শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা-জান্নাতুল ফেরদৌস

 শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা-জান্নাতুল ফেরদৌস

জান্নাতুল ফেরদৌস পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্স অনার্সসহ মাস্টার্স করেছেন,২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা মর্ডান কলেজ শিক্ষকতা করছেন। তাঁরপর ২০১৩ থেকে ২০১৮ আহসানিয়া মিশন এ উপদেষ্টা এবং বাঙলা কলেজে গেষ্ট টিচার ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তিনি শুধু একজন শিক্ষক নয় তার পরিচয় একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তিনি গড়ে তুলেছেন –সুতা কথন -Shutakathon।

কিভাবে আপনার উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু ?

লকডাউন এর শুরুতে আশেপাশে মানুষের ক্ষুধার আর্তচিৎকারে আমি এবং আমার পরিবার শঙ্কিত হয়ে পড়ি। তখন মাথায় চিন্তা আসে তাদেরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়।তখন যশোরের নাজমা আপু সহ১০ জন নারী কর্মীকে নিয়ে কাজ শুরু করি। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৮০ জন শ্রমিক নকশি নিয়ে কাজ করছে।

গত ছয় মাসে আমার সেল হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পারিবারিক প্রতিকূলতা, মাঝে করোনা আক্রান্ত হওয়া , তারপরও আমি থেমে থাকিনি।এই পথ যাত্রা অভ্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আপনি কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

আমি দেশের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবার লক্ষ্যে দেশীয় ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নকশি কাঁথা আমার সিগনেচার পণ্য। তাছাড়া দেশীয় পোশাক ব্লক বাটিক, তাঁত শিল্পের উপর অন্য রকম একটা অনুভূতি। সময় পেলেই এ সব নিয়ে কিছু না কিছু করতে পছন্দ করি।এবং ভবিষ্যতে আরো নিত্য নতুন দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।

আপনি কি কি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছেন?

আমার উদ্যোগটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি বর্তমানে নারী উদ্যোক্তা সংগঠনটির সাথে যুক্ত আছি। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেলায় আমি অংশ গ্ৰহন করেছি । ই- ক্যাব এর প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার পণ্য দেখে চমৎকারভাবে প্রশংসা করেছেন এ পণ্যের দায়িত্ব নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এটি আমার জন্য অনেক বড় একটি পাওয়া।

তাছাড়া ছোট বেলা থেকে বেশ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে আসছি।আমি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পাঞ্জেরী এবং জুপিটার পাবলিকেশন্স এ লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলাম।১৯৯৯ সালে WHO এ WFP এর অর্গানাইজার ম্যানেজার হিসেবে ছিলাম। এবং ২০০৪ থেকে ২০১০ সালে BIOSএ গনিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম ইডেন কলেজের এক্স প্রিন্সিপাল ডক্টর রওশনারা রশিদ ও ডঃ জাফর ইকবাল স্যারের বায়োস নামক প্রতিষ্ঠানটিতে।

আপনি কোন মানবিক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন?

২০০৪ সাল থেকে ,২০১৮ পর্যন্ত গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনায় সহায়তা করার চেষ্টা করেছি, বাড়ি ভাড়া করে, যাদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, তাদেরকে ১০নং দক্ষিণ বিশিল মিরপুর -১ এ ভাড়া করে পড়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে নোবল স্কুল এন্ড কলেজ ও ঢাকা মর্ডান কলেজএর নামে তাদের এস এস সি ও আগারগা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম ।আলহামদুলিল্লাহ আপাতত এখন ০৯ জন এতিম শিশু ও দুইজন গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আর ও দুইজন কে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো বিধবা ,স্বামী পরিত্যাক্তা, অসহায় ও বেকার নারীদের সামাজিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে কাজে লাগিয়ে , পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা। তাছাড়া উদ্যোক্তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তোলার একটি প্রয়াস বহুদিনের ।এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চাই।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

RedLive

Related post