মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
প্রাচীন রোমানদের খাদ্যবৃত্তান্ত

রোমান সভ্যতা। জুলিয়াস সিজার,ক্লিওপেট্রা,মার্ক এন্টনীর রোম,যা খ্রিষ্টপূর্ব ১০০-৪০০খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল।তখনকার সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ৫০-৯০মিলিয়ন,যা ছিল পুরো পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ!! সম্রাট, সম্রাজ্ঞী নিয়ে রয়েছে নানা ঘটনা ও লোককথা।ভাবলে অবাক হতে হয়,কেমন ছিল তাদের খাদ্যাভ্যাস?সবই কি সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা ছিল?কি কি ছিল প্রাচীন রোমের খাবারের তালিকায়?চলুন,আজকের লেখায় প্রাচীন রোমানদের খাবার টেবিল থেকে ঘুরে আসি!
রোমানরা সাধারণত তিনবার খাবার খেত:
জেন্টাকুলাম ছিল তাদের প্রাতঃরাশ, প্রানডিয়াম ছিল দুপুরের খাবারের নাম এবং সিনা বা ডিনার ছিল রাতের খাবার।মূলত সিনা তাদের প্রধান খাবার।তারা রাতের খাবার দুপুর ৩টা থেকে পাঁচটার মধ্যে খাওয়া শুরু করত।তবে শেষের সময়টি ছিল অনিশ্চিত। কিছু কিছু ধনী পরিবার এতটাই বিশাল সিনার আয়োজন করত যে,তা শেষ হতে প্রায় ৬-৮ঘন্টা লাগত।
প্রধান খাবারঃ
মূলত মাছ,মাংস, সবজি ছিল রোমানদের প্রধান খাবার।এছাড়াও ছিল গম।গমের রুটি ও চিজ ছিল তাদের অন্যতম প্রধান খাবার।তারা বেশিরভাগ প্রাতঃরাশেই এই খাবার খেত।তবে রুটিতে ভাগ ছিল।ধনীরা যেখানে গমের আটার রুটি খেত,সেখানে গরীবদের বেশিরভাগ সময়েই খেতে হত বার্লির রুটি।গমের জাউ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার। এছাড়াও তাদের প্রধান পানীয় ছিল ওয়াইন।কিন্তু পানীয়ের ক্ষেত্রেও ধনী গরীবের মধ্যে বেশ ভালোই বিভেদ ছিল।যেমন ধনীরা উচ্চমানের ওয়াইন পান করলেও,গরীব জনগণ ও সৈনিকরা পান করত ‘পোসকা’।এই ‘পোসকা’ হল এমন একধরনের নিম্নমানের ওয়াইন যার সাথে জল মিশিয়ে পরিমান বাড়ানো হতো এবং অনেক মশলা মিশিয়ে খাবার উপোযোগী করা হত।
মশলা প্রসঙ্গঃ
মশলার কথা বলতে গেলে রোমানদের নাম উঠে আসে। প্রাচীন রোমানরা সস ও বিভিন্ন রকম মশলা খুবই পছন্দ করত।গরীব জনগণকে সাধারণত বার্লি বা সবজীর উপর নির্ভর করে থাকতে হত যা ছিল প্রায় বিস্বাদ।ফলে মশলা বা সস তাদের খাবারকে অনেকটাই মুখরোচক ও খাবার উপযোগী করে তুলত।
ধনী রোমানদের খাদ্যাভ্যাস ও রীতিঃ
প্রাচীন রোমানদের নিয়ে একটি খুব প্রচলিত কথা রয়েছে যা জেমি ফ্রেটারের মুখে জানা যায়।তিনি বলেন,রোমানরা কোনো ভোজে গিয়ে প্রচুর খেত।যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের বমি পেত,ততক্ষন তারা খেতেই থাকত।তারপর একটা সময় ভোমিটরিয়াম নামক একটি ঘরে গিয়ে পেট খালি করে পুনরায় আবার খাওয়া শুরু করত।কথাটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও,সেইসময়ের ধনীদের ভোজ আয়োজনের বিশালতার একটা ইঙ্গিত এর মধ্যে পাওয়া যায়।মাংস যেমন পোলট্রি,ছাগল,উট এসব ছিল ধনীদের খাবার।তাদের আয়োজিত ভোজ এতটাই বিশাল হত যে,কয়েকটি ভাগে খাবারের আয়োজন করতে হত।এমনকি সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দূর্লভ মশলা দিয়ে তৈরি খাবারের নিদর্শন এবং আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা দিয়ে রীতিমতো খ্যাতির প্রতিযোগিতা চলত।ম্যাককিনোনের ভাষ্যমতে,পুরো প্রানীটাকে আস্ত রান্না করে পরিবেশনের অর্থ ছিল,আয়োজক পরিবার অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ।তবে মজার ব্যাপার হল,এইসব ভোজে আমন্ত্রিতরা নিজেদের ন্যাপকিন নিজেরাই নিয়ে আসতেন।এটাই নাকি ছিল তখনকার সভ্য রীতি।তাদের খেতে বসার পদ্ধতিও ছিল খুব অদ্ভুত।একটি টেবিল ঘিরে তিনটি কোচে মোট নয়জন খেতে বসতেন।বাম হাতকে ভাঁজ করে তার উপর শরীরের ভার রেখে(এক প্রকার শুয়ে)ডান হাত দিয়ে খেতেন।চতুর্থদিক খোলা থাকত পরিবেশনের জন্য।
নিম্নস্তরের রোমানদের খাদ্যাভ্যাস ও রীতিঃ
ধনীদের তুলনায় সাধারণ রোমানদের খাদ্যাভ্যাস বেশ সাধারণই ছিল।প্রদর্শন কিংবা আভিজাত্যের জন্য নয়,বেশিরভাগ নিম্নস্তরের রোমানরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যই খাবার খেত।মাংস জাতীয় খাবার তাদের জন্য বেশ বিলাসিতাই ছিল,যতক্ষন পর্যন্ত না তারা গ্রামের দিকের বাসিন্দা হত কিংবা নিজেরাই শিকার করে নিত।সেই সময় তারা থার্মোপোলিয়া নামক এক ধরনের রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবারের জন্য যেতেন,কারণ বেশিরভাগের বাড়িতেই রান্নাঘর ছিল না।প্রথম শতাব্দীতে এই রেস্তোরাঁর ধারনা এত বেশি জনপ্রিয় ছিল যে,শুধুমাত্র পম্পেই নগরীতেই ১৫০০০ লোকের জন্য ৯০ টি থার্মোপোলিয়া ছিল।রাতের প্রধান খাবারে নিম্নশ্রেণীর মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় ও প্রধান খাবার ছিল ‘পালস(puls)’।এটি মূলত গম ও জল দিয়ে তৈরি একধরনের জাউ।
লিখেছেনঃ অনন্যা চক্রবর্ত্তী