মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
জেনে নিন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির ধাপগুলো

নিজের স্মার্টফোন বা পিসি থেকে পছন্দসই পণ্য নির্ধারণ করার দুই তিন দিনের মাথায় নিজের বাড়িতে বসে পণ্য পেয়ে যাওয়া, আবার রয়েছে পণ্য গ্রহণ করার পর মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা! বলছিলাম ই-কমার্সের কথা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতেই হোক কিংবা সকলের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণেই হোক, অনলাইনে ওয়েবসাইট ভিত্তিক কেনাকাটা কিন্তু ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যারা অনলাইনে বিভিন্ন ই- কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করেন, তারা সবাই চান যেন খুব সহজেই সে ওয়েবসাইটগুলো থেকে তারা তাদের পছন্দসই কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কিনে নিতে পারেন। তাই যারা ই -কমার্স ব্যবসা করেন, তাদের ব্যবসায় লাভবান হতে একটি আদর্শ ই- কমার্স ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক।
অনেকেই জানেন না কিভাবে একটি ই -কমার্স ওয়েবসাইট বানানো যেতে পারে। তাই আজকের লেখায় থাকছে কিভাবে ধাপে ধাপে একটি আদর্শ ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন সেটি সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আজ আলোচনা করা হল।
ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম নির্ধারণ
আপনি যখন কারো সাথে পরিচিত হতে যান তখন শুরুতে সে মানুষটিকে আপনার নিজের নাম বলে থাকেন। কেননা আপনার নাম আপনার প্রাথমিক পরিচয় বহন করে।তেমনিভাবে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলে আপনার সর্বপ্রথম কাজটি হলো আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি ডোমেন নেইম নির্ধারণ করা।
ওয়েবসাইটের ডোমেইন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেই ডোমেইনটি ফাঁকা আছে কিনা তা অবশ্যই দেখে নেবেন।মনে রাখবেন, মানুষ আপনার ওয়েবসাইটের নামের মাধ্যমেই সেটিকে চিনবে। তাই ভেবেচিন্তে ওয়েবসাইটের নাম নির্ধারণ করা আবশ্যক।

যেমন ধরুন আপনি কসমেটিকস পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান৷ সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামটি ও কসমেটিকস রিলেটেড হতে হবে।আবার খুব বেশি বড় নাম দিতে যাবেননা,কেননা নাম যত ছোট হবে ক্রেতারা তত সহজে মনে রাখতে পারবেন।
এরপরের কাজটি হলো ডোমেইন নিবন্ধন করা৷ সাধারণত এক হাজার টাকার মধ্যেই ডোমেইন নিবন্ধন করা যায় যেটির নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে এবং মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে তা রিনিউ করতে হয়। বর্তমানে ডোমেইন সরবরাহ করে এমন একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো godaddy.com।ডোমেইন এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কিনবেন যেনো কোনো সমস্যা হলে সহজেই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
হোস্টিং
ডোমেইন নির্ধারণের পরেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো হোস্টিং।সহজ বাংলায় হোস্টিং বলতে ওয়েবসাইটের ছবি, তথ্য, ডেটা ইত্যাদি যে জায়গায় রাখা হয় সেটিতে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ হোস্টিং অর্থ কম্পিউটার সার্ভার। হোস্টিং বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন: ডেডিকেটেড হোস্টিং, শেয়ারড (ভার্চ্যুয়াল) হোস্টিং, ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হোস্টিং (ভিপিএস হোস্টিং), ক্লাউড হোস্টিং ইত্যাদি।
ডেডিকেটেড সার্ভার হলো যখন একটি কম্পিউটারের সম্পূর্ণটুকুই একটি ওয়েবসাইটের সার্ভার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ সার্ভারের হোস্টিংকেই ডেডিকেটেড হোস্টিং বলা হয়। এ ধরণের হোস্টিং এর জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হয়৷
অপরদিকে যখন একই সার্ভারের মাধ্যমে একাধিক ওয়েবসাইট ভাগাভাগি করে হোস্টিং করা হয়, তখন সেটিকে শেয়ারড হোস্টিং বলা হয়।এ ধরনের হোস্টিং এ যদি অধিক মানুষ ওয়েবসাইটে আসে তাহলে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। তাই এ ধরনের হোস্টিং ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য একেবারেই উপযোগী নয়। হাজার খানেক টাকাতেই এমন হোস্টিং পেয়ে যাবেন।

যখন একটি ডেডিকেটেড সার্ভারকে ভার্চ্যুয়াল কোনো সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে ভাগ করার মাধ্যমে কয়েকটি সার্ভার তৈরি করা হয়, তখন সেটিকে ভিপিএস বলে। এখানে সফটওয়্যারের সাহায্যে যে ভাগগুলো করা হয় সেগুলো একেকটি ইনডিপেনডেন্ট সার্ভার হিসেবে কাজ করে। তাই এগুলোর ব্যবস্থাপনা করা কিছুটা কঠিন।অনেক সময় সার্ভার ডাউনের সমস্যাও দেখা যায়।এ সার্ভারগুলোর জন্য আপনাকে কমপক্ষে হাজার চারেক টাকা গুনতে হবেই।
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য সর্বাধিক উপযোগী হোস্টিং হলো ক্লাউড হোস্টিং কেননা এ হোস্টিংয়ে সাইটটি একটি সার্ভারের মধ্যে আটকে থাকে না বরং একই সাইট বিভিন্ন সার্ভারে হোস্ট করা হয় ।ফলে কোনো কারণে একটি সার্ভার ডাউন হয়ে গেলে প্রায় সাথে সাথেই অন্য সার্ভার থেকে সাইটটি চালু হয়ে যায়। এ ধরনের হোস্টিং এ একই সময়ে অধিক মানুষ সাইটে প্রবেশ করলেও সার্ভার ডাউন হওয়ার সমস্যা সচরাচর দেখা যায়না। তাই এ ধরনের হোস্টিং ই বেশি জনপ্রিয়।এ ধরনের হোস্টিং এর খরচ সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
ওয়েবসাইট তৈরির প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ
চলুন এবার আসা যাক মূল ধাপে। সেটি হলো ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করা।তবে একেবারেই কাস্টম কোনো প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়ার চেয়ে কোনো অধিক নির্ভরযোগ্য সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার) যেমন ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা ম্যাজেন্টো ব্যবহার করা নিরাপদ। পাশাপাশি এগুলো কিছুটা কম ব্যয়বহুল ও বটে।
উপরন্তু সিএমএস এ পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের হালনাগাদ করা বেশ সহজ। ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানানোর সময় খুঁটিনাটি সব প্রয়োজনীয় তথ্য যেনো থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে৷ পাশাপাশি আপনার সাইটটি যেনো পিসির পাশাপাশি স্মার্টফোনেও রেস্পন্সিভ থাকে যা নিশ্চিত করে নেবেন।একটি আদর্শ ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানাতে সাধারণত ২০ থেকে ৪০ হাজার এর অধিক টাকা খরচ হয়ে থাকে।
মূলত এগুলোই হলো একটি ওয়েবসাইট বানানোর বেসিক তিনটি ধাপ। পরামর্শ থাকবে ই কমার্স সাইট তৈরির আগে নিজে একটু এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করুন। নিজে দেখুন, বুঝুন তারপর ওয়েবসাইট তৈরির প্রক্রিয়ায় হাত দিন৷ এতে করে একদিকে যেমন আপনাকে কেউ ঠকাতে পারবেনা অপরদিকে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি নিয়ে আইডিয়াও হয়ে যাবে।
লিখেছেনঃ সুমাইয়া রহমান