তরুণ পেশাজীবীদের জন্যে এরিক স্মিডের ক্যারিয়ার পরামর্শ – ২য় পর্ব

 তরুণ পেশাজীবীদের জন্যে এরিক স্মিডের ক্যারিয়ার পরামর্শ – ২য় পর্ব

পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের একটা বিরাট অংশ একই সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিজীবনে পা রাখছে। কিন্তু প্রত্যেকেই সফলভাবে পেশাগত ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটাতে পারে না।

কেউ শুরুতেই ভালো চাকরি পেয়ে যায়। কেউবা দিনের পর দিন পরিশ্রম করেও প্রত্যাশিত চাকরি পায় না। অনেকেই ব্যবসায়ে ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়। যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আবার অনেকেই ক্যারিয়ারে পথ হারিয়ে বসে।

ছবিঃ এরিক স্মিড এবং জোনাথান রোজেনবার্গ

গুগলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এরিক স্মিড এবং প্রাক্তন সিনিয়র ভিপি অফ প্রোডাক্টস জোনাথন রোজেনবার্গ ২০১৫ সালের ১২ই মার্চ একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম- How Google Works, বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়- গুগল কীভাবে কাজ করে।

ছবিঃ How Google Works বই

গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্মিড বর্ণিত তরুণদের উদ্দেশ্যে বলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করবো। আজ রইলো এর দ্বিতীয় পর্ব।

আসুন জেনে নেই, সেসব তরুণ পেশাজীবীদের ক্যারিয়ারের জন্যে কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

  • নিজ কোম্পানি ও ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখাঃ

আপনি যে শিল্প সংক্রান্ত কাজে জড়িত আছেন শেষ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখুন। এছাড়াও আপনার কাজের ক্ষেত্রে সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখুন।

ছবিঃ কম্পানির বিজনেস নলেজের ভেনচিত্র

এ কাজটি করার একটি সহজ উপায় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমনঃ টুইটার) ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে আপনি আপনার কর্মের সাথে জড়িত শিল্পটির সাথে সম্পৃক্ত উঁচুস্তরের লোকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় তথ্যাদিও জানতে পারবেন।

এই যোগাযোগ স্থাপন ও ধরে রাখাটাই পরবর্তী পেশাজীবনে আপনাকে সহায়তা করবে।

  • বর্তমান ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে এলিভেটর স্পিচ প্রস্তুত রাখাঃ

স্বল্প সময়ে অল্প কথায় নিজের বর্ণনা দেওয়া, আকর্ষণ ও ইম্প্রেশন তৈরি করাই হলো ‘এলিভেটর স্পিচ’। এবার আপনি একটি দৃশ্য কল্পনা করুন। ধরুন বড় কোনো কোম্পানির হলওয়েতে আপনার সাথে সে কোম্পানির সিইও এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। আপনি ছুটে গিয়ে মার্জিতভাবে তাকে জানালেন যে আপনি তার প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি পেতে চান।

ছবিঃ এলিভেটর স্পিচ এর ধারণা

তখন তিনি আপনার কাছে হাঁটতে হাঁটতে অথবা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে জানতে চাইলেন যে আপনার কি কি যোগ্যতা রয়েছে বা কী ধরনের কাজ আপনি চাইছেন। মনে রাখবেন, আপনার হাতে কিন্তু মাত্র ৩০ সেকেন্ড যার মধ্যেই আপনাকে তাকে প্রভাবিত করতে হবে।

এই অংশটুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অল্প সময়ে বলা আপনার কথাবার্তায-ই নির্ধারণ করে দেবে যে আপনি চাকরিটি পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেন কিনা।

তাই এ ধরনের কথাগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বা বিশদভাবে কিছু না বলে খুব সংক্ষেপে আপনার সিভির সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক অংশগুলো তার কাছে ব্যক্ত করুন। অল্পকথায় এবং সহজভাবে তাকে বুঝিয়ে দিন যে কেন আপনি নিজেকে তার কোম্পানিতে কাজ করার যোগ্য বলে মনে করেন।

প্রথমেই দেখাতেই তার মনে ছাপ ফেলার চেষ্টা করুন যাতে সে আপনার কথা মনে রাখে। তবে মনে রাখবেন অবশ্যই সেটা যেন ইতিবাচক হয়।

  • নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ করাঃ-

স্মিড এবং রোজেনবার্গের মতে, যদি আপনি নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য এমন একটি সুযোগ পান যা আপনাকে আপনার কমফোর্ট জোন এর বাইরে ঠেলে দেয়, তবে আপনার উচিত সে পথে অগ্রসর হওয়া।

ছবিঃ নতুন কিছুর মোকাবিলা করার পূর্ব শর্ত কাজের প্রতি ভালোবাসা

সফল ক্যারিয়ার পেতে চাইলে নিজের কমফোর্ট জোন এর বাইরে আসতে হবে। নিজের সীমার বাইরে এসে যে কোন কাজ করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে, কেবল নিজের মত পড়ে থাকাই সার হবে; নিজের উন্নতি ঘটানোর সুযোগ আর আসবে না।

  • প্যাশন এবং কন্ট্রিবিউশনের সমন্বয় ঘটানোঃ

বার্নার্ড কমেন্সমেন্ট ভাষণে ফেসবুকের সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গ বলেছিলেন-

“প্যাশন (আবেগ) এবং কন্ট্রিবিউশনকে (অবদান) একত্রিত করা হলো সর্বোচ্চ বিলাসিতার কাজ।”

স্মিথ এবং রোজেনবার্গ এ বিষয়ে একমত যে কারো চিরস্থায়ী ক্যারিয়ার লক্ষ্য নির্ধারণে বিবেচনা করা উচিত এমন কিছু যে, কাজটিকে আপনি কেবল ভালোইবাসেন না, যেন সেটি আপনাকে আরামদায়ক জীবন দেয় এবং পৃথিবীতেও ভাল একটা প্রভাব ফেলে।

ছবিঃ প্যাশন ও কন্ট্রিবিউশন নিয়ে শের্লি স্যান্ডবার্গ এর বলা উক্তি

অর্থাৎ নিজের কাজটি ভালোবাসার পাশাপাশি এমন কিছু করা উচিত যা আপনাকে একটি সুখী জীবন দেয়। সেটির মাধ্যমে যেন আপনি পৃথিবীতেও ভালো একটা পরিবর্তন আনতে পারেন। এটি সম্ভব কেবলমাত্র আপনার কাজে ‘প্যাশন’ এবং ‘কন্ট্রিবিউশন’ এর সমন্বয় ঘটনার মাধ্যমে।

এরিক স্মিড ও জোনাথান রোজেনবার্গ তাদের বইতে তরুণদের উদ্দেশ্যে এমনই গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশিকা দিয়েছেন। যেগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে একজন তরুণ পেশাজীবী গড়তে পারেন সফল ক্যারিয়ার। বাস্তবে হয়ে উঠে উঠতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী অথবা চাকরিজীবী।

লিখেছেনঃ শাহনেওয়াজ আহমদ

RedLive

Related post