গিগ ইকোনমি ; ভাল নাকি খারাপ?

 গিগ ইকোনমি ; ভাল নাকি খারাপ?

আমাদের দেশে ফ্রীল্যান্সিং শব্দটার সাথে ধীরে ধীরে তরুন সমাজে পরিচিতি বাড়ছেই বলা যায়। দেশে ফ্রীল্যান্সার দের সংখ্যাও এখন বাড়ছে। সরকার ও তরুনদের বেকার না থেকে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফ্রীল্যান্সার হতে উদ্বুদ্ধ করছে। এতে চাকরির প্রতি ঝোক ও চাপ দুইটাই কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে করে এখন বিভিন্ন আইটি ইনস্টিটিউশন এর গড়ে উঠছে দেশে এবং সরকার ও এতে সহযোগিতা করছে। ফ্রীল্যান্সার দের স্বীকৃতি দিতে এখন দেয়া হচ্ছে ফ্রীল্যান্সার আইডি কার্ড।

ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে যেখানে আমরা সকলেই জানি। এখন আমি যদি বলি এসবই গিগ ইকোনমি এর একটা অংশ।

আপনারা কতজন গিগ ইকোনমি বা অর্থনীতি এর ব্যাপারে শুনেছেন। চলুন, জেনে নেই গিগ ইকোনমি ও এর আদ্যোপান্ত নিয়ে।

ইনভেস্টোপিডিয়া অনুসারে, একটি গিগ অর্থনীতি হচ্ছে একটি মুক্তবাজার ব্যবস্থা, যেখানে অস্থায়ী ও নমনীয় কাজগুলি সাধারণত কোম্পানিগুলি পূর্ণ-সময়ের কর্মচারীদের পরিবর্তে স্বাধীন এবং ফ্রিল্যান্সার নিয়োগের দিকে ঝুঁকে থাকে। এটি নমনীয়, অস্থায়ী, বা ফ্রিল্যান্স কাজের উপর ভিত্তি করে এবং প্রায়ই একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট বা গ্রাহকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। একটি গিগ অর্থনীতি পূর্ণকালীন কর্মীদের ও আমাদের প্রথাগত অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, যেসব কর্মীরা খুব কমই নিজেদের কর্ম অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তার পরিবর্তে আজীবন কর্মজীবনে মনোনিবেশ করে।

আচ্ছা,এখন আসুন সহজ কথায় বুঝি গিগ অর্থনীতি কি।

আপনারা সকলেই ‘ঘরে বসে টাকা উপার্জন করুন’ বলে থাকে এমন লিফলেট পড়েছেন অথবা আপনি ডাটা এন্ট্রি জব এবং ফ্রিল্যান্স রাইটিং চাকরির কথা ও শুনেছেন কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ওয়েব ডিজাইন দিয়ে ঘরে বসে আয় করার উপায় এসব শুনে থাকবেন। ঠিক আছে, এই সমস্তই গিগ অর্থনীতির অংশ। এমনকি পার্টটাইম উবার বা ওলা ড্রাইভারও গিগ অর্থনীতির অংশ। তাই মূলত প্রতিটি পার্ট-টাইম, অস্থায়ী এবং চুক্তি ভিত্তিক কাজ,যা অল্প সময়ের জন্য কিছু অতিরিক্ত আয় করার জন্য করা হয় এসব গিগ অর্থনীতির অধীনে আসে এবং এই কাজ গুলা যারা করে থাকে তাদের বলা হয় ” গিগ ওয়ার্কার”

এবার আসি এই গিগ ইকোনমি এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করি।

অর্থনৈতিক কারনই হচ্ছে গিগ অর্থনীতির বিকাশের প্রধান কারন। যারা কাজ করবে তাদের কোনো নিদিষ্ট কর্মস্থলে আসতে হবে না। এটি কোম্পানির জন্য বিশাল অবকাঠামো খরচ বাঁচায়। যখন কর্মচারীরা কাজের জন্য অফিসে আসে, তখন কর্মীদের পরিবহন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুচলাচল, আসবাবপত্র এবং ক্যাফেটেরিয়ার খরচও বেড়ে যায়। গিগ অর্থনীতি এসব থেকে মুক্তি দিতে পারে। সুতরাং, আপনি বুঝতে পারবেন কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ মিলিয়ন মানুষ গিগ ওয়ার্কার। কোম্পানিগুলো আসলে টাকা বাঁচাতে চায়।

আমাদের দেশেও বর্তমানে অনেক গিগ ওয়ার্কার আছেন যারা বাইরের দেশের হয়ে কাজ করছেন। আচ্ছা, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই এর মধ্য দিয়ে গেছেন। সর্বদা এমন কেউ আছেন যিনি কম টাকায়ই কাজ করতে চান। গিগ অর্থনীতি সস্তা মানব সম্পদের দরজা খুলে দিচ্ছে।

তবে গিগ অর্থনীতির কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

যেমন- এতে কর্ম-জীবনের ভারসাম্য ব্যাহত হয়।

অবশ্যই, বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররা এতে একমত। ফ্রিল্যান্সিং কর্ম-জীবনের ভারসাম্য ব্যাহত করে। আপনি আপনার নিজের মনিব হয়ে যান। এবং যখন কেউ আপনাকে দেখছে না, তখন আত্মতৃপ্তি স্পষ্ট, যদি না আপনি অত্যন্ত স্ব-শৃঙ্খলাবদ্ধ হন। অতএব, গিগ অর্থনীতিতে ব্যাহত হয় কর্ম-জীবনের ভারসাম্য, শারীরিক চাপ, মানসিক চাপ এবং পেশাদারী বৃদ্ধির অভাব।

এছাড়াও রয়েছে অস্থির কাজের বোঝা।

কিছু দিন আপনি এত বেশি কাজ পান যে আপনি বাইরে যেতেও পারেন না, আবার কিছু দিন করার কিছু নেই। এটি গিগ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ত্রুটি। বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররা নিশ্চিত নন যে তারা পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট পাবে কিনা।

তারপর রয়েছে ক্রমাগত সম্পদের খোঁজ।

কোম্পানির জন্য, গিগ অর্থনীতি একটি বড় মাথাব্যথা। কারণ, গিগ অর্থনীতির সংজ্ঞা হল স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থান। অতএব, নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি চিরন্তন প্রেমের সম্পর্ক। সর্বোপরি, এটি কর্মচারী ধরে রাখার বিষয়ে বড় উদ্বেগ উত্থাপন করে।

 সুতরাং, মালিক এবং কর্মচারীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না যা উভয়ের জন্য ভাল নয়।

আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে গিগ ইকোনমি এর উত্থান এর ফলে আমাদের দেশের বেকারত্ব কমবে,তরুন দের চাকরির প্রতি ঝোক কিছুটা কমবে।

তাই গিগ অর্থনীতি ভাল বা খারাপ, বিতর্কটি দীর্ঘকাল চলবে। এবং আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত লোকেরা গিগ অর্থনীতি সম্পর্কে মতামত ভাগ করবে।

আপনার মতামত কি?

লিখেছেন: আরাফাত রহমান

Brinty Saha

Related post