মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
ছাদ নার্সারি করে সফল উদ্যোক্তা ফারজানা বৃষ্টি

বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই।কর্মক্ষেত্রে নারীদের বিচরন এখন অহরহ। তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। নিজ যোগ্যতায় ব্যাবসায় করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। ঘরে বসেই নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ব্যাবসায় শুরু করছে নারীরা।শ্রম,মেধা দিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে।এরা নিজেদের কারো অধীন রাখেন না কিংবা কারো হুকুমে গোলাম নন।এরা শূন্য কে শূন্য দেখে না। যারা শূন্যকে রুপান্তরিত করে অসংখ্য সংখ্যায়।কথা বলছি এমনই একজন ব্যাবসায় সফল উদ্যোক্তা চাদঁপুর হাজীগঞ্জ এর ফারজানা বৃষ্টি কে নিয়ে।যিনি নিজের স্ব-প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ছাদ নার্সারি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অনলাইন বিজনেস “শৌখিন”
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্যাম্পাস এক্সিকিউটিভ আরাফাত রহমান
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন?
আসসালামু আলাইকুম৷ আমি ফারজানা বৃষ্টি। হোম ডিস্ট্রিক্ট চাঁদপুর হলেও জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লা তেই।ঢাকা সিটি ইইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য ইংরেজি তে অনার্স শেষ করেছি। ৪ ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার বড়। বর্তমানে ঢাকা সাভারে স্বামী-পুত্র সহ ঢাকা বসবাস করছি এবং এখান থেকেই আমার উদ্যোগ ‘শৌখিন’কে পরিচালিত করছি। “শৌখিন” আমার এবং আমার ছোট ভাই এর শাওন এর স্টার্ট আপ৷
কিভাবে আপনার উদ্যােগ টি শুরু করেছেন?
করোনা মহামারীর শুরুতেই লকডাউন ও হোম কোয়ারান্টাইন এসবে পড়াশোনা বন্ধ ছিল।কিছুই করার ছিলনা। আমি যখন বাসা সাজাতাম তখন একটা জিনিস মাথায় রাখতাম যে কোনোভাবে প্রাকৃতিক ছোঁয়া আনা যায় কিনা । সে জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনডোর আউটডোর প্লান্ট আমি কালেক্ট করতাম। এবং সেগুলো দিয়েই আমি বাসা সাজাতাম । একবার আমার ভাই শাওন ও আমার বাসার কিছু ছবি একটা গ্রুপে শেয়ার করে তো সেখান থেকে অনেকেই ওকে ইনবক্সে নক করে এবং জানতে চায় আমি কোত্থেকে সংগ্রহ করি। তখন অনেকেই ওর কাছ থেকে কালেক্ট করতে চায় , সেই থেকেই বাসা সাজানোর বিভিন্ন জিনিস ও বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদ সাজানোর জন্য ইনডোর ও আউটডোর প্ল্যান্ট বিক্রির কথা ভাবে এবং আমরা আমাদের উদ্যোগ “শৌখিন” এর ফেসবুক পেইজ খুলি। সেখানে আমি আমার ছাদ বাগানে করা বিভিন্ন ইনডোর ও আউটডোর প্ল্যান্ট এর ছবি দিয়ে বিক্রি করে থাকি।
“শৌখিন” ই কেন? চিন্তাটি উদ্ভব কিভাবে?
আমি নিজেও ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই গোছানো বাসা পছন্দ করি।বাসার ছাদ ও বারান্দা এসব আমি সবসময় সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করি।এছাড়াও আমার গাছের প্রতি অনেক ভাল লাগা ও কাজ করে।সেই চিন্তা থেকেই ভাবি যে আমার মত আরো যারা এমন শৌখিন আছে তাদের জন্যই আমার উদ্যোগ “শৌখিন”
আপনি কি কি পন্য নিয়ে কাজ করছেন?
আমি ঘর সাজানোর কিংবা বারান্দা বা ছাদ সাজানোর বিভিন্ন ইনডোর ও আউটডোর প্ল্যান্ট বিক্রি করে থাকি।এছাড়াও ঘর সাজানোর বিভিন্ন পরামর্শ ও দিয়ে থাকি।এছাড়াও হাতে তৈরি বিভিন্ন ঘর সাজানোর আসবাবপত্র বিক্রি করে থাকি। মূলত আমি বিশ্বাস করি গাছ আমাদের সবচেয়ে ভাল বন্ধু।গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে আর ঘরে বিভিন্ন গাছ থাকা, ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়।
আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কে দিয়েছেন?কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?
এক কথায় আমার বাবা-মা।আমার বাবা-মা আমাকে সবকিছু তে সাপোর্ট করে গিয়েছেন।বিশেষ করে আমার বাবা, তিনি সবসময় চাইতেন আমি নিজে স্বাবলম্বী হই।এখনো আমি মূলধন কিংবা সিদ্ধান্ত গত কোনো সমস্যায় ভুগলে তিনি থাকেন। আমার পড়াশোনায় ও তার অবদান সবচেয়ে বেশি।তারপর আমি আমার ভাই শাওন এর কথা বলব। সে ই আমার হোম ডেলিভারি গুলো দিয়ে থাকে,ফেসবুক পেইজ দেখাশুনা করে ও আমার ব্যাবসায় প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগিতায় তার ভূমিকা অনেক বেশি।সে কখনো লাভের অংশ ও চায়নি,আমার সফল হওয়া টাই চেয়েছে। এছাড়া আমি আমার হাসবেন্ড নয়ন এর কথা বলব।চাকুরির ব্যাস্ততার পাশাপাশি আমায় সহযোগিতার চেষ্টা ও করে থাকে।
শুরু এর দিক এবং বর্তমান শৌখিন নিয়ে কিছু বলুন?
শুরুর দিক বলতে গেলে আমার জন্য একটু কঠিন ছিল ব্যাপারটা।। আমাকে অনেকেই অনেক কিছু বলেছিলেন যে আমি একটা মেয়ে হয়ে কেন এই ব্যবসা এর সাথে নিজেকে জরালাম। আমি তাদেরকে একটা জিনিসই বুঝিয়েছি যে কোনো কাজই ছেলে মেয়ে দিয়ে আসলে বিচার করা ঠিক না। প্রত্যেকটা কাজ প্রত্যেকের জন্যই সমান যে যেটা ভালো পারবে যে যেটা ভালো বুঝবে তার ঠিক সেটাই করা উচিত। তবে বর্তমান অবস্থা দেখে আমি শুরুর দিকে যারা অনেকে অনেক কথা বলেছেন আমি সবটাই ভুলে গিয়েছি।। এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি অনেক ভালো আছি। এবং আমি ঢাকার ভেতরেই ইতিমধ্যেই জায়গা নিয়ে নার্সারি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছি খুব শীঘ্রই আমি আমার শৌখিন কে বাস্তবে রূপান্তরিত করব।। সেজন্য আপনাদের দোয়া চাচ্ছি।
উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং তা কি করে সমাধান করেছেন?
শুরু থেকেই আত্বীয় – স্বজন এর বিভিন্ন কটু কথা শুনতে হয়।সংসার সামলাতে পারব কিনা এসব নিয়ে।আমার একটি ছোট বাচ্চা আছে তাকে দেখাশোনা করতে পারব কিনা।কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমি আত্বীয় – স্বজন এর কটু কথা নিয়ে ভাবিনি, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে ভেবেছি।সংসার ও ঠিক ভাবে সামলে নিয়েছি। স্বামী ও সুযোগ পেলে সহায়তা করে। এছাড়াও মূলধন সল্পতা ছিল শুরুতে, তাও বাবা হতে সহযোগিতা পেয়েছি। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলেই সব সম্ভব হয়েছে।
উদ্যোগ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
প্রথমত ঢাকায় কোথাও জায়গা কিনে বড় নার্সারি করার পরিকল্পনা রয়েছে।আগামী ৫ বছরে শৌখিন এর একটি নিজস্ব অফিস দেয়ার সাথে সাথে নতুন একটি কাপড় এর বিজনেস করার পরিকল্পনা করছি।
নতুন যে সকল নারী উদ্যোক্তা হতে চাইবে তাদের জন্য কোনো পরামর্শ?
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ, নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। আমার প্রতিটি নারীর জন্য একটাই কথা থাকবে, আমরা নারী হয়েছি বলে কি হয়েছে! আমরাও মানুষ। যাদের লক্ষ্য অটুট থাকে এবং যদি পরিশ্রম করতে পারে, আমার মনে হয় নারী বা পুরুষ নয়, প্রতিটি মানুষই সফল হবে।