সখের বসে নয় সংসারের,হাল ধরতেই তিনি একজন উদ্যোক্তা

 সখের বসে নয় সংসারের,হাল ধরতেই তিনি একজন উদ্যোক্তা

এই তো কয়েক দশক আগে কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই আধুনিক যোগ আর স্মার্ট ফোন এর মাধ্যমে। এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। এবং সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। তেমন একজন সফল নারী উদ্যোক্তার জাহানারা চৌধুরী লেনডেনার সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন টাঙ্গাইল জেলার প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান

শুরুতে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই!

আমি জাহানারা চৌধুরী লেনডেনা। আমি একজন নারী উদ্যোক্তা,সাথে একজন গৃহিনী, একজন মাও। কে না চায় তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তবে নারী হিসেবে তা করাটা একটু কষ্টকর। একটি আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলা একটি নারীর জীবনের সবথেকে বড় পাওয়া। আর আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ আমি আমার নিজের পায় দাঁড়িয়ে আছি এবং আত্মকর্মসংস্থান নিজেই গড়ে তুলেছি। প্রতিষ্ঠা করেছি “Landena Outfits ” নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

আমি উত্তরা উইমেন্স কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করে বের হই। পড়ালেখা শেষে সর্বপ্রথম ইচ্ছে ছিল নিজের একটি আত্মকর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল খুব অল্প বয়সেই। তাই যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম তার আলো খুব কমই প্রসারিত হয়েছিল। তবে সে অন্ধকার চিরে আজ আমি বের হব তা আমার জন্য অনেক বড় কিছু।

উদ্যোক্তা হওয়ার কেন ইচ্ছে হলো এবং এর পিছনের কারন কি?

বিয়েটা অল্প বয়সে হয়ে যায় এবং অল্প বয়সে ঘাড়ে প্রচুর দায়িত্ব চলে আসায় অনেক স্বপ্ন আশা ভেঙ্গে দিতে হয়েছে। তবে ছোট থেকে খুব শখ ছিল নিজে থেকে কিছু করে বড় হব। কিন্তু পরিবারের হস্তক্ষেপের জন্য তা কখনোই হয়ে উঠেনি। পাঁচ বছর আগের ঘটনা, আমার স্বামীর কাজকর্ম হঠাৎ খুব মন্দ চলতে শুরু করে, তখন সংসার এক রকমের হিমশিম শুরু হয়। তখন কি করা যায় কিভাবে শুরু করা যায় সবকিছু তা আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একদিন হঠাৎ আমার স্বামী ইন্ডিয়া থেকে খুব পরিমাণে কিছু পণ্য কিনে নিয়ে আসে। আমি সেগুলো দেখে ভেবে উঠতে পারিনি সেগুলো কিভাবে আমি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিব। সেসময় অফলাইনে কাজ করাটা ছিল খুব কষ্টদায়ক। আমি যেহেতু একটু ধার্মিক ঘরের মেয়ে আমার পক্ষে বাহিরে বাহিরে গিয়ে সে জিনিসগুলো ছড়িয়ে দেয়া ছিল কষ্টকর। তারপর নিজস্ব শোরুম খুলি। সেখান থেকেই শুরু হয় আমার এই যাত্রা।

তারপর করোনাকালীন সময়ে উইতে আমি প্রচুর পরিমাণে একটিভ থাকা শুরু করি। এখান থেকেই আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হওয়া শুরু।তখন থেকেই শুরু হয় আমার অনলাইন যাত্রা এভাবেই আমি এখন একটি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেছি।

আপনি কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন?

আমি কাজ করছি দেশীয় পণ্য (কুশন কভার, হাফ সিল্ক জামদানি শাড়ি, খাদি পাঞ্জাবি, কুমিল্লার বাটিক চাদর, কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি,হাতের কাজের থ্রি পিস ইত্যাদি) নিয়ে। তুলনামূলক এর গুনগতমান অনেক ভালো।আমার সিগনেচার পণ্য হলো মশারির কভার।কুমিল্লা খাদি পাঞ্জাবি। এছাড়া আমি যে হাফ সিল্ক জামদানি শাড়ি সেল দিচ্ছি তা সরাসরি তাঁত থেকে তৈরি করা হচ্ছে। তাছাড়াও রাজশাহী সিল্ক শাড়ি এবং পাঞ্জাবি নিয়েও কাজ করছি। বাংলাদেশের প্রায় সকল জায়গাতেই আমার পণ্য সরবরাহ রয়েছে। এছাড়াও বহিরা দেশেও আমি পণ্য দিয়ে থাকি। আমি আগেও দেশীয় বা পণ্য নিয়ে কাজ করতাম। তবে উইতে আসার পর থেকে। পণ্য শুধু দেখতেই সুন্দর হলে হয়না, তার গুণগতমান হওয়া লাগে ভালো।যা আমি আমার আদেশ এবং দায়িত্ব হিসেবে পালন করে থাকি।

ছবিতে:”Landena Outfits এর প্রোডাক্ট সমূহ।

উদ্যোক্তা হতে গিয়ে কোন ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এবং সবচেয়ে কার সাপোর্ট পেয়েছেন বেশি?

উদ্যাক্তা হতে সবচেয়ে বেশি বাঁধা ছিলো আমার আসে পাশের লোকজনের মানুষের অনেক বাজে কথা সহ্য করতে হয়েছে ।আমার শোরুমে একদিন আমার মামার বাড়ির লোক এসে বললো তুমি কোন ফ্যামিলির মেয়ে তারপরও দোকানে বসো তোমার ফ্যামিলি বদনাম হবে না।ঘড়ে বসে কাজ করো ।বাচ্চাদের দেখো।আমি কিছু বলতে পারলাম না চুপ করে তাকিয়ে থাকলাম। আর মনে মনে বললাম মানুষের চিন্তা ভাবনা এমন কেন আমার বাবার বাড়ির এলাকায় বলা যেতো না আমি যে একজন উদ্যোক্তা।কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার স্বামীর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পাশাপাশি আমার বাবার।আমার বাবা বলো মা ব্যবসা করলে আগে ফ্যামিলি থেকে ব্যবসা করতে হবে।আজ আমরা বাবা বেচেঁ নাই।তাই একজন সাপোর্টার আমার থেকে দূরে সরে গেল।

আপনার উদ্যোগটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

আমার পরিকল্পনা আমি খুব ভালো একজন উদ্যোক্তা হব আমার পন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিব এবং সততার সাথে বিশ্বতত্ত্বের সাথে কাজ করব।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।