এরিয়া ৫১-এলিয়েন কি সত্যিই আসে?

 এরিয়া ৫১-এলিয়েন কি সত্যিই আসে?

পৃথিবীর বাইরে কি সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে? এই একটি প্রশ্ন নিয়ে আগ্রহ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আনয়াইডেন্টিফাইং ফ্লাইং অবজেক্ট বা এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রতিনিয়তই রহস্য বেড়েই চলেছে। তবে পৃথিবীতে এমনও একটি জায়গা আছে, অনেক মানুষের মতে যেখানে তারা ইউএফও দেখেছেন। জায়গাটির নাম এরিয়া ৫১।

সাধারন ভাবে Area 51 মানচিত্রের একটি অবস্থানকেই বোঝায়। তবে এইক্ষেত্রে এরিয়া ৫১ ইউনাইটেড স্টেটস এর বিমানবাহিনীর ঘাঁটির একটি জনপ্রিয় নাম। ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি “প্রোজেক্ট একুয়াটোন” নামের একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করার জন্য গ্রুম লেক টেস্ট ফ্যাসিলিটি প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে এই এলাকার নাম হয় এরিয়া ৫১।কিন্তু ২০১৩ সালের আগে জনসাধারনের সামনে এরিয়া ৫১ এর নাম কখনো উল্লেখ করা হয়নি। তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাই প্রথম এই নামটিকে প্রকাশ্যে আনেন। এই নামকরনের কারণ নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে।

যদিও ওই এরিয়াকে কখনোই অতিমাত্রায় সংরক্ষনশীল এলাকা হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয়নি কিন্তু এরিয়ার ভেতরে কি হয়, সেটি সাধারণ মানুষ থেকে সম্পূর্ণ গোপনীয় রাখা হয়। এমনকি কোনো বিমানকেও এরিয়া-৫১ এর ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না।

ইউনাইটেড স্টেটস এয়ারফোর্স সবসময়ই দাবি করেছে, এরিয়া-৫১ একটি উন্মুক্ত ট্রেনিং এর জায়গা। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষনীয় এয়ারক্রাফট এবং অস্ত্রশস্ত্রের বিভিন্ন টেস্ট বা উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয় এখানে। একমাত্র স্যাটেলাইট থেকেই এরিয়া ৫১ এর ভেতর দেখা যায়।

এত বেশি কড়াকড়ির কারনেই সাধারণ মানুষের মনে এরিয়া-৫১ নিয়ে রহস্যময় চিন্তার উদ্ভব হয়েছে অনেক আগেই। ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্রজয় অভিযান নিয়ে যাদের মনে তীব্র সন্দেহ রয়েছে, তাদের কারো কারো মতে এরিয়া-৫১ এর ভেতরই রয়েছে চন্দ্রজয়ের সেই সেট আপ। অর্থাৎ তারা মনে করেন,অতি সংরক্ষণশীল এরিয়া ৫১ এর মধ্যেই গোপনীয় সেট আপ বানিয়ে তোলা হয়েছিল চন্দ্র অভিযানের ছবি।

তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রহস্য হল এলিয়েন এবং ইউএফও। এই জায়গাকে ঘিরে রয়েছে ফ্লাইং সসার কিংবা অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন জীবের গল্প। অসংখ্য মানুষ যারা ইউএফও তে বিশ্বাস করেন,তাদের মতে, এরিয়া ৫১ এর ভেতর ধ্বংসপ্রাপ্ত ইউএফও এবং এলিয়েন নিয়ে গবেষনা করা হয়। কারো কারো মতে সংরক্ষনশীল এই এলাকার ভেতরে টাইম ট্রাভেল নিয়ে গবেষনা করা হয় যাতে সাহায্য করে খোদ এলিয়েনরাই। মানুষের এই ধারনা আরো উস্কে দেন রবার্ট লাজার নামের এক ব্যক্তি। ১৯৮৯ সালে লাস ভেগাসের রেডিও স্টেশনে দেয়া এক ইন্টারভিউতে তিনি বলেন, “তিনি এরিয়া -৫১ এর ভেতরে কাজ করেছেন। তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে এর ভেতরে বিভিন্ন গোপন বহির্জাগতিক ক্রিয়াকলাপ ঘটে। তিনি দাবি করেন,এটি এমন একটি জায়গা,যেখানে বহির্জাগতিক বিষয় নিয়ে গবেষনা করা হয়।”

তবে ইউনাইটেড স্টেটস বিমানবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, ওই এলাকায় বিভিন্ন এয়ারক্রাফট বা বিমান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন অতি আধুনিক টেকনোলজি সমৃদ্ধ এই সব বিমান সাধারণ মানুষ সচরাচর দেখতে পায় না, ফলে প্রথম দেখায় এইসব বিমান বা এয়ারক্র‍্যাফটকে ইউএফও এর মতো লাগাটাই স্বাভাবিক। আবার নিরাপত্তার জন্য, এরিয়া ৫১ এ কারো যাতায়াতও নিষিদ্ধ। তাই, সাধারন মানুষের উর্বর কল্পনাই এলিয়েন থিওরি সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু কিছু অমীমাংসিত রহস্যের মতো এরিয়া ৫১ এর এই রহস্যটিও কুয়াশাতেই ঢেকে আছে,যার উত্তর জানে, শুধু মাত্র গুটিকয়েক দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষ।

লিখেছেন : অনন্যা চক্রবর্তী 

Brinty Saha

Related post