মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
তরুণ পেশাজীবীদের জন্যে এরিক স্মিডের ক্যারিয়ার পরামর্শ – ১ম পর্ব

পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের একটা বিরাট অংশ একই সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিজীবনে পা রাখছে। কিন্তু প্রত্যেকেই সফলভাবে পেশাগত ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটাতে পারে না।
কেউ শুরুতেই ভালো চাকরি পেয়ে যায়। কেউবা দিনের পর দিন পরিশ্রম করেও প্রত্যাশিত চাকরি পায় না। অনেকেই ব্যবসায়ে ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়। যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আবার অনেকেই ক্যারিয়ারে পথ হারিয়ে বসে।
গুগলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এরিক স্মিড এবং প্রাক্তন সিনিয়র ভিপি অফ প্রোডাক্টস জোনাথন রোজেনবার্গ ২০১৫ সালের ১২ই মার্চ একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম- How Google Works, বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়- গুগল কীভাবে কাজ করে।

গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্মিড বর্ণিত তরুণদের উদ্দেশ্যে বলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করবো। আসুন জেনে নেই, সেসব তরুণ পেশাজীবীদের ক্যারিয়ারের জন্যে কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
- নিজের ক্যারিয়ারকে তুলনা করুন সমুদ্রে সার্ফ করার সাথেঃ-
সার্ফিং বলতে বোঝায় সমুদ্রে পানির উপর মসৃণভাবে এগিয়ে চলা। সমুদ্রে একের পর এক বড় ঢেউ আসে। কিন্তু এর মাঝেও সঠিক উচ্চতার তৃপ্তিদায়ক ঢেউটিকে ধরে নিয়ে সার্ফার সাহসের সাথে এগিয়ে চলে।
ক্যারিয়ারকেও তেমনি সার্ফিংয়ের সাথে তুলনা করে স্মিড বলেন, “তোমার ইন্ডাস্ট্রিকে তুমি সার্ফিংয়ের জায়গা হিসেবে নাও, আর তোমার ধরতে চাওয়া ঢেউগুলো হিসেবে নাও কোম্পানিকে। তুমি সবসময় সবচেয়ে উঁচু এবং ভালো ঢেউগুলোকেই ধরতে চাইবে…”।
নিজের জন্য ও নিজের ক্যারিয়ারের জন্য সেরা ঢেউয়ের স্থানটি খুঁজে নিতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ, যা একজন ব্যক্তিকে পরবর্তী ধাপে যেতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও তিনি মনে করেন যে, বিজ্ঞাপন, ফার্মাসিটিক্যালস, মিডিয়া, বিনোদন, হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তরুণদের ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে।
- এমন কোম্পানির সাথে কাজ করুন যারা প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞঃ-
Google, Microsoft, Amazon বা E-bay এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সূতিকাগার হলো ‘সিলিকন ভ্যালি’। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই স্থানটিকে ‘প্রযুক্তির রাজধানী’ বলে অভিহিত করা হয়।
তরুণরা যদি সিলিকন ভ্যালির মত জায়গাতে কাজ করতে না চায় এরপরও তাদের উচিত এমন কোনো কোম্পানির সাথে কাজ করা যারা বর্তমান প্রযুক্তির হাল-হকিকত কেমন এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব কতটুকু- সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
ভবিষ্যতে দেখা যাবে এ ধরনের কোম্পানিগুলো টিকে আছে সেখানে বাকি কোম্পানিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে অথবা বন্ধ হয়ে গেছে।
লেখকের মতে, এ ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে অতীতের শিল্প পরিবর্তনের সময়ে সেসব কোম্পানিগুলো কিভাবে এবং কতটুকু খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাছাড়া সেগুলোর নেতৃত্ব বদলের ধরনও লক্ষ্য করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়াও কোনো কোম্পানির সিইও এর যদি উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত অতীত ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে সেগুলোর ভবিষ্যতে টিকে থাকার এবং উন্নতি করার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মত দেন।

- পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নঃ
তরুণ পেশাজীবীদের জন্য আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা লক্ষ্য নির্ধারণের উপদেশ দিয়েছেন তারা। পাঁচ বছরের জন্য এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার পরামর্শ তাদের-
০১. ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
০২. আপনি কি করতে চান?
০৩. আপনি কত বেশি অর্জন করতে চান?
০৪. ওয়েবসাইটে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলে আপনি সেখানে নিজেকে কোন পদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করেন?
০৫. আপনার জীবনবৃত্তান্তটি (সিভি) কতটা মানসম্পন্ন?
এসব প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে আপনি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেন।
এছাড়া সামনের দশ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান বা কোন পর্যায়ে থাকতে চান তার একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের চেষ্টা করুন। এতে ভবিষ্যতে আপনার স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারবেন সহজেই।
- সংখ্যা সম্পর্কিত কাজগুলোতে অভ্যস্ততা অর্জনঃ-
ডাটা বা সংখ্যা সংক্রান্ত কাজে দক্ষতা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন স্মিড। তার মতে-
“বর্তমান সময় হলো বিস্তৃত ডাটার সময়, আর বিস্তৃত ডাটার জন্য প্রয়োজন সেগুলো সহজতর করার কাজে দক্ষ ব্যক্তি: পরিসংখ্যানবিদ। ডাটার গণতন্ত্রীকরণ মানে হলো, যারা সেগুলো ঠিকঠাক বিশ্লেষণ করতে পারবে, তারাই জিতবে। একবিংশ শতাব্দীর তলোয়ার হলো- ডাটা; এর সঠিক ব্যবহারকারীরাই জয়ী হবে।”
লিখেছেনঃ শাহনেওয়াজ আহমদ