মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের আয়োজনে শেখ রাসেল মেমোরিয়াল ফুটবল টুর্নামেন্ট
মৃৎশিল্পের জানা অজানা কথা!

Image source:internet
বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস।মৃৎ”শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর “শিল্প” বলতে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তু। অর্থাৎ মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি যেকোনো শিল্পকে মৃৎ শিল্প বলা যায়। যেমন:মাটির তৈরী হাড়ি-পাতিল, কলসী, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, গয়না,শিশুদের বিভিন্ন খেলনা সমগ্রী ,বিভিন্ন মূর্তি ইত্যাদি। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এটেল মাটি, জ্বালানী কাঠ, খড় ও বালি।
এ মৃৎশিল্পের জন্ম হয়েছিল চীনের বিখ্যাত শহর থাংশান এ।আর বগুড়ার মহাস্থানগড় আবিষ্কার হবার পর জানা যায় এ উপমহাদেশে মৃৎশিল্পের উত্থান ঘটে মহেঞ্জোদারো ও হারাপ্পা সভ্যতায়। #মৃৎশিল্পের একটি বিশেষ ধরণ হলো টেরাকোটা।মাটি দিয়ে বস্তুটি বানাবার পর তা সূর্যের আলোর নিচে অনেকদিন রাখা হয় অথবা পোড়ানো হয় চুলায়।এরপর মাটির তৈরি বস্তুটি লালচে কমলা বর্ণ ধারণ করে ।টেরাকোটা বেশ টেকসই হয়।বর্তমানে টেরাকোটার বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়েছে আমাদের সমাজে।
এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত যারা অর্থাৎ কারিগর তাদের কুমার বলা হয়।বাংলাদেশের ধামরাই,বগুড়া,কুমিল্লা,নওগাঁ সহ আরও কিছু জেলায় কুমার গ্রাম রয়েছে।অর্থাৎ সে গ্রামগুলোতে কুমাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ।কুমার শ্রেণীর বেশিরভাগ ই হলো হিন্দু।তাদের পদবি হলো পাল।তারা বংশ পরম্পরায় এ কাজের সাথে যুক্ত। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই তাদের।জমিদারদের আমলে এরা অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে।জমিদাররা তাদের দিয়ে বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা ও নিজেদের প্রতিকৃতি বানাতেন।
এখন মৃৎশিল্পের সেই সোনালী দিন আর নেই।অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি প্লাষ্টিক, অ্যলোমিনিয়াম, মেলামাইন ও স্টিলের জিনিসপত্র তৈরী হওয়ায় এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে টিকতে পারছে না মৃৎ শিল্পের আসবাবপত্র। নায্য মূল্য না পেয়ে অনেকেই তাদের বাপ দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।আর যারা শত প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে আছে তারাও অনেক শোচনীয় অবস্থায় দিন যাপন করছে।

মৃৎশিল্পের এই অবস্থার জন্য কিছু কারণ দায়ী।যেমন:কুমার দের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে তারা বিপণন কৌশল জানেন না। এখন ও তারা সনাতন নিয়ম এই কাজ করছেন।নকশায় নতুনত্ব না আনতে পারা।
সরকারি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বর্তমানে। National Tourism Administration, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নানা ভাবে কুমার সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।তারা এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।অনেক বিদেশিরা এ শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট।প্রতিবছর নানাদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসে এ শিল্পের সন্ধানে।সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো এই পর্যটকদের কুমার গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবার জন্য কুমার গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে কিছু মানুষকে গাইড হিসেবে নিযুক্ত করেছে।এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে।কুমাররা ভালো দামে এই বিদেশি পর্যটকদের কাছে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন আড়ং,অরণ্য ক্রাফট,আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন ইত্যাদি আরও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কুমার দের নিয়ে।তাছাড়া বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।সেখানে কুমাররা সরাসরি অংশ নিতে পারছে।তাদের অর্থসংস্থান ভালো হচ্ছে সাথে এ শিল্পের আরও অগ্রগতি হচ্ছে।

আমাদের সবার উচিত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এই মৃৎ শিল্প এর আরো উন্নতি ঘটিয়ে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।আমরা যদি সময় থাকতে পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা না নিতে পারি তাইলে অচিরেই এই হাজার বছরের শিল্পের মৃত্যু ঘটবে।
লিখেছেনঃরুফাইদা হাসান নাফিয়া
(যদি মনে হয় লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।)