মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
ব্লকপ্রিন্ট নিয়ে কাজ করেই সফল নারী উদ্যোক্তা তানিয়া

ব্লকপ্রিন্ট ডিজাইন।যারা এই সম্পর্কে জানেন না তাদের বলব, এটি এমন এক ধরনের ছাপা কাপড় যাতে কাঠের উপর খোদাই করে বিভিন্ন নকশা আঁকা হয়৷ এই নকশা খোদাই করা কাঠকে ব্লক বলা হয়৷ আর ব্লক দিয়ে ছাপানোকে ব্লক প্রিন্ট বলে৷ইন্টারেস্টিং তাই না?এই ডিজাইনের একটা বৈশিষ্ট্য হলো একটি কাপড়ের সাথে আরেকটি কাপড়ের ডিজাইনের হুবহু মিল থাকে না৷ তাই নিজের ইচ্ছা মত ছোট বড় ব্লক বসিয়ে ডিজাইন তৈরি করে কাপড় ছাপানো যায়৷ আর যদি কাপড়ের রং অনুযায়ী মানানসই রং নির্বাচন করা যায় তাহলে নকশাও ভালোমত ফুটে ওঠে ও কাপড়টি দেখতে খুবই চমৎকার লাগে৷ এই ব্যবসাটি এর চাহিদাও ব্যাপক৷এই ব্লকপ্রিন্ট ডিজাইন করেই সফল কুষ্টিয়া জেলার মেয়ে তানিয়া বিনতে কোরাইশী।তিনি বর্তমানে ঢাকা বনশ্রী বসবাস করছেন। নিজে স্বাবলম্বী হতেই গড়ে তুলেছেন “Tania’s Annorakom “
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমি তানিয়া বিনতে কোরাইশী।আমরা তিন ভাইবোন। দুই ভাই আর আমি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবা ব্যবসা করতেন। মা একটি বেসরকারী স্কুলের টিচার ছিলেন। আমাদের বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার আল্লার দরগায়। গ্রামের নাম বৌদ্যনাথ তলা। আমার পড়ালেখার হাতেখড়ি খুলনাতে রোটারী হাই স্কুলে। তারপর রাজশাহীতে চলে আসি। ১৯৯০ সালে ঢাকায় চলে আসি। আমার কলেজ ছিলো বেগম বদরুননেসা মহিলা কলেজ। সেখান থেকে এইচ, এস, সি পাশ করি। তারপর ইডেন থেকে বি এ পাস করে মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স টা শেষ করতে পারিনি। ছোট বেলা থেকেই আর্টের প্রতি একটা নেশা ছিলো। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে আর্ট টিচার হিসেবেও কাজ করেছি। তারপর ২০০৮ বিয়ে হলো ময়মনসিংহের ছেলের সাথে। তারপর দুই বছরের মাথায় হলো আমার প্রথম সন্তান হয়। আলহামদুলিল্লাহ্।।
আপনি কিভাবে উদ্যোক্তা হলেন?
আলহামদুলিল্লাহ্।। আমি আসলে কখনও ভাবিনি যে, উদ্যোক্তা হব। আমি আগেই বলেছি যে, আমার ছোটবেলায় মারাত্মক নেশা ছিলো আর্টের উপর। কখনও কোথাও হাতে কলমে শিখিনি। দেখে দেখে আঁকতাম। একবার যেটা দেখেছি সেটাই করে ফেলেছি।
আপনার উদ্যোগ এর শুরু কখন?
আমার উদ্যোগ টি শুরু করেছিলাম ২০১২ সালে। তারপর আসলে বিভিন্ন সমস্যার জন্যে আর ধরে রাখতে পারিনি সব কিছু বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আমার উদ্যোগটি হলো ব্লকপ্রিন্ট নিয়ে। ছোট্ট করে একটু বলে রাখি (এইচএসসি পরীক্ষার পর আম্মার স্কুলের এক মহিলা কলিগের কাছে একমাস এই ব্লকপ্রিন্টটা শিখেছিলাম)। করোনার মধ্যে যখন বসে ছিলাম তখন চিন্তা করলাম কি করা যায়? ভাবলাম, আমার দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে কিছু করা যায় কিনা? যেই ভাবনা সেই কাজ।
তারপর গতবছর, ২০২০ সালের অক্টোবরে আমাকে আমার এক বান্ধবী Women and e – commerce forum (we) তে এ্যাড দিলো, তারপর থেকে ভালো লাগলো। এই গ্রুপে নিয়মিত হলাম আমার উদ্যোগের সাথে আলহামদুলিল্লাহ্।।
আপনি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন?
দেশীয় পন্য নিয়ে কাজ করছি। আমার নিজস্ব ব্লক ডিজাইন, গামছা ও জুম শাড়ির ফিউশন নিয়ে।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং সবচেয়ে কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?
আমি আসলে বিশ্বাস করি যে, যেকোন ভালো কাজ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আর এইসব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়াই হলো একজন উদ্যোক্তার মূল লক্ষ্য। বাধা আসবেই এটা স্বাভাবিক। কিন্তু থেমে যাওয়া চলবেনা। ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। একজন উদ্যোক্তার প্রথম সাপোর্টটি আসে কিন্তু পরিবারের থেকে। একজন উদ্যোক্তা যদি পরিবারের থেকে সাপোর্ট না পায় তাহলে তার ঐ উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হয়!!! আলহামদুলিল্লাহ্।। প্রথম থেকেই সাপোর্ট পেয়েছি। আমার স্বামী, বাবা -মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু পরিচিত সকলেই আমার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।এটি একটি নারীর জন্য অনেক বড় পাওয়া। আর খুব বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার এক কলেজ বন্ধুর কাছ থেকে। ও সবসময়ই আমাকে মানসিকভাবে শক্তি যুগিয়েছে। আর এখনো করে যাচ্ছে!! এবং আজকের এই সাক্ষাৎকারে সে সবচেয়ে বেশি খুশী। ধন্যবাদ এরকম একটি বন্ধু পেয়েছি। কৃতজ্ঞ মহান আল্লাহর কাছে। কৃতজ্ঞ বাবা- মা, ছোট ভাই হ্যাজবেন্ড, খালাতো বোন- ভাইয়ের কাছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
অনেক পরিকল্পনা আছে। আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমার নিজস্ব একটি দোকান থাকবে যেটাকে আমি ব্রান্ডে পরিনত করবো। ব্লক প্রিন্ট গামছার ফিউশনের পাশাপাপাশি নিজস্ব হ্যান্ড পেইন্টের কিছু শোপিস থাকবে। ব্লক সবসময়ই একটি মার্জিত রুচিশীল ডিজাইন ছিলো, আছে এবং থাকবে। এই ব্লককে আরো উন্নত শিখরে পৌঁছনোর প্রয়াস আছে আমার। দেশ থেকে বিদেশের মাটিতে পৌঁছনোর ইচ্ছা আমার। ইনশাআল্লাহ।