সুইসাইডাল টেনডেন্সি কি মানসিক রোগ ?

 সুইসাইডাল টেনডেন্সি কি মানসিক রোগ ?

Image Source: posterfortomorrow.org

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন আপনার প্রিয় মানুষটা আর নেই। সারাদিন কাজকর্ম শেষে সবেমাত্র এলেন, জানলেন আপনার আপনজন নেই। কেমন লাগবে বলুন তো? নিজের মধ্যে অপরাধবোধ নাকি সেই মানুষটার জন্য কষ্ট অনুভব হবে? বর্তমানে তরুণ কিংবা শিশু এমনকি বয়স্ক মানুষের মাঝে মাত্রাতিরিক্ত দেখা দিয়েছে সুইসাইডাল টেনডেন্সি।

সমস্যা যখন বেড়ে যায় তখন সেটা নিজেকে হননের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। নির্দিষ্ট করে কারণ বলাটা মুশকিল তবে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতিরিক্ত ব্যস্ততার জন্য আপনজনকে সময় না দেওয়া, সোশ্যাল মাধ্যম তো দায়ী রয়েছেই, তরুণদের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদেরকে সঠিকভাবে না বোঝা।

সুইসাইডাল টেনডেন্সি কী

যখন কারো মনে হয় এই জীবন রেখে আর কী লাভ! জীবনের অর্থ, উদ্দেশ্য তার কাছে হারিয়ে যায় তখন সে বার বার নিজেকে শেষ করে দিতে চায়।আত্নহনন তার কাছে মনে হয় একমাত্র মুক্তির পথ।

Image Source: freepik.com

বয়সের সীমানা

সাধারণত টিনএজ (১৫-২০) ও পরিপূর্ণ বয়স (২০-৪০) বছর বয়সের মাঝে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু ইদানীং যে কোন বয়সের মানুষ এই সমস্যায় ভোগে।

কারণসমূহ

অবাক করা ব্যাপার এই একবিংশ শতাব্দীতে কোন ৭-১০ বছরের বাচ্চারাও নিজেদের জীবনকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে। অথচ তাদের জীবনের শুরুটাই তখনও হয়না। বাবা মায়েরা অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। তাদের খুনসুটি, আবদারগুলোও অপূর্ণ থেকে যায়।

আবার বাবা মার ঝগড়া বড় একটা কারণ এই সমস্যার। তারা মনে করে আমিই দায়ী মনোমালিন্য সম্পর্কের জন্য।কারও সাথে তাদের ছোট্ট মনের ছোট্ট কষ্টগুলো বলতে না পারার দরুন নিজেদেরকে একা মনে হয়। ঘরের কোণে কিংবা স্কুলের করিডরে, জানালায় বিশাল আকাশের দিকে চেয়ে ভাবে “আমি না থাকলেই ভালো হত।”

টিনএজ বয়সে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানসিক পরিবর্তনও হয়ে থাকে।আচমকা এই পরিবর্তনের কারণে ছটফটে ছেলে বা মেয়েটা শান্ত স্বভাবে কিংবা শান্ত ছেলে বা মেয়েটা হঠাৎ বাচাল বা দুরন্ত প্রকৃতির হয়ে যায়।পরিবারের সদস্যরা আচমকা এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেন না অনেকে।

Image Source: freepik.com

কারণে অকারণে বলে ফেলেন কটু কথা।আজ আমরা এতটাই ব্যস্ত যে আমাদের হাতে তাদের জন্য কোন সময় নেই।বড় বড় শখ, আহ্লাদগুলো শুরু হতে থাকে এই বয়সে।চাহিদা পূরণ না হলে ভাবে সে এখন সবার চোখের বালি।জীবনটাকে শেষ করে দেওয়াই ভালো!

আঘাত পেলে ভাবে তার কথা শোনার মত সময় কারো নেই। সবার বড্ড তাড়া। ভাবে, সে বড্ড একা। তার জন্য কেউ নেই। কেউ তো তাকে তার মতো করে বুঝবে না। বন্ধু বান্ধবীরাও টিটকারি মারবে।

একজন পরিপূর্ণ মানুষ যখন জীবনে প্রাপ্ত জিনিসটি না পায় বা তার স্বপ্নগুলো যখন ভেঙে যায় তখন সে ভাবে জীবনটাকে রেখে কি লাভ! আমাদের সমাজে একজন মানুষের পরিচয় হয় তার বাহ্যিক পরিচয় দেখে। ভালো চাকরি, ভালো বিয়ে, ইনকাম, বাড়ি মানেই একজন মানুষ সফল।

সফলতার মানে সমাজ বোঝে না যে সেটা, যেটা তার মনকে শ্রান্ত অবস্থায় রাখবে। তাকে ব্যর্থতার কথা মনে করিয়ে দিবেনা। কিংবা ব্যর্থ হলেও সেটাকো সে হাসিমুখে মেনে নিবে। এই বয়সের মহিলা, পুরুষ যখন তাদের কাছের মানুষদের চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তখন তার প্রচন্ড রকমের  নিরাশা ভর করে।

নিজের মনের ইচ্ছা, কষ্টগুলো যখন অব্যক্ত রয়ে যায় তখন মনে হয় জীবনের ইতিটা বড্ড জরুরি। বয়স্ক মানুষগুলো এত এত সোশ্যাল মিডিয়ার মাঝে হারিয়ে ফেলছে সঙ্গতি। জুড়ে বসে একাকীত্ব আর সেখান থেকেই চলে আসে আর কতদিন!

এই ব্যাধি থেকে পরিত্রানেরসমাধান

  • ছোট বাচ্চাদের সময় যথেষ্ট দিতে হবে, সমবয়সীদের সাথে খেলতে দিতে হবে।
  • টিনএজদের মানসিক পরিবর্তনকে স্বাভাবিক চোখে দেখতে হবে।
  • তাদেরকে তাদের মতো করে বুঝতে হবে।তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে হবে।
  • খারাপ রেজাল্ট করলেও বোঝাতে হবে রেজাল্ট মানেই জীবন নয়।
  • অন্য কারো সাথে তুলনা একদমই করা যাবেনা।বলা যাবেনা, তোমার দ্বারা কখনই কিছু সম্ভব নয়, তোমাকে ওই ব্যক্তির মতে হতে হবে। বরং তাকে বলবেন, তুমি তোমার মতো হও, আমরা আছি তোমার পাশে। তোমার দ্বারাই সম্ভব।জীবনটা এখন ও অনেক পড়ে রয়েছে।ব্যর্থতা আমাদের জীবনের এক অংশ।
  • কেউ কেউ বলেন তুমি ভালো খাও, ভালো পড়ো তারপরও ন্যাকামো করো কেন? বাইরে যাও গিয়ে কত লোক কষ্টে আছে।এ ধরনের মানুষের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকবেন।চেষ্টা করবেন তাকে সময় দিয়ে বলার, চলো আজ আমরা একসাথে মানুষের কষ্ট দেখি।
  • কাউন্সিলিং করানোকে এখনও বাবা মায়েরা ও চাকরিজীবিরা  মনে করেন বাড়তি সময় নষ্ট।কিন্তু জীবনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা, কাউকে নিজের কথাগুলো খোলাখুলিভাবে বলতে পারাটাও আমাদের থেকে হতাশা, একাকীত্ব দূরে রাখে।
  • এটাও খেয়াল করবেন যাদের মধ্যে এই টেনডেন্সি মাত্রাতিরিক্ত তারা যেন নিয়মিত কাউন্সিলিং ও ওষুধের মাধ্যমে নিজেকে সারিয়ে তোলে। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ অবশ্যই বর্জন করবেন।
  • পরিবারের সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে যাওয়া কিংবা সপ্তাহিক ছুটিগুলোতে একত্রিত হওয়াটা আমাদেরকে নিরাশা থেকে দূরে রাখে।

সর্বোপরি সুইসাইড টেনডেন্সি থেকে মুক্ত হতে নিজের ভালো লাগা না লাগাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।লোকের কথায় মনোযোগ দেওয়াটা এড়িয়ে যাবেন।মনের পাতায়,

“Life has become meaningless” নয় বরং বলুন ” Life is beautiful even with shortcomings. “

লেখকঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post