শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা জান্নাত-উল -ফেরদ্দৌস

 শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা জান্নাত-উল -ফেরদ্দৌস

উদ্যোক্তা বলতে কি শুধুই বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া, চাকরি না পাওয়ায় ব্যাবসায় জড়িয়ে পড়া? কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা কিনা চাকরি করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়েছেন।স্ব-উদ্যোগে নিজে ব্যাবসায় করা,উদ্যোগ নেয়া এসব ব্যাক্তি স্বাধীনতার ও বহিঃপ্রকাশ। চাকরি দাসত্বের মত।উদ্যোক্তা অনেকেই ভাল লাগা থেকে কিংবা স্বাধীন থাকতে কিংবা পারিবারিক স্বপ্ন পূরনেও হয়ে থাকেন।এমনই একজন হচ্ছেন জান্নাত- উল -ফেরদ্দৌস,যিনি কিনা পেশায় একজন প্রভাষক কিন্তু পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন।যার উদ্যোগে প্রায় ৫০ জন কর্মী রয়েছে। আসুন জানব জান্নাত -উল -ফেরদ্দৌস ও তার উদ্যোগ “Jannat online shopping ” নিয়ে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

শুরুতে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি জান্নাত-উল -ফেরদ্দৌস।প্রভাষক, পদার্থবিজ্ঞান, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ। স্বামী সহকারী অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞান কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ। এক মেয়ে ও এক ছেলে। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করছি। আমার পেইজ jannat online shopping

শিক্ষকতার পাশে উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনা কিভাবে?

করোনাকালীন সময়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে থাকি কিছু একটা করার চিন্তা করি।আমি রান্না খুব ভালো পারি প্রথমে ভেবেছিলাম হোম মেড খাবার নিয়ে কাজ করবো কিন্তু আমার প্রফেশনের সাথে যায় না। কারণ রাস্তাঘাটে সব জায়গায় আমার ছাত্রছাত্রী। এখানে বিশেষ একটা কথা না বললেই না সেটা হচ্ছে আমার নানা যুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ায় প্রথম কাপড়ের দোকান করেছিলেন। আর আমার বাবারও কাপড়ের দোকান ছিল আমার আম্মা সব সময় আব্বুর পাশে থেকে সাহায্য করেছেন। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি কখনো ভাবিনি আমি সেই কাপড় নিয়ে কাজ করবো।আমি অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে ভালো বুঝতাম না।ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজ থেকে নারীদের অগ্রগতি জানতে পারি। এবং আমি খুব উৎসাহিত হই।

আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে মূল কারণ দুইটা।

১ / আমার বান্ধবী সে একজন উদ্যোক্তা এবং সে আমাকে মানসিক ভাবে খুব সাহায্য করেছে।

২/ আমি আগেই বলেছি আমার বাবার কাপড়ের দোকান ছিল এবং খুব নাম করা। বিশেষ কারণে আব্বু দোকানটা মামাকে দান করে। মনের মধ্যে অনেক কষ্ট জমে যায় আর সেই কষ্ট থেকেই কাপড় নিয়ে কাজ করার কথা ভাবতে থাকি। আল্লাহ আমার সহায় হয়ে সেই সুযোগ তৈরি করে দেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরু এর কাজ গুলো জানতে চাইব?আর কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

শুরুতে আমি কিছু নারীর খোঁজ পাই যাদের দিয়ে হাতের কাজ শুরু করি। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৩ হাজার টাকা ইনভেস্ট করি।সেই সাথে আমি কিছু নারীকে পাশে রাখি রিসেলার হিসাবে। আমি ফুলকারি কাঁথা, ফুলকারি থ্রি পিস,মেয়েদের কোটি , ব্লক ও বাটিকের বিছানার চাদর, ব্লক ও বাটিকের থ্রি পিস ও বাটিকের শাড়ি নিয়ে। আমার ফুলকারি একটা কাঁথা তুলতে দশ জন কর্মীর প্রায় দের মাস সময় লাগে। সেই সাথে ফুলকারি থ্রি পিস তুলতেও এক জন কর্মীর এক মাস সময় লাগে।

আপনার প্রতিষ্ঠানে এখন কতজন কর্মী আছে?

আমার প্রায় ৫০ জন কর্মী আছে। এই করোনার সময় আমার তের জন কর্মীর করোনা হয়েছিল। আমি সেই সব নারীদের নিয়ে কাজ করি যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

উদ্দোক্তা হতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না এবং সবচেয়ে বেশি কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে প্রথম বাঁধা আমি শিক্ষক কিভাবে কি করবো, মানুষ কি বলবে? অনেকের প্রশ্ন আপনার বিক্রি হচ্ছে? কত লাভ করছেন? আপনি দোকান নিলেইতো পারেন। আপা দাম বেশি। আবার কিছু মানুষ আছে আমি কাজ করছি এটাই তাদের পছন্দ না।সাপোর্ট পরিবার থেকেই পেয়েছি এবং সার্বক্ষণিক ভাবে যিনি আমাকে সহযোগিতা করছে তিনি আমার হাসবেন্ড। তার সহযোগিতা ছাড়া আমি চাকুরী ও বিজনেস কোনটাই করতে পারতাম না। তিনি আমাকে অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে এতো দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমার ইচ্ছা ও তার সহযোগিতা আজকের আমি। এছাড়াও আমার বড়ো প্লাটফরটাকের SSC 2000 & HSC 2002( আমরাই কিংবদন্তি) এটা আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ। যেখানে আমি Dashboard Challenge of Risk Taker

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

ভবিষ্যত পরিকল্পনা পাঞ্জাবির উপর হাতের কাজ ও ব্লক বাটিক করা ও সেই সাথে মেয়েদের ম্যাক্সি তৈরি করতে চাই। আমি যে কাজে হাত দিয়েছি সেটাই বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করতে চাই। এবং অনলাইনে নিজের একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাই। আমি আল্লাহর উপর ভরষা করে এগিয়ে যাচ্ছি। করোনা না হলে বুঝতে পারতাম না মেয়েরা অনেক কিছু পারে।আমি মাঝে মাঝে ভয় পাই যদি সেল না হয়। আমি পিছিয়ে যাওয়া মানে এই এই সব নারী কর্মীদের পিছিয়ে যাওয়া। আমি তাদের স্যালুট জানাই।আমি পিছিয়ে যাওয়া মানে আমার রিসেলার যারা পিছিয়ে যাওয়া কারণ তারা প্রোডাক্ট বিক্রি করার পর টাকা দেয়। আর এই সুযোগ আজকাল কেউ দেয়না এবং তাদের কোন পুঁজি লাগে না।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।