মহামারীর সময় ও তারপর চাকুরী পেতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা

 মহামারীর সময় ও তারপর চাকুরী পেতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা

“চাকুরি ছাঁটাই”, ব্যাপারটি হঠাৎ করেই তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। প্রতিষ্ঠান তার কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিভেদ করা শুরু করেছে অর্থনৈতিক নিম্নগতির জন্য। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই হয়ে পড়ছেন দিশেহারা, নতুন চাকরিতে জয়েন করতে পাচ্ছেন না। আবার চারিদিকেই এখন লকডাউন। সবাইকে এই লকডাউনে এমন কিছু গুণাবলির অধিকার হতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠান আপনাকে ছাঁটাই এর ক্ষেত্রে ভাববেন ও নিয়োগ দেওয়ার সময় অগ্রাধিকার দিবেন।

১. আকর্ষণীয় প্রোফাইল

নতুন কিংবা পুরোনো চাকরি খোঁজকারী যেই হোন না কেন প্রোফাইলটি গুছিয়ে, নির্ভুলভাবে তৈরি করতে হবে৷ নিজের দক্ষতাগুলোকে অভিজ্ঞতার চেয়েও শ্রেয় দিন। কোন অ্যাপসেও অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রোফাইল সতর্কতার সাথে তৈরি করবেন।

২. নেটওয়ার্ক বাড়ানো

আপনার ভার্সিটি বা স্কুল -কলেজ কিংবা আত্মীয় স্বজনদের মাঝে পরিচিত কেউ কোন প্রতিষ্ঠানে ভালো কোন অবস্থানে আছেন, তাদের সাথে বেশ ভালো যোগাযোগ স্হাপন করার সময় চলে এসেছে। এমন না যে মামা -চাচা থাকলেই চাকরি হয়ে যাবে। তাদেরকে আগে থেকে বলে রাখলে তারা সার্কুলার দেওয়ার সময় আপনাকে জানাতে পারবেন। অনেককে রেফার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. আইসিটি নিয়ে ব্যাপক জ্ঞান

বর্তমানে লকডাউনের কারণে সবায় চেষ্টা করছে ঘরে বসেই সব ধরনের কাজ করতে। তাই আদিঅন্ত সবকিছুই অনলাইনের মাধ্যমে করা শুরু হয়েছে। বর্তমানে অনলাইন সেবা যেমন শপিং, মেডিকেল ট্রিটমেন্ট, রাইডিং এর খোঁজ, লেনদেন সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা প্লাটফর্ম ও তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় যে যত বেশি আইসিটি নিয়ে জানবে তার কাজের সুযোগ ও তত বাড়বে। আগে যে কাজ অফলাইনে বা সরাসরি হতো সেটি এখন অনলাইনে হচ্ছে। যেমন আগে ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি দেখা করতে হতো কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে ভিডিও মিটিং এর মাধ্যমে। এছাড়াও রিসার্চিং ও ডাটা এনালাইসিসের ব্যাপারে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি

৪. দ্বিত্ব কাজে নিয়োগ

বর্তমানে চাকরির স্হায়ীত্ব নিয়ে আশংকা থেকে শুধু সরকারি চাকরির জন্য প্রিপারেশন নিবেন, বেসরকারি চাকরিকে বাদ দিবেন এমনটা চিন্তা করা ভুল। কারণ সরকারি চাকরিতে এত কর্মসংস্থান, উন্নতির সুযোগ নেই। এমনকি বেশ অনিয়ম হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি চাকরিকে অনেকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। মূল ব্যাপারটি হলো এখন আগের মতো এক কাজে না থেকে দুই ধরনের কাজে লেগে থাকাই শ্রেয়। যেমন চাকরির পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং, অনলাইন বিজনেস কিংবা হতে পারেন উদ্যোক্তাও। এই তো কিছুদিন আগেও বিবিসি তে একটি খবর দেখলাম, প্রায় সব পেশার ও বয়সের মানুষ ও বেকারদের পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং শুরু করে দিয়েছে। যাতে এক পথ চলে গেলে আরেক পথের সন্ধান থাকে। ব্যাপারটি আপনার কাছে হাস্যকর মনে হলেও একটু চিন্তা করে দেখবেন।

৫. খুটিনাটি জানা

যেখানে আপনি জয়েন করছেন সে ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ খবর নেওয়া। সে প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের কার্যকলাপ আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে যাতে ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে তাদের ব্যাপারে সিরিয়াস মনে হয়। আবার পরিচিত জনের মাধ্যমে আগে থেকেই খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে জানা উচিত বলে মনে করি।তাদের থেকে তাদের ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নগুলো জেনে নিলে আপনার ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।

৬. সঠিকভাবে বাছাই

এখন বিডি জবস, লিংক ইন, কর্ম এছাড়াও ফেসবুকে বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে যাদের মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত জবের ব্যাপারে খেয়াল রাখাটাও সহজ হয়ে গিয়েছে। কোন ধরনের জব আপনি চান, কেন চান, আপনার কর্মক্ষমতা সেগুলোর দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখবেন।

৭. ত্রুটি জানা

যদি এমন হয় কোন কারণবশত আপনি বাদ পড়ে গেছেন তবে সেটি দূর করার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি নতুন গ্রাজুয়েট হোন তবে আজই আপনার সীমাবদ্ধতা গুলো বের করে সেগুলো থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন।

৮. বাজার চাহিদা জানা

এইতো দুই তিন বছর আগেও কোন কাজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু গুণ থাকলেই জবটা পাওয়া সহজ হয়ে যেতো কিন্তু বর্তমানে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কোন কাজের জন্য আপনাকে মাল্টি টাস্কিং হতে হবে।

৯. শুরু করে দিন

বর্তমানে আপনার চাহিদা অনুযায়ী জব না পেলেও যেটি পেয়েছেন শুরু করে দিন। একটি কথা আছে, “বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।” অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে পরবর্তীতে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কোন জবে জয়েন করলেন। কারণ ইদানীং খেয়াল করলেই দেখবেন, যে কোন কাজের জন্য অভিজ্ঞতা চেয়ে থাকে। তোমরা যারা অল্পবয়সী আছো তারা আজই শুরু করে দাও অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারি করতে, যাতে পরশু কোম্পানি তোমাকে বাদ দেওয়ার আগে ভেবে দেখবে। তাছাড়াও আরো একটি কথা আছে, “A good boss with small sector is better than a bad boss with big secter”।

১০. নতুন কিছু তৈরি করুন

আমাদের দেশটি সমস্যায় জর্জরিত। উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, আজ পাঠাও কিংবা টেন মিনিট স্কুলকে দেখে আপনার মনে হতে পারে, ইশ্, এমন আইডিয়া একটু চিন্তা করলে আমিও বের করতে পারতাম। কিন্তু আপনি আপনার পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে অথবা আপনার বসকে দায়ি করছেন।তাই বলছি এমন সমস্যা জর্জরিত দেশে হাজার হাজার আইডিয়ার দরকার এবং শুরুটাও হোক তোমাকে দিয়ে।

দিন -রাত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পুরনো চাকরির জন্য আফসোস না করে নতুন করে শুরু করে দিন। একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে এই লকডাউনে উল্লেখিত বিষয়গুলো নজরে রেখে সামনের দিকে পা বাড়ান।একাধিক কাজে দক্ষ হলে প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিতে বাধ্য। কারণ, পথ পথিকের নয়, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post