মাল্টিটাস্কিংঃ কখনো আশীর্বাদ, কখনো অভিসম্পাত

 মাল্টিটাস্কিংঃ কখনো আশীর্বাদ, কখনো অভিসম্পাত

আজকালকার আধুনিক বিশ্বে ‘মাল্টিটাস্কিং’ খুবই জনপ্রিয় একটি টার্ম। ক্যারিয়ার জীবনে মাল্টিটাস্কার হতে চান না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কিন্তু মাল্টিটাস্কিংয়ের ব্যাপারে কতটুকু জানি আমরা? মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কী এই মাল্টিটাস্কিং? মাল্টিটাস্কিং ভালো নাকি মন্দ?

আসলে ‘মাল্টিটাস্কিং’ বলতে আমরা একই সময়ে অনেকগুলো কাজ করাকে বোঝাই। যেমন : আমাদের সম্মানিত ইনস্ট্রাকটরগণ যখন লেকচার প্রদান করেন, তখন আমরা সাধারণত মনোযোগ দিয়েই তাদের লেকচার শুনি। শুনতে শুনতেই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নোট ডাউন করে ফেলি – এই শুনতে শুনতে নোট ডাউন করে ফেলার ব্যাপারটাই আবার মাল্টিটাস্কিংয়ের খুবই চমৎকার একখানা উদাহরণ! তারপর…ড্রাইভ করার সময় জরুরী ফোনকল রিসিভ করার ব্যাপারটা হতে পারে মাল্টিটাস্কিংয়ের আরেকখানা প্রচলিত উদাহরণ। এরকম আরও অসংখ্য উদাহরণ কিন্তু আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে – একটুখানি অনুধাবন করার চেষ্টা করলেই সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারব আমরা। তবে আজকের আলোচনায় আমরা মূলত এর ভালো দিকগুলো সম্পর্কে জানব। পাশাপাশি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করব যে, এর কোনো মন্দ বা খারাপ দিক আছে কি না।

চলুন তাহলে শুরু করা যাক!

▪︎ মাল্টিটাস্কিং কি কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে?

কর্মক্ষেত্রে আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্যই চাইবেন যে, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আপনি যেন কম সময়ে বেশি বেশি শ্রম দিতে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে কম সময়ে বেশি পরিমাণে শ্রম দিতে চাইলে এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কেননা এর সাহায্যে আপনি চাইলেই একসাথে অনেকগুলো প্রফেশনাল কাজ ঠিকঠাকভাবে সম্পাদন করতে পারবেন। ফলে কর্মক্ষেত্রে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকবে। আর এই গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ব্যাপারটাকে আমরা চাইলে এর একটা ভালো দিক হিসেবে বিবেচনা করতেই পারি!

▪︎ মাল্টিটাস্কিং স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ভালো?

মাল্টিটাস্কিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ব্রেইনকে একই সময়ে অনেকগুলো কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বেশ কিছু রিসার্চের মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে যে, আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক একই সময়ে মাত্র একটি কাজকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কাজেই এর সাহায্যে আমরা যখন একই সময়ে অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করতে চাই – তখন আমাদের ব্রেইন কিন্তু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়!

▪︎ মাল্টিটাস্কিং দুশ্চিন্তা কমায় নাকি বাড়ায়?

এর মধ্যেই আমরা জেনেছি যে, মাল্টি টাস্কিংয়ে পারদর্শী হতে চাইলে একই সময়ে অনেকগুলো কাজকে ঠিকঠাকভাবে সম্পাদন করা জানতে হবে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল! একজন তুখোড় লেভেলের মাল্টিটাস্কারও কর্মক্ষেত্রে ছোটখাটো ভুল করে ফেলতেই পারেন – ভুল করার মাঝে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বিপত্তি দেখা যায় তখন, যখন ব্যর্থতার গ্লানি বহন করে দুশ্চিন্তার সাথে দিন অতিবাহিত করতে শুরু করেন একজন মাল্টিটাস্কার। অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলো কাজের প্রেশার প্রায়শই মাল্টিটাস্কারদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়!

▪︎ মাল্টিটাস্কিং কি কখনো সেল্ফ মোটিভেশনের কারণ হতে পারে?

শ্রমলব্ধ প্রতিটি প্রাপ্তিই আনন্দের! মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শী হওয়ার জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হয় একজন মাল্টিটাস্কারকে। আর একজন মাল্টিটাস্কার যখন দক্ষতার সাথে একই সময়ে অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করতে পারেন অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন, নিজের উপর তার আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটাও অনেকখানি বেড়ে যায় তখন! আর এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই সামনের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পান তিনি। কাজেই আমরা বলতে পারি যে, মাল্টিটাস্কিং সেল্ফ মোটিভেশনের কারণ হতেই পারে!

জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে মাল্টিটাস্কিং হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এতে পারদর্শী হয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আরেক ধাপ বাড়িয়ে নিতে পারি আমরা। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মাল্টিটাস্কিং কতটুকু ভালো – এই ব্যাপারে আরও বেশি ভাবা প্রয়োজন আমাদের!

লিখেছেন : নবনীতা প্রামানিক

RedLive

Related post