ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনঃ লক্ষ্য হোক SMART

 ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনঃ লক্ষ্য হোক SMART

কথায় বলে, যথাযথভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করা মানে একটি কাজের অর্ধেক সমাধান হয়ে যাওয়া।

ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে চাই নির্ভুল লক্ষ্য নির্ধারণ। আর তাই, আমরা প্রত্যেকেই কোনো কাজ শুরু করার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেই। কিন্তু এরপরেও অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় না। ফলশ্রুতিতে, আমরা সফলতার মুখ দেখি না। এর কারণ কি?

এর কারণটি লুকিয়ে আছে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। আমরা লক্ষ্য ঠিক করি বটে, কিন্তু সেটা সব দিক থেকে উপর্যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রক্রিয়াতে গলদ রয়ে যায় বলেই আমাদের লক্ষ্য প্রায়শই অর্জিত হয় না।

তাহলে কিভাবে আপনি আপনার কাজের লক্ষ্য ঠিক করবেন? জেনে নিন লক্ষ্য (Goal) ঠিক করবার SMART উপায়!

❏ SMART Goal কি?

SMART পদ্ধতিটি লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। এটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৮১ সালের নভেম্বর মাসে। জর্জ ডোরানের লিখা ইস্যু অফ ম্যানেজমেন্ট রিভিউতে ‘There’s a S.M.A.R.T. way to write management goals and objectives’ শিরোনামের অধীনে এটি দেখা যায়। তখন।থেকেই যথাযথ লক্ষ্য নির্ধারণে SMART পদ্ধতিটি বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এই SMART এর প্রতিটি বর্ণ একেকটি অর্থ ধারণ করে, সেগুলো হলো—

  • S— Specific অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট। লক্ষ্যটি সুস্পষ্ট এবং ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত কিনা।
  • M— Measurable অর্থাৎ, (সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে) পরিমাপযোগ্য কিনা।
  • A— Achievable অর্থাৎ, সেটি অর্জনযোগ্য কিনা বা আয়ত্তসাধ্য কিনা।
  • R— Realistic অর্থাৎ, বস্তুনিষ্ঠ বা বাস্তবধর্মী অথবা জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা।
  • T— Timebound অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সম্পন্ন করার যোগ্য কিনা।

এই পাঁচটি বিষয় সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারলে আপনার লক্ষ্যটি হয়ে উঠবে সব দিক থেকে যথাযথ! তাহলে আসুন, বিস্তারিত জেনে নেই এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে।

❏ SMART লক্ষ্যঃ Specific বা সুনির্দিষ্ট—

একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরিতে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন-

✓ কেঃ- আমার এই লক্ষ্যে কে সম্পৃক্ত রয়েছেন?

✓ কিঃ- আমি কোন বিষয়টি সম্পন্ন করতে চাই?

✓ কোথায়ঃ- আমার লক্ষ্যটি কোথায় অর্জিত হবে?

✓ কখনঃ- লক্ষ্যটি আমি কখন অর্জন করতে চাই?

✓ কেনঃ- কেন আমি লক্ষ্যটি অর্জন করতে চাই?

ব্যস! এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করতে পারলেই আপনার লক্ষ্যটি হয়ে যাবে সুনির্দিষ্ট!

❏ SMART লক্ষ্যঃ Measurable বা পরিমাপযোগ্য—

আপনার লক্ষ্যটি পরিমাপযোগ্য কিনা তা বুঝতে নিচের বিষয়গুলো ঠিক করে নিন-

✓ সম্পূর্ণতাঃ কিভাবে বুঝবো কাজটি শেষ হয়েছে কিনা?

✓ নির্দেশকঃ আমার লক্ষ্যার্জনের নির্দেশকগুলো কী কী?

একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং নির্দেশকযুক্ত লক্ষ্য আপনাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নেয়।

❏ SMART লক্ষ্যঃ Achievable বা অর্জনযোগ্য—

আপনার লক্ষ্যটি অর্জনযোগ্য কিনা তা জানতে নিচের বিষয়গুলোর উত্তর খুঁজুন-

✓ উপকরণঃ লক্ষ্যার্জনের জন্য যে সকল উপায়-উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো কি আমার আছে?

✓ ঘাটতিঃ যদি সেগুলো না থাকে,  তাহলে কোনটি কোনটি আমার কাছে নেই?

✓ পূর্বে সম্পাদনঃ এর আগে কি কেউ এ কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে?

আপনার লক্ষ্যার্জনের উপকরণের পর্যাপ্ততা, এর ঘাটতি এবং পূর্বজ্ঞান সম্পর্কিত দিকগুলো জানা থাকলে আপনি লক্ষ্যার্জনে এগিয়ে থাকতে পারবেন।

❏ SMART লক্ষ্যঃ Realistic বা বাস্তবসম্মত—

আপনার লক্ষ্যটি বাস্তবসম্মত কিনা তা বুঝতে নিচের বিষয়গুলোর উত্তর খুঁজুন-

✓ বাস্তবযোগ্যঃ আমার লক্ষ্যটি কতটা বাস্তবসম্মত এবং আয়ত্তের ভেতর?

✓ অর্জনযোগ্যঃ সময় এবং উপকরণের ভিত্তিতে লক্ষ্যটি কতটুকু অর্জনযোগ্য?

✓ প্রতিজ্ঞাবদ্ধঃ আমি কি নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যটি অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ?

বাস্তব এবং অর্জনযোগ্য একটি লক্ষ্য আপনাকে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে সাহায্য করে। আর সেটি অর্জনে যদি আপনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন, তাহলে কি আর কিছু লাগে?

❏ SMART লক্ষ্যঃ Timebound বা সুনির্দিষ্ট সময়—

আপনার লক্ষ্যটির জন্য সময় যথাযথভাবে সুনির্দিষ্ট কিনা তা বুঝতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন-

✓ সীমারেখাঃ কোন/কতটুকু সময়সীমার ভেতরে আমি লক্ষ্যটি অর্জন করতে চাইছি?

✓ শেষ সময়ঃ এই লক্ষ্যটির জন্যে বাস্তবানুগ শেষ সময় কোনটি?

✓ অগ্রগতি বিচারঃ সময়ের ভিত্তিতে কাজের অগ্রগতি আমি কিভাবে পরিমাপ করবো?

কার্য সম্পাদনের সীমারেখার প্রতি যথাযথ ধারণা থাকলে সময়মতো এবং সুষ্ঠুভাবে সেটি সফলতার সাথে শেষ করা সম্ভব।

❏ SMART লক্ষ্যের উদাহরণঃ-

ধরা যাক, প্রাথমিকভাবে আপনি একটি লক্ষ্য ঠিক করলেন। সেটি হলো- ‘ওজন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমি ওজন কমাতে চাই’।  এটি একটি সাধারণ লক্ষ্য। এবার এটিকে একটি SMART লক্ষ্যে রুপান্তর করতে হলে—

  • Specific- ওজন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমি ৫ কেজি ওজন কমাতে চাই (নির্দিষ্টতা এলো)।
  • Measurable- ৫ কেজি ওজন কমানোর কাজটি পরিমাপযোগ্য।
  • Achievable- ওজন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সামনের ছুটিতে আমি ৫ কেজি ওজন কমাতে চাই (অর্জনযোগ্য হলো, যেহেতু বন্ধে ব্যায়াম করার সুযোগ আছে)।
  • Realistic- যেহেতু শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শরীরের ওজন কমানো অবশ্যই বাস্তবানুগ এবং প্রাসঙ্গিক।
  • Timebound- আমি এই ২০ দিনের ছুটিতে ৫ কেজি ওজন কমাতে চাই (সময় নির্দিষ্ট করা হলো)।

তাহলে আপনার SMART লক্ষ্যটি দাঁড়ালো—

‘ওজন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সামনের ২০ দিনের ছুটিতে আমি ৫ কেজি ওজন কমাতে চাই।’

এবার প্রথমে ঠিক করা লক্ষ্যটির সাথে আপনার SMART লক্ষ্যটির তুলনা করুন আর পার্থক্য বুঝে নিন!

আশা করি, লক্ষ্যার্জনে উপরিউক্ত এই SMART বিষয়গুলো বিবেচনা করলে তা যথাযথ লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়ক হবে। আপনি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য একটি যথোপযুক্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন। আর সেটি আপনাকে নিয়ে যাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে।

ধন্যবাদ।

RedLive এর সাথেই থাকুন।

লেখকঃ শাহনেওয়াজ আহমদ

RedLive

Related post