আয়ের যে উৎস গুলোতে পারদর্শিতা থাকলে ঘুমে থেকেও আপনার আয় বাড়বে

 আয়ের যে উৎস গুলোতে পারদর্শিতা থাকলে ঘুমে থেকেও আপনার আয়  বাড়বে

গতানুগতিক ধারায় সপ্তাহের পাঁচদিন নয় ঘন্টা ধরে কাজ করার দিন এখন আর নেই। বরং মানুষ চায় নিজের মতে করে তার কাজের পেছনে সময় দিতে। এখন আর আগের মতো সবসময় বসের নজরদারির ভয় সবাই করে না। অনেকেই নিজের জগতে নিজের মতো করে কাজ করতে চায়। কিছুদিন আগেও সেটা স্বপ্ন হলেও আজকে তা বাস্তবে পূরণ করা যাবে সহজেই। কারণ তরুণেরা প্রমাণ করেছে অর্থনীতির চাকাটি গতিশীল বলে কেউ তাদের কাজের সময়কে নিজের মতো করে নিতে পারবেন এবং অনেক লাভবান হবেন স্বল্প বিনিয়োগে।

১. ব্লগিং:

বর্তমানের ফ্রিলান্সিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম ব্লগিং! এটি শুরু করতে খুব বেশি অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন হয়না। দরকার, শুধু সৃজনশীলতা। আর তাই শুরুতে যে বিষয়ে আপনি বেশ ভালো করে জানেন, সেটা নিয়েই ব্লগিং শুরু করে দিন। প্রথমে সারাদিন না হলেও একটু সময় এর পেছনে খরচ করতেই হবে। এভাবে আপনি দারুণ সব কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। পরবর্তী ধাপে একটি সার্ভার কিনতে হবে যেটার মাধ্যমে আপনার সব ধরনের লেখা পাবলিশ হবে। ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress), উইক্স (Wix), উইবলি( Weebly), টাইপপ্যাড (Typepad) নামক কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি কিছু শর্ত মেনে নিজের পেইজ নিজের মতো করে তৈরি করতে পারবেন। ব্লগিং এর ক্ষেত্রে ভালো অর্থ পেতে হলে কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

দর্শকদের চাহিদা : ব্লগিং এ জনপ্রিয় হতে হলে দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী সব ব্লগ তৈরি করবেন। যেমন আপনি যদি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন তাহলে পুরনো সমস্যাগুলোকে নয় বরং বর্তমানে যেসব সমস্যায় সবাই ভুগছে সেসব নিয়ে বেশি লেখালেখি করতে হবে।

স্পনসর : আপনাকে স্পনসর হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে যেসব ম্যাগাজিন গুরুত্ব দেয় তাদেরকে বেছে নিবেন। এতে করে আপনার জনপ্রিয়তার শীর্ষ আপনার কাছে সহজেই ধরা দিবে।

ইউজার ফ্রেন্ডলি পেইজ : আপনার কাস্টমার কখনো যেন আপনার পেইজে এসে বিভ্রান্তি না হয়। তার জন্য আপনার ব্লগগুলো গুছানো ও অ্যাডগুলো নিজের ভাষায় হতে হবে।

অন্য ব্লগারদের সুযোগ : কোন ব্লগার যদি তার লেখা পাবলিশ এর জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করে তাহলে আপনার আয়ের পরিমান বেড়ে গেলো এবং আরেকটি উপায় হলো।

২. উদ্যোক্তা:

এই কাজটি করতে হলে আপনাকে প্রথম প্রথম কিছু নেগেটিভ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। কিন্তু আপনি যখন শুরু করবেন এবং আপনার শুরু করা ছোট্ট বিজনেস যখন বড় হবে তখন দেখবেন নিজের কাছেই ভালো লাগবে। নিজের কিছুটা সময় এর পেছনে দিলে এবং বিনিয়োগ ও খুব বেশি যে করতে হয় তা নয়। একজন স্টুডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন ভলান্টিয়ার, টিউশন, স্টেইজ পারফরম্যান্স এর মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকাটুকু দিয়েও শুরু করতে পারবেন। আমাদের চারপাশে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, আমাদের পরিচিতজনেরাই কেউ বই এর কেনা-বেচা, অর্নামেন্টস, ন্যাচারাল প্রোডাক্ট আবার কেউ কেউ রান্নায় পারদর্শী দেখে নিজেরাই বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করে ডেলিভারি করে থাকে। যাদের শুরুটা ছোট হলেও আজ তারা অনেক বড় উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখিয়েছে।

৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও গ্রাফিক্স ডিজাইন :

যুবসমাজ এই দুটো কাজের দিকে এত বেশি ঝুঁকছে যে, কোন প্রতিষ্ঠান বা ভিডিও বা অনলাইনের মাধ্যমে তারা কাজ শিখে ওয়েব এবং গ্রাফিক্স তৈরি করে সেগুলোকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে। এমনকি তারা নিজেরাও আপওয়ার্ক (Upwork) ও ফিবার ( Fiverr) এর মতো ওয়েবসাইটগুলোতে নিজেদের কাজগুলোকে তুলে ধরার জন্য পেইজ তৈরি করছে।

৪. লোন প্রদানকারক:

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আছে যেখানে আপনার অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে লোন প্রদানকারী হিসেবে কাজ করতে পারেন। তারা আপনার প্রদানের চেয়েও দ্বিগুণ অর্থ দিবে, সুদ হিসেবে। ২০১৬ সালে লেন্ডিংক্লাবের জন্য গড় সুদের হার ছিল প্রায় ১২ শতাংশ, সুদ প্রদানের ৩০০ ডলার মিলিয়নেরও বেশি পেয়েছিল। এ ধরনের কার্যক্রমকে নিজেদের মধ্যে লোনের ব্যবস্থা (পিয়ার টু পিয়ার লোন) বলা হয়। কারণ ব্যাংক থেকে যখন কেউ লোন নিতে চায় তখন অনেক প্রেশার এ থাকে কখন টাকাটা পরিশোধ করবে! সেখানে আপনার অতিরিক্ত আয় থেকে কাউকে যথেষ্ট সময় দিতে সাহায্য করলেন।

৫. ক্রাউডফান্ডিং :

আপনার স্টার্টআপ শুরুর সময় চিন্তা করছেন দুশ্চিন্তা ও ক্ষতি ছাড়া কোথায় থেকে টাকা নিবেন। তার জন্য ক্রাউডফান্ডিংকে বেছে নিচ্ছে তরুণ সমাজ। এতে আপনার পণ্যের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবেনা কারণ অর্ডার নেওয়ার পরেই আপনি পণ্য তৈরি করতে পারবেন। তাছাড়াও একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পর যে ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হয় তা থেকে মুক্তি পাবেন। পূঁজির জন্য আপনাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবেনা। আপনার প্রতিষ্ঠান বড় করার ক্ষেত্রেও ক্রাউডফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ এখানে কিছু পরিচিত মানুষের দ্বারা আপনার কোম্পানি বড় এবং সবার কাছে বেশ সুখ্যাতি পাবে।

আপনার অর্থ থাকুক বা না থাকুক! আপনার ইচ্ছেশক্তি আর খানিকটা সময় দিয়েই আপনি চাইলে উপরের যে কোন একটা কাজ শুরু করে দিতে পারেন। যখন আপনি শুরু করবেন, দেখবেন, নতুন কিছু আপনি নিজেই তৈরি করে ফেলেছেন। এসব কাজের ক্ষেত্রে আপনার গতানুগতিক ধারার মধ্যেও যেতে হচ্ছেনা।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post