মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
নবম শ্রেণির সেই মেয়েটির বিয়ে পর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ই-কমার্স বর্তমান সময়ের সব থেকে পরিচিত একটি নাম। নামটি শুনলেই আমরা বুঝে নেই যে অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচা করার নাম ই-কমার্স। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর সাবলম্বী হওয়ার সহজ একটি মাধ্যম এই ই-কমার্স।তাই যে কেউই আমরা ই-কমার্স কিংবা এফ কমার্সের প্লাটফর্মে নারী কিংবা পুরুষ উভয়েই ঘরে বসে আমরা অতি সহজে অনলাইনে ব্যবসা করতে পারি।
কিন্তু উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের যাত্রা অনেক উৎসাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু করেও কেন আমরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি না? হয়তো উত্তরটা আমরা জানি না অথবা আমরা কারণটা কখনও খুঁজে পাই না। আমি আমরা যারা নতুন উদ্যোক্তা আমরা যদি আমাদের নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও কাজ কে ভালবাসতে পারি তাহলে আমার ভবিষ্যৎ তে ভাল কিছু করতে পারবো। আজ আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি শারমিন মনিকা তুলে ধরেছেন টাংগাইলের মেয়ে রোয়েনা রহমান এর কথা যিনি গড়ে তুলেছেন নারী উদ্যোক্তা সংগঠন।
প্রথমে জানতে চাই জন্মস্থান আর পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে।
– টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমরা দুই ভাই বোন। বাবা একটা প্রাইভেট সেক্টরে জব করতেন এবং মা গৃহিণী। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আমার বিয়ে হয়ে যায়। দুই ছেলে এবং হাজব্যান্ডকে নিয়ে আমার ছোট্ট একটা সংসার।
আপনার জীবনের শুরুর দিকের প্রতিবন্ধকতা কেমন ছিল? – এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি – দুটোতেই ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম আমি। অথচ এত ভালো রেজাল্ট করার পরও আমি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। কারণ সেসময় আমার বেবীরা খুব ছোটো ছিল। অগত্যা বাড়ির পাশের ডিগ্ৰি কলেজে ভর্তি হই আমি। তারপর হাজব্যান্ডের চাকরিসূত্রে ঢাকায় চলে আসি। আমার হাজব্যান্ড ঢাকা কাস্টমস হাউজে জব করেন।
২০০৪ সালের কথা। এইচএসসি পাশ করার পর কমিউনিটি হেলথে ( Health ) আমার চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। অথচ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি আমি। কারণ ওই যে…আমার বেবীরা খুব ছোটো ছিল তখন।
আপনার কাজের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
– ছেলেবেলা থেকেই আমি আমার নিজের পোশাকটা নিজেই তৈরি করতাম। তাছাড়া হাতের কাজের প্রতি খুব নেশা ছিল। অন্যদিকে জব করাটা আমার জন্য খুব কঠিন একটি বিষয় ছিল। ওই অবস্থায় আমি তখন ভেবে দেখলাম, কিছু একটা করতে হবে! এমন কিছু করতে হবে, যেখানে নিজের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কাছের বন্ধুদের পরামর্শ ছিল, বুটিকসের কাজ শুরু করা। তাদের মতে, “তুমি অনেক সুন্দর পোশাক তৈরি করতে পারো। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প নিয়ে তোমার কাজ করা উচিত”। সেসময় ‘যুব উন্নয়ন’ নামক একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিজাইন এবং কাটিংয়ের ওপর তিন মাসের জন্য একটি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমি যেহেতু আগে থেকেই টুকটাক কাজ জানতাম, কাজেই আমার জন্য এটা একটা প্লাসপয়েন্ট ছিল। তারপর প্রশিক্ষণ শেষে বুটিকস নিয়ে যাত্রা শুরু করি আমি। তখন সাল ছিল ২০১৬।
আপনি আপনার বুটিকসের সার্বিক কাজের দায়িত্বটা কি নিজের কাঁধেই নিয়েছেন?
নিজেই পরিচালনা করেন সব কিছু? – কাটিং এবং ডিজাইনের কাজের ব্যাপারগুলো আমি নিজেই করতাম। বাকি কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিন জন মহিলা কারিগর নিয়োগ দিয়েছিলাম। সবমিলিয়ে, মোটামুটি বেশ ভালোই চলছিল। উপরন্তু, সবার সাথে ভালো একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছিলাম আমি। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল চলতি বছরে। করোনাকালের বিভীষিকায় অনেক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। দীর্ঘ চার মাস ধরে আমার বুটিকসের কাজ বন্ধ ছিল। অথচ দোকানের ভাড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় আনুষঙ্গিক খরচ কিন্তু ঠিকই চালিয়ে যেতে হয়েছে।
দেশীয় পণ্য নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
– বর্তমানে নারী উদ্যোক্তা সংগঠনটি নিয়ে কাজ করছি আমি। নারীরা কেন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকবে? তাই না? বরং প্রত্যেকটি নারী যেন তার সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে নিজের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে – সেই লক্ষ্যে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। দেশের ই-কমার্স সেক্টরে নিশ্চিত করতে হবে নারীর সফল অংশগ্রহণ। এক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাই আমি। পাশাপাশি চাই নিজের একটা পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে। সাধ্যের মধ্যে ভালো মানের পণ্য সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই আমি! এটাই আমার অঙ্গীকার!