণ দিয়ে থাকলেও খুব শীঘ্রই অফলাইন বিজনেসদের ঋণ দেওয়া কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে।আপনি যদি একজন নবীন উদ্যেক্তা হয়ে থাকেন,অনলাইনে আপনার একটা ছোট্ট বিজনেস যদি থেকে থাকে তাহলে শপআপ আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
নিজস্ব মূলধন
নতুন একটি ব্যবসায় শুরু’র দিকে একজন উদ্যেক্তা ঋণ নেওয়ার চাইতে নিজস্ব মূলধন বিনিয়োগ অধিক কার্যকর।ছোট কিংবা শুরুর দিকে ব্যবসায় গুলোতে নিজের জমানো টাকা বিনিয়োগ ঋণ নেওয়ার চাইতে বেশি সফলতা এনে দিতে পারে।ঋণ নেওয়ার কারনে একজন উদ্যেক্তাকে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হয় যার ফলে দায় বেড়ে যায়।
ফলে ব্যবসায়ী ব্যবসার জন্য যথেষ্ট পরিমানে ঋণ সংগ্রহ করতে পারলেও দায়বদ্ধতার কারনে অনেক সময় ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি ব্যবসায়ের ১-২ বছর বয়সে ঋণ নেওয়া যৌক্তিক। তাহলে ব্যবসায় শুরু দিকে একজন উদ্যেক্তা কী করতে পারে?নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০০-৫০০০ টাকা মূলধনে একজন উদ্যেক্তা তাঁর উদ্যেগ শুরু করতে পারে।
এতে করে দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে দায়বদ্ধতা যেমন থাকেনা তেমনি প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবসায়িক ক্ষতি নিয়ে উদ্যেগক্তাকে ভাবতে হয়না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজ উদ্যেগ, নিজস্ব তহবিল ও আত্মবিশ্বাস বিনিয়োগ করে যে ব্যবসায় উদ্যেগ গুলো গড়ে উঠে তাঁর মধ্যে অধিকাংশই সফলতা লাভ করে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যক্তিগত মূলধন কখনোই পর্যাপ্ত নয়।
আত্মবিশ্বাস বিনিয়োগ
আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্যবসায় শুরু করলে সে ব্যবসায়ে সফলতালাভ করা খুবই সহজ। আত্মবিশ্বাস না থাকলে কোনো কাজই সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা যায় না।ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করতে গেলেও একজন উদ্যেক্তার সব থেকে বেশি প্রয়োজন মনোবল ও আত্মবিশ্বাস। সুতরাং মূলধন বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগ করুন আপনার আত্মবিশ্বাস।
পরীক্ষা করুন আপনার আত্মবিশ্বাস পাল্লা ভারী কিনা! একজন ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যেক্তাকে আকস্মিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে যে কোন সময়। আর এই ক্ষতির সম্মুখীন হবার কথা মাথায় রেখে উদ্যেক্তাকে পূর্বেই মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রস্তুত থাকতে হবে।
যাতে করে ব্যবসায়ের বড় ক্ষতিতে একজন উদ্যেক্তা মনোবল হারাতে না পারে।ব্যসায়ের লাভ ও ক্ষতি এড়াতে আত্মবিশ্বাস মূলধনের চাইতে বেশি প্রয়োজনীয়। আর তাই ব্যবসায়ে মূলধনের চাইতে অধিক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে আত্মবিশ্বাস।
আত্মবিশ্বাস,মূলধন,সঠিক গাইডলাইন থাকলে একটি ব্যবসায় সফলতার হাত ধরতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়না। সঠিক সিদ্ধান্ত নিন তারপর ঋণ নিন।একজন নবীন উদ্যেক্তার জন্য সর্বোত্তম কাজ হলো ব্যবসায়ের প্রাথমিক।
অবস্থায় লোন না নিয়ে,২-৩ তিনমাস পরিচালনা করে দেখা ব্যবসায়ে লাভ করতে পারছে কতটা। কয়েকমাস পর ব্যবসায় বড় করার জন্যে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। বিজনেস স্টার্টআপ এর পাশাপাশি একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে রাখা অবশ্যই উত্তম কাজ। ব্যবসায় বড় করতে একটা পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই উদ্যেগ নেওয়ার পাশপাশি সাহস সঞ্চার করুন,আত্মবিশ্বাসের পাল্লা ভারী করুন,পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট খুলে ফেলুন,ব্যবসায়ে সময়দিন, অন্তত ২-৩ মাস পর ঋণ নেওয়ার সিন্ধান্ত নিন।
লেখক: ফাহমিদা করিম