বডি শেমিং : আধুনিক বর্বরতার নতুন চর্চা!

 বডি শেমিং  : আধুনিক বর্বরতার নতুন চর্চা!

ঘটনা ১- “মেয়ে দেখতে শুনতে ভালোই, কিন্তু ওজনটা একটু বেশী”,  আড়াল থেকে পাত্রপক্ষের এহেন মন্তব্য শুনে নিতু আরো মুষড়ে গেলো।  

ঘটনা ২- ”এই ভোটকা, শুনে যা তো” নিজের বন্ধুদের দেয়া নামটা রুহিতের ভালো না লাগলেও, তাকে এই নামটাতেই মানিয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে।  

উপরের ঘটনাগুলো কিন্তু একদম অপরিচিত নয় কারো কাছে, কেননা প্রতিদিনই এহেন আচরণ আমরা হয়ে যেতে দেখছি, নিজেরাও করে চলেছি।
মজা/হেয়ালি বলে উড়িয়ে দিলেও প্রকাশ্যে যেটা করা হচ্ছে তার একটা নাম আছে — Body shaming বা, শরীর নিয়ে অসম্মানজনক মন্তব্য।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বডি শেমিং কী? এবং তা করলেই বা সমস্যা কী? সংজ্ঞা অনুযায়ী – আপনি যদি কারও দেহের আকার, আয়তন বা ওজন নিয়ে প্রকাশ্যে এমন কোনো সমালোচনা বা মন্তব্য করেন যাতে সেই মানুষটি লজ্জাবোধ করেন বা,  অপমানিত হন,তবে তা বডি শেমিং। অনেকেই ভেবে থাকেন যে ” আমি তো ওর ভালোর জন্যেই বলছি”,

কিন্তু আদোতে এহেন আচরণ সেই মানুষটির মনে নিজের প্রতি এক ধরণের বিবমিষার সূত্রপাত ঘটায়।

সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হচ্ছে, মোটকা, শুঁটকো ও বাটকু ইত্যাদি নামে মানুষকে ডাকা। তবে আরও ভয়াবহ দিক হলো অপরিচিত থেকে নিকটাত্মীয় এমনকি যাদেরকে বন্ধুস্থানীয় মনে করা হয়, কারোর   থেকেই এরূপ আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এমনকি তারা এতোটাই অবলীলায় বলেন  যে মনে হয় সামনের জন বুঝি অনুভূতিশূন্য যন্ত্রমানব।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের সমাজে বডি শেমিং বিষয়টা প্রকটভাবে বিদ্যমান। বিশেষ করে আমাদের দেশের বিয়ের বাজারে একটা মেয়েকে শুধুমাত্র তার বাহ্যিক রূপ নিয়ে যে কি পরিমাণ কথা শুনতে হয় তা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অনেকেরই দৃষ্টিভঙ্গি এরকম যে – “আমিতো ওর ভালোর জন্যেই বলেছি!” এসকল মানুষ যে তাদের মন্তব্য দ্বারা একজন মানুষ মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যেতে থাকে, যা ধীরে ধীরে মানসিক অসুস্থতায়ও পরিণতি লাভ করতে পারে। যে যেমন তাকে তেমনভাবে নিতে না পারার ব্যর্থতা আমাদেরই।  

মানুষ হিসেবে আপনি কতটা নেতিবাচক মনোভাবনার অধিকারী,  কতোটা সমালোচক তার জলজ্যান্ত উদাহরণ অন্যকে করা শারীরিক কটাক্ষ।  

শুধু যে বড় বা প্রাপ্ত বয়স্করাই বডি শেমিং করছে, তা কিন্তু নয়।তরুন,কিশোর এমনকি স্কুলের বাচ্চারাও বড়দের দেখাদেখি না বুঝেই করছে বডি শেমিং।  

সমাজের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের ছাঁচ মেপে নিজেকে সুন্দর করার আগে তাই নিজের মনকে সুন্দর করা উচিত। খুব সহজেই একজনের সৌন্দর্য নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে ফেলা সম্ভব ; কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি ও মন সুন্দর করা এতোখানি সহজ নয়।

লিখেছেনঃ শাহরিয়ার ইসলাম অর্ণব

ফিচার ইমেজ ক্রিয়েটেড বাইঃ হাসিন মাহিতাব

All rights reserved by RED LIVE

RedLive

Related post