মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : একজন জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী

বাংলাদেশের মুক্তির ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে আমাদের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। কেননা মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার লক্ষ্যে যিনি সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনিই বঙ্গবন্ধু! বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ প্রদানকারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ জন্মবার্ষিকী। এবং আজকের এই শুভ দিনে আমরা আমাদের জাতির পিতাকে স্মরণ করব শ্রদ্ধার সাথে।
সে অনেক আগের কথা। ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিল এক ছোট্ট খোকা। ছোট্ট খোকার বেড়ে ওঠা মধুমতীর তীরে। মধুমতীর খুব খ্যাতি ছিল তখন। স্টিমার চলত, স্টিমারে চড়ে সুদূর কলকাতা শহরে পাড়ি দেয়া যেত খুব সহজেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে; সেদিনের সেই ছোট্ট খোকাই আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান! আমাদের জাতির পিতা!
পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মায়ের নাম বেগম সায়েরা খাতুন। শিক্ষাজীবনের শুরু স্থানীয় গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে, সাত বছর বয়সে। এর ঠিক তিন বছর পর বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ। হ্যাঁ, দশ বছরের ছোট্ট বঙ্গবন্ধু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রিয় নেতা। তার নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিল একদম ছেলেবেলা থেকেই। গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে পড়াকালীন, অসামান্য নেতৃত্বের সাথে বঙ্গবন্ধু তার স্কুল এবং ছাত্রাবাসের সমস্যা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সম্মুখে।
সাল ১৯৪০। নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলি আরও বিকশিত হয়। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন মুসলিম লীগের বিখ্যাত নেতা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন তিনি। জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে।
দেশভাগের সময় ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের ওপর বি. এ সম্পন্ন করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর মুসলিম লীগ ত্যাগ করে গঠন করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলেন, তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গর্জে ওঠে সারা দেশ। শুরু হয় ভাষার জন্য আন্দোলন। এবং এই আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম সারির একজন নেতা।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। সেসময় কারাবন্দি অবস্থায় অনশন ধর্মঘট পালন করে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৪ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার কৃষি, বন ও সমবায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু পেশ করেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, ৬ দফা দাবি। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হবার কারণে গ্রেফতার হন তিনপরের বছর, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী উদ্ভব ঘটে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের।
একাত্তরের সুদীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশব্যাপী সকল স্তরের মানুষ উজ্জীবিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। অতঃপর আমরা অর্জন করি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে উদ্ভব ঘটে একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি খুঁজে পায় তার জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জন্মবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনে জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
▪︎ লিখেছেন : নবনীতা প্রামানিক