মনিপুরী তাঁতের পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে সফল উদ্যোক্তা আইরিন

 মনিপুরী তাঁতের পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে সফল উদ্যোক্তা আইরিন

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দেড় লক্ষেরও বেশি মনিপুরী বসবাস করে। মনিপুরী নারীরা ঘরে বসে তাঁতে কাপড় বুনন করে থাকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য। প্রায় ঘরেই একটা সময় তাঁত ছিল, বর্তমানে কমে গেলেও অনেকেই তাদের সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।সাধারণত মনিপুরী নারীরই তাঁতের কাজ টা করে থাকে। তাই মনিপুরী মেয়েরা জন্মের পর থেকেই মায়ের কাছ থেকে দেখে দেখে তাঁত বুননের কৌশল আয়ত্ত করে ফেলে। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের প্রায় ৫০/৬০ টি গ্রামে এই তাঁতীরা বসবাস করে। পূর্বে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ মনিপুরী শুধু শাড়ি সহ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহৃত পণ্য তৈরি করতো কিন্তু দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধিও বর্তমানে দেশ বিদেশে মনিপুরী পণ্যের পরিচিতির কারনে মুসলিম নারীরাও এই পেশায় যুক্ত হয়েছে।মনিপুরী যারা এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছিল তারাও বর্তমানে পুরোনো পেশায় ফিরে আসছে এবং নতুন তাঁত বসাচ্ছে।এমনই একজন সিলেট জেলার বাসিন্দা উদ্যোক্তা আইরিন রিফাত তানিয়া,যিনি কাজ করছেন মনিপুরী শাড়ী,শাল ও অন্যান্য তাঁত পন্য নিয়ে।আজ জানব আইরিন রিফাত তানিয়ার উদ্যোগ বিজনেস পেইজ “IYAN” সম্পর্কে ।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মিরপুরের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি আইরিন রিফাত তানিয়া। আমি সিলেট জেলার জোলার বাসিন্দা। আমরা দু ভাই বোন।আমি বড় আমার ভাই ছোট।আমার বাবা সরকারি চাকুরীজীবি ছিলেন।আমি এন জি এফ এফ স্কুল থেকে (সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এন,জি,এফ,এফ, লিমিটেড) এস সি পাস করার পর সিলেট এমসি কলেজ থেকে অনার্স পাস করি কেমিস্ট্রিতে।তারপর সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনান্স এন্ড ব্যাংকিং নিয়ে এমবিএ কমপ্লিট করেছি।আমার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরু টা কিভাবে?

আমি পড়াশোনা শেষ করার পর একটি বেসরকারি স্কুলে জব করতাম। ২০১৬ সালে আমার একমাত্র ছেলের জন্মের পর আমি মেটারনিটি লিভ নিয়ে যখন পুনরায় আবার স্কুলে জয়েন করি তখন পরিবারের চাপে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমার জবটা ছেড়ে দেই।তারপর প্রায় আড়াই থেকে তিন বছর আমি বাসায় বসে হতাশায় ভুগছিলাম।অর্থনৈতিকভাবে এবং মানসিক দিক দিয়ে আমি ভেঙে পরি।তারপর আমি ২০১৯ এ আমার নিজ উদ্যোগে মাএ ১৭৬০০ টাকা দিয়ে (বাবার কাছ থেকে নিয়েছিলাম টাকা) তাঁতের কাপড়,মনিপুরী শাল,চাদর দিয়ে আমি আমার উদ্যোগ শুরু করি।

যখন আমার বিজনেস খুব ভালো চলছিলো আমি তখন ইনভেস্টম্যান্ট আরো বাড়ালাম,ঠিক তখনই করোনা পরিস্থিতিতে আমার উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।তারপর একদিন ১২ ই মে আমি উই তে জয়েন করি।সব বাধা পেরিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ২০২০ এ উই থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি আবার শুরু করি।

আপনি কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

আমি মনিপুরী পণ্য যেমন-শাড়ী,ওড়না,গামছা,শাল সহ অন্যান্য তাঁতপণ্য নিয়ে কাজ করছি।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কাদের সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে আমি আমার পরিবারের সাপোর্ট পাই নি।আমার বাবা আমাকে সাপোর্ট করেন।তাই এগিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমি স্বপ্ন দেখি মনিপুরী তাঁতে আমার নিজস্ব ডিজাইনে শাড়ী,ওড়না তৈরি হবে।আমি দুস্থ,অসহায় সুবিধা বঞ্চিত নারীদের জন্য কিছু করতে চাই।মনিপুরী পণ্যকে আমি দেশ সহ ছাড়া বিশ্বে এই ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে চাই।

RedLive

Related post