এ. পি .জে. আব্দুল কালাম এর অমৃত বাণী

 এ. পি .জে. আব্দুল কালাম এর অমৃত বাণী

হাঁসি যেন তার মুখে লেগেই আছে, সবসময়, সবখানে। জনসাধারণের মাঝে একাত্ম হয়ে যান, কোন রাগ, অহংকার, উচ্চ আকাঙ্খার স্হান যেন তার হৃদয়ে নেই। কোন পদে তাকে ভূষিত করা যায়না, বিজ্ঞানী, লেখক, রাষ্টপতি,সমাজবিদ, অধ্যাপক কতশত অর্জন তার জীবনে। নিরহংকারী, নির্ভেজাল, জ্ঞানী এই মানুষটির নাম এ.পি.জে আব্দুল কালাম

এ.পি.জে আব্দুল কালাম ভারতের মাদ্রাজের রামেশ্বরম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও দারিদ্র্যতার কাছে মাথা নত করেন নি। জীবনের নানা প্রতিকূলতা তাকে করেছে বিনয়ী, নির্ভীক মানব। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেও তার অমর বাণী ও কাজের মধ্যে দিয়ে বেঁচে আছেন।

#১.” তিনজনই পারেন একটি দেশ ও জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন বাবা, মা ও শিক্ষক”

-এক একটা সন্তানের হাতে এক একটি ভবিষ্যত কারণ যে কোন মানুষ পারে একটি সমাজকে বদলাতে। সমাজ দেশের একটি অংশ। আর সেই শিশুটি প্রথমে যার সংস্পর্শে আসে সে হলো মা, বাবা এবং সবশেষে শিক্ষক। তাই তাদের দায়িত্ব তাদের সন্তানকে ন্যায় -অন্যায়ের মূল্যবোধে তৈরি করা।

#২. “জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যের এত আনন্দ আছে”

-দীর্ঘদিন সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার পর যে সাফল্য আসে তা ছোট কিংবা বড় হোক সেটার মূল্য কখনোই শেষ হয়না। 

#৩. “যে হৃদয় দিয়ে কাজ করেনা, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করেনা”

-সমাজ বা পরিবারের চাপে আমরা অনেক সময় আমরা নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলেও সাফল্য আসেনা। আবার সাফল্য আসলেও মনের মধ্যে অভাব অনুভব করে থাকি। অভাবের তাড়নায় মানসিক অশান্তিতে ভুগি আমরা। তাই নিজের মন কি বলে সেটা শুনুন, জানুন এবং সেই অনুসারে জীবনকে এগিয়ে নিন। কারণ জীবন তো একটাই।

#৪.  “স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না”

-দিনরাত স্বপ্ন দেখলাম কিন্তু সেটা ছোঁয়ার জন্য কোন কাজ করলাম না। তাহলে লাভ কি স্বপ্ন দেখে! স্বপ্ন পূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টাতেই সেটাী বাস্তব রূপ দেখা সম্ভব। 

#৫. “মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়”

-প্রায়শই আমরা কোন কাজে সফলতা না পেলে এটা সেটার, এর ওর দোষ দিয়ে থাকি। আমরা জানার চেষ্টাও করিনা যে আমাদের কোন বদঅভ্যাসের জন্যই আমরা ঠিকভাবে সাফল্যের স্পর্শ পাইনা। যে সময় চলে গেছে সেটার কথা চিন্তা না করে, অতীতের ভুলগুলোকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এ.পি.জে আব্দুল কালাম।

#৬. “তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো”

-জীবনে অনেক বিপদ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে অন্ধকারে নিজেকে গুটিয়ে নিলে চলবেনা। যতই অন্ধকার থাকুক, আলো আসবেই। তাই নিজেকে এমনভাবে তৈরি করো যাতে কোন বাধাই তোমাকে আটকাতে না পারে।

#৬. “উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে”

-স্বয়ং এ.পি.জে. আব্দুল কালাম ধর্ম, বর্ণ, কোন প্রকার ভেদাভেদ করেন নি। তিনি বলেন, মনুষ্যত্বেই কারো পরিচয় বহন করে।

#৭. “জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে”

-নিউটন, মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটসের উদাহরণ যদি বলি তাহলে তারা ক্লাসের ফাস্ট বয় কখনই ছিলেন না।

#৮. “প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন তুমি ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে”

-সাফল্যের সর্বোচ্চ শেখর না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমে থেকোনা।কারণ সাফল্য অর্জনের থেকে ধরে রাখা কঠিন, আবার সেটা নিয়ে অহংকার করলেও সেটা হাত থেকে ফসকে যেতে পারে।

 

এ.পি.জে আব্দুল কালাম

#৯.” ছাত্রজীবনে আমি বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, হয়ে গেছি রকেট বিজ্ঞানী”

-কোন স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হলে সেটা নিয়ে দুঃচিন্তা না করে সামনে এগিয়ে যাওয়া জীবনের জন্য ভালো। জীবন মাঝে মাঝে চাহিদা থেকেও বড় কিছু এনে দেয় 

#১০. “তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে। মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে”

-এক যুগ থেকে আরেক যুগের চিন্তা – ভাবনা,  সাহস অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তাদের চাহিদাকে কেউ কেউ বাড়তি ঝামেলা বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করতে পারে। তাই বলে কটু কথায় কান না দিয়ে, কারো সাহায্য ছাড়াও তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে।

#১১. প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো:

*আমি সেরা,

*আমি করতে পারি

* সৃষ্টিকর্তা সবসময় আমার সঙ্গে আছে, 

* আমি  জয়ী,

* আজ দিনটা আমার।

-এই কথাগুলো কোন কাজে সফলতার ব্যাপারে সন্দিহান হলে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা মনে মনে আওড়াবেন, দেখবেন এক ধরনের শক্তি পাবেন।

#১২. “তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখো তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে”।

-নিজের কাজকে অবহেলা করা মানে তার ফল কখনোই ভালো হয়না তা সে একজন শিক্ষার্থীই হোক বা চাকুরীজীবি। 

#১৩. “আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে, চেহারায় নয়”।

-আজকের দিনের বড় ভুল কারো বাহিরটা দেখে বিচার করা। বিপদেই বন্ধুর পরিচয় মেলে। ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে যারা পালিয়ে যায় তারা কখনোই আপন ছিলোনা, ছিলো সুবিধাবাদী।

#১৪. “সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে”

-এটা সত্যিই অসাধারণ কথা। কারো জয়ের কাহিনী শুনে কোন লাভ নেই, ব্যর্থতা জানলে নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় এবং সর্তক থাকা যায়। কারণ জয়ের গল্পগুলো ভিন্ন হলেও ব্যর্থতার গল্পগুলোর মাঝে এক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

#১৫. “জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে”।

-জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা সময়ের কাজ সময়ে যার অভাবে অনেক বড় মনীষারাও পিছিয়ে পড়েছেন জীবন থেকে। আজ নয় কাল থাক করতে করতে কখন যে সময়গুলো ফুরিয়ে যাবে টেরই পাবেনা তাই কাজগুলোকে সময়ের আবদারে ফেলে রেখোনা।

এত শত গুণাবলির মানুষটাকে তার দেশ মর্যাদা দিতে ভুলেননি। তাকে “মিসাইলম্যান অব দ্য ইন্ডিয়া ” বলা হয়। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন ভারতবাসীর অশেষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। তাঁর  বলা বাণী গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে পরিপাটি,মার্জিতভাবে গড়ে তুলতে পারি। তার এক একটি বাণী জীবনের গভীরতা থেকে বলা।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post