মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
জীবন বীমা একটি আর্থিক নিরাপত্তার নাম

জীবন বীমা আমাদের সমাজের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ । আমরা পরিচিত অনেকের কাছেই শুনতে পাই, সেলিম জীবন বীমা পলিসি করেছে, মতিউর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জীবন বীমা করার ফলে ১০ লক্ষ টাকা পেয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জীবন বীমা সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না । যারা জানেন, এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন, তাদের অনেকই জীবন বীমা করে রাখেন যাতে করে চরম বিপদের সময় তাদের পরিবার আর্থিকভাবে অসহায় হয়ে না পড়ে। আজ আমরা জীবন বীমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
জীবন বীমা হলো বীমা কোম্পানী ও বীমা গ্রহীতার মধ্যকার চুক্তি যা অনুযায়ী বীমা গ্রাহক নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ বীমা কোম্পানীকে দেবে এবং গ্রাহকের মৃত্যু হলে অথবা শারীরিক অসুস্থ্যতা বা দূর্ঘটনায় পতিত হলে বীমা কোম্পানী ক্ষতিপূরন হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত ঘোষনা অনুযায়ী বীমাকারীকে বা তার বৈধ উত্তরাধিকারীকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেবে। শুধুমাত্র ভবিষ্যতের ক্ষতিপূরনই নয়, বাংলাদেশের আয়কর আইন অনুযায়ী জীবন বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে জমাকৃত টাকা ব্যক্তি আয়করের আওতা মুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই জীবন বীমা করলে আপনার বার্ষিক করের বোঝাও অনেকাংশে কমে যাবে।
আসুন আজ আমরা দেখে নেই জীবন বীমার কি কি বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ
পলিসি গ্রাহকঃ
কোন ব্যক্তি, বীমা কোম্পানীর জীবন বীমা পলিসি গ্রহন করে নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম প্রদান করার চুক্তি স্বাক্ষর করলে ঐ ব্যক্তিকে পলিসি গ্রাহক বলা হয়। পলিসি গ্রাহক সেই ব্যক্তি যার জীবন বীমা করার মাধ্যমে সে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকে। তার মৃত্যুর পরে জীবন বীমা কোম্পানী তার উত্তরাধিকারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করতে দায়বদ্ধ থাকে।
প্রিমিয়ামঃ
পলিসি গ্রাহক তার জীবন বীমা বাবদ বীমা কোম্পানীকে যে পরিমান টাকা পরিশোধ করতে হয় তাকে প্রিমিয়াম বলা হয়। এ প্রিমিয়াম গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্রিমিয়াম মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক হতে পারে।
পলিসির মেয়াদঃ
জীবন বীমার চুক্তি অনুযায়ী পলিসির মেয়াদ যখন শেষ হয় তখন তাকে ম্যাচুরিটি বলা হয়। চুক্তির উপর নির্ভর করে পলিসির মেয়াদ শেষে গ্রাহক তার বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পেতে পারে। এই সময়ের মাঝে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে বা গুরুতর দূর্ঘটনায় পতিত হলে বীমা কোম্পানীর কাছ হতে ক্ষতিপূরন পেয়ে থাকে।

বীমাকৃত টাকাঃ
জীবন বীমার চুক্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত ঘটনা (যেমনঃ মৃত্যু, অঙ্গহানী) ঘটলে জীবন বীমা কোম্পানী জীবন বীমা গ্রহীতাকে বা তার উত্তরাধিকারীদের যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে তাকে বীমাকৃত টাকা বলা হয়।
নমিনীঃ
নমিনী হলো জীবন বীমা গ্রহীতার মনোনীত বৈধ উত্তরাধিকারী, যিনি জীবন বীমা চুক্তিতে বীমা গ্রহীতার মৃত্যুতে পূর্ব নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
দাবিঃ
জীবন বীমা গ্রহীতার মৃত্যুর পরে নমিনীরা পূর্ব নির্ধারিত বীমার টাকা পাওয়ার জন্য জীবন বীমা পরিচালনাকারী কোম্পানীর কাছে দাবি দায়ের করতে পারেন।
নিচে বাংলাদেশের জীবন বীমা কোম্পানীর মূল সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করছি।
মৃত্যুর পর টাকা প্রাপ্তিঃ
জীবন বীমাকৃত ব্যক্তির জীবনের কোনও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার ক্ষেত্রে জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ঐ ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করে অর্থনৈতিক দূর্যোগ হতে রক্ষা করতে সহায়তা করে। বীমা গ্রহীতার বিনিয়োগকৃত টাকার সাথে চুক্তিতে উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ যোগ করে বীমা কোম্পানী বীমা গ্রহীতার মনোনীত নমিনীকে প্রদান করে। এটি ডেথ বেনিফিট হিসাবে পরিচিত।
বিনিয়োগ এবং বীমাঃ
কিছু নির্দিষ্ট জীবন বীমা পলিসি বীমা এবং বিনিয়োগ উভয় সুবিধাই দিয়ে থাকে। আপনার দেয়া প্রিমিয়ামের টাকার এক অংশ বীমা হিসাবে দেওয়া হয়, অন্য অংশ বিনিয়োগ হিসেবে জমা করা হয়, এভাবে উভয়ের সংমিশ্রণে বিনিয়োগ করা হয়। এতে করে আপনি আপনার বীমা সুরক্ষা এবং সেই সাথে আপনার বিনিয়োগের উপর আয় এভাবে উভয়ভাবে অনেক বেশি লাভবান হতে পারেন। আপনার বিনিয়োগের সম্বৃদ্ধি এবং ঝুঁকির সাথে সামঞ্জস্য করে এমন জীবন বীমায় বিনিয়োগ করে আপনি এই বিনিয়োগ থেকে সব চাইতে বেশি লাভবান হতে পারবেন।
মেয়াদ পূর্তির সুবিধাঃ
জীবন বীমা পলিসি মেয়াদ পূর্তি হলে বীমা গ্রাহককে সঞ্চয়ী পলিসি অনুসারে সুবিধা দিয়ে থাকে। সে হিসেবে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়ের দ্বিগুন পরিমান টাকাও পেতে পারে। যদি বীমা গ্রাহক বীমা পলিসির মেয়াদ শেষে বেঁচে থাকে এবং এই মেয়াদকালে কোনও ক্ষতিপূরন দাবি করা না থাকে তবে পলিসির মেয়াদ পূর্তির সময় প্রদত্ত মোট প্রিমিয়াম ফেরত দেওয়া হয়। সেই সাথে আপনার জীবন বীমা পলিসির সঞ্চয়ী বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ যোগ করে বীমা গ্রাহককে একটি লাভজনক অংকের টাকা ফেরত দেয়া হয়ে থাকে।
ট্যাক্স ছাড় সুবিধাঃ
বাংলাদেশ সরকারের আয়কর আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বিনিয়োগ করে তাদের করের বোঝা হ্রাস করতে পারে। জীবন বীমায় বিনিয়োগ তার মধ্যে অন্যতম। আপনার জীবন বীমা পলিসির জন্য প্রদত্ত প্রিমিয়াম নির্দিষ্ট অংক পর্যন্ত কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। এর পাশাপাশি, আপনার বীমা পলিসি থেকে প্রাপ্ত কোনও যেকোন পরিমান অর্থ সম্পূর্ণ করমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে (তবে, শর্ত থাকে যে আপনার প্রিমিয়াম আপনার বার্ষিক আয়ের ১০% এর বেশি না হয়)।

বীমা বিনিয়োগের বিপরীতে ঋণঃ
স্বপ্ন পূরণ করতে এবং লক্ষ্য অর্জন করতে আপনার জীবনে অনেক সময় ঋণ, বন্ধক এবং অন্যান্য ধরণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার পক্ষে ঢাল হিসেবে দাড়াতে পারে আপনার জীবন বীমা। জীবন বীমায় বিনিয়োগকৃত অংশ আপনার সম্পদ হিসেবে দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া যায়। আপনার দুঃসময়ে বীমায় জমাকৃত অর্থের সাহায্যে ঋণ নিয়ে আপনি আপনার আর্থিক দুঃসময়কে মোকাবেলা করতে পারেন।
দুর্ঘটনাজনিত ব্যয়ঃ
আপনার জীবনের যেকোন আকষ্মিক দুর্ঘটনায় বীমা কোম্পানী আপনার সাথে করা জীবন বীমা চুক্তি অনুযায়ী আপনার চিকিৎসা ব্যয়ভার নিতে পারে। এভাবে আপনার দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতির বোঝা বীমা কোম্পানী নিতে পারে। তবে, দুর্ঘটনাজনিত ব্যয় সংক্রান্ত শর্ত পূর্বেই আপনার জ়ীবন বীমা চুক্তিতে লেখা থাকতে হবে।
উপসংহারঃ
বর্তমান সময়ে জীবন বীমা আমাদের জীবনের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবন বীমা আমাদের জীবনের বিভিন্ন অনাকাংখিত ঘটনা মোকাবিলা করার সময় একাধিক উপায়ে বীমাকারী ও তার উপর নির্ভরশীলদের আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে। জীবন বীমা পলিসির মূল বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা বোঝার মাধ্যমে আপনি আপনার ভবিষ্যতের জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আজ আমরা আপনাদের সাথে জীবন বীমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতের লেখায় এই বিষয়ে আরো অনেক বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। আমাদের লেখা নিয়ে যে কোন মন্তব্য, পরামর্শ, প্রশ্ন জানাতে আমাদের ফেসবুক পেজে লিখুন। আমরা প্রতিটি পাঠকের মন্তব্য মতামতের মূল্য দিয়ে থাকি। বিভিন্ন প্রকার বীমা নিয়ে জানতে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলিতে।
লিখেছেনঃ মঞ্জুর মোর্শেদ রিংকু