বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারা : বইয়ের প্রতিটি শব্দের প্রথমে ‘ক’ বর্ণ

 বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারা : বইয়ের প্রতিটি শব্দের প্রথমে ‘ক’ বর্ণ

বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে আমাদের বাংলা সাহিত্যের। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ এই জগতে সম্প্রতি নতুন একটি ধারার সূচনা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত সাহিত্যিক, সর্দার মো. নাজমুল কবির ইকবাল। টটোগ্রামভিত্তিক সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে তিনখানা বই লিখেছেন তিনি, যেসব বইয়ের প্রতিটি শব্দ শুরু হয়েছে ‘ক’ বর্ণ দিয়ে!

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিটি শব্দের শুরুতে ‘ক’ বর্ণ ব্যবহার করে বই লেখা কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, অসম্ভব রকমের কঠিন এই কাজটিকে নিজের শ্রম, ধৈর্য্য ও মেধা দিয়ে সম্ভব করে দেখিয়েছেন নাজমুল কবির। আর আজ আমরা সাহিত্যের নতুন ধারা, টটোগ্রাম সম্পর্কে জানব। শুনব সাহিত্যিক নাজমুল কবিরের জীবনসংগ্রামের কথা।

টটোগ্রামভিত্তিক সাহিত্য যেমন হয়

“কথা কইলে কেউ কেউ করুণা করবে”

উপরের বাক্যটিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখুন। খেয়াল করলে দেখা যাবে, বাক্যটির প্রতিটি শব্দের শুরুতে একই বর্ণ তথা ‘ক’ বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে শব্দের শুরুতে একই বর্ণ প্রয়োগ করার ব্যাপারটাই টটোগ্রাম। আর টটোগ্রামের নীতি অনুসরণ করে যে সাহিত্য, সে ধরণের সাহিত্যকে বলা যেতে পারে টটোগ্রামভিত্তিক সাহিত্য।

‘ক’ বর্ণের প্রাসঙ্গিকতা যে কারণে :

টটোগ্রামভিত্তিক সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কেন ‘ক’ বর্ণটিকে বেছে নিলেন নাজমুল কবির? অন্য কোনো বর্ণ বেছে নিলেন না কেন? – এমন সব প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল কবিরের যুক্তি, ‘ক’ বর্ণ ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় অনেক বেশি শব্দ তৈরি করা যায়। এবং ‘ক’ দিয়ে তৈরি শব্দের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার কারণেই মূলত টটোগ্রামভিত্তিক সাহিত্যচর্চার কাজটি সম্ভব হয়।

‘ক’ বর্ণের সাহিত্যের মাধ্যমে নাজমুল কবিরের প্রাপ্তি ও ত্যাগ

ইসমোনাক ছদ্মনামে নাজমুল কবিরের প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে নতুন ধারার ‘ক’ বর্ণের সাহিত্যের তিনখানা বই – ‘কেষ্ট কবি’, ‘কেষ্ট কবির কনফারেন্স’, ‘কেষ্ট কবির কষ্টগুলো’। গতানুগতিক ধারার আর পাঁচটা বইয়ের তুলনায় ভিন্নধর্মী এই বইগুলো পাঠকমহলে যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে নাজমুল কবিরের লেখার। খানিকটা সুখের জন্য যথেষ্ট হতে পারত এত সব প্রাপ্তি – কিন্তু প্রাপ্তির তুলনায় ত্যাগের পরিমাণটা যে অনেকখানি বেশি! হ্যাঁ, ব্যতিক্রমী সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে নাজমুল কবির হারিয়েছেন নিজের স্ত্রী-সন্তানের সান্নিধ্য। জীবন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে সুদীর্ঘ কুড়িটা বছর! তবু বর্ণ আর ভাষার মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে নাজমুল কবির লিখে চলেছেন নতুন ধারার এক সাহিত্য। ‘ক’ বর্ণের সাহিত্য!

‘ক’ বর্ণের সাহিত্যের লেখক, নাজমুল কবিরের পরিচয়

পুরো নাম সর্দার মো. নাজমুল কবির ইকবাল। ছদ্মনাম হিসেবে ‘ইসমোনাক’ বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্যে শেষাংশের ‘ইকবাল’ নামটিকে জুড়ে দিয়েছেন নামের শুরুর দিকে। জন্ম ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে। বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের সরদারবাড়িতে। শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল স্থানীয় মক্তবে। পরবর্তী জীবনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন দেশের স্বনামধন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলা সাহিত্যের জগতে ‘ক’ ধারার সাহিত্য একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। মেধা ও মননের উৎকৃষ্টতা না থাকলে এমন নতুন কিছুর সৃষ্টি করা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার। আর এই কঠিন কাজটিকে সম্ভব করতে যিনি সক্ষম হয়েছেন, তার প্রশংসা করতেই হবে! বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে নাজমুল কবিরের ‘ক’ বর্ণের নতুন ধারার সাহিত্য।

লিখেছেন : নবনীতা প্রামানিক

RedLive

Related post