মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
মনের সাহস আর প্রবল ইচ্ছে শক্তিই একজন উদ্যোক্তার মূল অস্ত্র-উদ্যোক্তা মনিকা

উদ্যোক্তা বগুড়ার মাহমুদা আকতার মনিকা সিদল বিক্রি করে স্বাবলম্বী। তিনি মনে করেন কোন কাজ কে ছোট মনে করা উচিত নয়।জীবন বড়োই সুন্দর যদি সেটা ভালো করে উপলব্ধি করা যায়।জীবনে চলার পথ কখনো মসরিন হয় না। সৎ ইচ্ছা আর মনে বল থাকলে সব কিছু জয় করা সম্ভব।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।
প্রথমে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই! এবং কিভাবে আপনার উদ্যোগটি নিয়ে পথ যাত্রা শুরু করেন?
আমি মাহমুদা আকতার মনিকা। আমার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় আমি একজন মা। আমি একজন উদ্যোক্তা।পড়াশোনা মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পূর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের পরের বাড়িতে যেতে হয়।আমিও তার ব্যাতিক্রম নই।তবে চাকরির পড়াশোনা করলেও মন দিয়ে পড়াশোনা হতো না।তবে স্বপ্ন ঠিকই দেখতাম আমি অফিসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছি।একসময় হতাশায় ঝোঁকে বসলো।আর সেটা হলো প্রেগ্ন্যাসির সময়ে আরো বেশি।আমি কিছু একটা করতে চাই। চাই মানে চাইই। এক ছোট ভাই এর সাথে কথা বললাম তারপর শুরু হলো আমার যাত্রা।ছোট ভাইয়ের পেইজ দিয়েই কাজ শুরু করি যেটা এখন Monika House নামে পরিচিত আমার নামেই।
শুরু হলে আমার স্বপ্নের যাত্রা। আমার খুব পছন্দের খাবার গুলো নিয়ে আমার বিজনেস শুরু। আইডিয়া নিজে নিজেই তৈরি করি।দেখলাম এই খাবার গুলো অনেক লোক পছন্দ করে।তবে তা আর খাওয়া হয় না কারন এই খাবার গুলোর অথেনটিক একটা বিষয় আছে যা এখন পাওয়া যায় না।আর আমরা সবাই এখন সর্ট কাটে চলতে চাই।কেউ কষ্ট করতে চাই না ।এভাবেই চলার শুরুতেই ব্যাপক সারা পাই ।
শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে।বর কে বললাম বর বললো চিন্তা ভাবনা করে করো।কেমন দেখাবে এসব খাবার?আমি বললাম টাকা দাও দেখি কি হয়।সেল না হলে খেয়ে ফেলবো আমার তো চিন্তা এখন কাজ করা দেখা যাক কি হয়।তবে যে কনো কাজের ডিসিশন আপনাকেই মানে নিজেকেই নিতে হবে।অন্য কেউ কখনো আপনার মতো চিন্তা নাও করতে পারে। আমি বললাম ৩০০ টাকা দাও দেখি বিক্রি হলে হলো।নইলে খাবো আমরা। আমার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা চলতে শুরু হলো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সারা পেতে শুরু করলাম নতুন হলেও ১ মাসে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করলাম।আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি
আপনি কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?
কাজের ক্ষেত্রে আমার আইডিয়া কাজ করতো এটাই যে আমার প্রোডাক্ট গুলো ইউনিক যা মানুষ চাইলেই তৈরি করে খেতে পারে না যেমন সিদল আমার সিগনেচার প্রডাক্ট, এছাড়া শুটকি মাছ ঘরে তৈরি, কুমোর বড়ি, মাষকলাই ডালের গুড়া, ঘি,আমার উত্তর বঙ্গের গাঞ্জিয়া লাল চাল, ঘানি ভাঙ্গা সরিষার খাঁটী তেল, গাভির খাঁটী দুধ,হাতে তৈরি সিরিঞ্জ সেমাই, চাকা সেমাই, কয়েক রকমের আচার। শুরু টা মূলত আমার কুমোর বড়ি আর সিদল দিয়েই শুরু হয়েছিলো।এই পণ্য গুলো নিয়ে আমি কাজ করছি।

প্রথম দিকে কেমন সারা পেয়েছেন আপনার উদ্যোগটি নিয়ে!
শুরুর ১ মাসে ভালো রেসপন্স পাই। কিন্তু পাওয়ার পর চিন্তা আরো পজিটিভ হয়ে গেলো যে এটা আমি প্রফেশনালি করবো।আসতে আসতে ই-কমার্স আর এফ কমার্স টাও বুঝতে শিখলাম উই গ্রুপ এ জয়েন করে।তারপর আমার বিজনেস এর সকল প্রফেশনাল কাজ করে ফেললাম ওয়েবসাইট করলাম (বর কে না বলে)।।আমি চাইছিলাম আমার একটা আইডেন্টিটি হোক।আর দের বছরে আমি সেটা তৈরি করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। ওয়েবসাইট খুলাম। ওয়েবসাইট থেকে ও ভালো সারা পেয়েছি। ডোমেইন হোস্টিং,ট্রেড লাইসেন্স সহ,কোম্পানির কার্ড থেকে শুরু করে সব করেছি।
আপনার উদ্যোগটি নিয়ে পরিবারের কার সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথমে আমার বাবার বাড়ির লোকজন জানতো না।শুশুড় বাড়িতে সমস্যা হয়নি আমার এটা নিয়ে কাজ করাতে আলহামদুলিল্লাহ বাবার বাড়ি আর শশুড় বাড়ির ফুল সাপোর্ট আছে। সবচেয়ে বড়ো সাপোর্টার আমার হাসবেন্ড। তারপর শুরু হলো অনেক বাঁধা বিপত্তি। লকডাউন করোনা আর ডেলিভারি সিস্টেম। আমার তো বিজনেস এর পুজি কম।কম মানে ৩০০ টাকা থেকে শুরু। তাই তখন ডেলিভারি ম্যান রাখাও সম্ভব হয়নি।তাই বর ডেলিভারি করতো অনেকেই অনেক কিছু বলতো প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না। আপনি ভালো কিছু করলেও মানুষ তার সমালোচনা করবে।মন্দ করলে তো কথায় নেই।
বাচ্চার বয়স ৮ মাস তখন থেকেই আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু। আমার যুদ্ধ টা অনেক কঠিন হলেও আমি থেমে যাইনি।ছোট বাচ্চা নিয়ে সংসার বাচ্চা সব সামলিয়ে তারপর বিজনেস এর কাজ করতাম।
আপনার উদ্যোগটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
Monika House আমার স্বপ্নের নাম।আমি ল্যাপটপ নিজের উদ্যোগের টাকায় কিনেছি আলহামদুলিল্লাহ আমার প্রোডাক্ট গোটা দেশে পৌঁছাতে পেরেছি এই বছরে। আমার এই ছোট উদ্যোগটি নিয়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে গল্প বলতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিটি মেয়েই মাথা উচু করে সন্মান নিয়ে বাঁচতে চায়।আমার ইচ্ছে মেয়েদের নিয়ে কাজ করার প্রতিটি মেয়েই স্বাবলম্বী হোক সেই প্রত্যাশা করি।