নেপোলিয়ন হিল বুক রিভিউঃ থিংক এন্ড গ্রো রিচ

 নেপোলিয়ন হিল বুক রিভিউঃ থিংক এন্ড গ্রো রিচ

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অল্পেই হাল ছেড়ে দেন। সফলতার দ্বারে পৌঁছাতে না পেরে ভোগেন হতাশায়। আবার অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না লক্ষ্য অর্জনের শুরুটা কিভাবে করবেন। সঠিকভাবে চিন্তা ও পরিকল্পনার অভাবে হয়তো তাদের যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। জীবনে সাফল্য অর্জনে এসকল মানুষকে পথ দেখাতেই আমেরিকান লেখক নেপোলিয়ন হিল তার বিশ বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে রচনা করেছিলেন “Think and Grow Rich” বইটি।

এই বইটি লেখার পেছনের কাহিনীও বেশ অনুপ্রেরণামূলক। নেপোলিয়ন হিল রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার সময় ১৯০৮ সালে সৌভাগ্য ক্রমে তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী মানুষ শিল্পপতি এন্ড্রু কার্নেগির সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পান। কার্নেগি হিলের সাথে কথা বলে খুশি হন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, হিল ৫০০ জন সফল মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাদের সাফল্যের রহস্য জেনে তা প্রকাশ করতে পারবেন কি না এবং আরও বলেন, এ কাজের জন্য হিলকে কোনো টাকা দেয়া হবে না।

নেপোলিয়ন হিল এন্ড্রু কার্নেগির এই প্রস্তাবে রাজি হন। কার্নেগির নির্দেশনায় হিলের এই সাক্ষাৎকারগুলোর বিশ্লেষণাত্মক লেখা ১৯২৮ সালে “The Law of Success” নামে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে হিল এর সাথে আরও সংযোজন করে তার বিখ্যাত বই “Think and Grow Rich” বের করেন, যা সর্বকালের সেরা বেস্টসেলার বইগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত। এই বইয়ে লেখক সফল হওয়ার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেগুলো নিয়েই আমাদের আজকের লেখা-

চিন্তার শক্তি

মানুষ যা ভাবে, তা নিয়ে সমৃদ্ধি লাভ করে। কোনো ব্যক্তির লক্ষ্য যদি সুনির্দিষ্ট থাকে এবং সে হাল না ছাড়ে, তবে সে অবশ্যই সফল হবে। মানুষের মূল দুর্বলতার অন্যতম হলো ‘অসম্ভব’ শব্দটি। সাফল্য তাদের কাছেই ধরা দেয় যারা সাফল্য সচেতন, আর ব্যর্থ তারাই হয় যারা উদাসীনভাবে অসাফল্যকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসে। এই বইটি তাদেরকে সাহায্য করবে যারা ব্যর্থ সচেতনতা থেকে সফল সচেতন কিভাবে হওয়া যাবে তা শিখতে চায়।

আকাঙ্ক্ষা

কোনো ব্যক্তি যখন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্বাচন করবেন, তখন তার সমস্ত শক্তি, ইচ্ছাশক্তি, সকল পরিশ্রম সবকিছুই ঐ লক্ষ্য অর্জনের পেছনে ব্যয় করতে হবে । কোনো কাজে যদি আপনার বিশ্বাস থাকে এবং সঠিক বলে মনে হয় তবে এগিয়ে যান। যদি কখনো আপনি ব্যর্থও হন তবে মানুষ কি বলবে তা নিয়ে ভাববেন না। প্রতিটি ব্যর্থতার মাঝেই থাকে একটি সাফল্যের বীজ।

বিশ্বাস

বিশ্বাস হলো সকল সমৃদ্ধির শুরুর কেন্দ্রবিন্দু। কথায় আছে, “বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর”। এক দল লোক আছে যারা ব্যর্থ হলে ভাগ্যের ওপর দোষ দিতে থাকে। কিন্তু এরা তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য নিজেরাই দায়ী। কারণ নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা মানুষের অবচেতন মনকে দুর্বল করে তোলে। আত্মবিশ্বাসই হলো ব্যর্থতার একমাত্র প্রতিষেধক।

অটো-সাজেশন

এই বইয়ে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করার মাধ্যমকে বলা হয়েছে অটো-সাজেশন। এটি হলো মনের মধ্যে যোগাযোগের একটি পন্থা যেখানে মানুষের ইতিবাচক ও সচেতন চিন্তাগুলো সুবিন্যস্ত হয়। যা মানুষের অবচেতন মনকে সক্রিয় করে তোলে এবং কতৃত্বপরায়ন চিন্তাভাবনার মাধ্যমে তাকে প্রভাবিত করে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ

জ্ঞানের ধরণ দুই প্রকার। একটি হলো সাধারণ জ্ঞান, অপরটি বিশেষায়িত। সাধারণ জ্ঞান যত ব্যাপকই হোক না কেন তা অর্থ উপার্জনে কোনো ভূমিকা রাখে না। এ জন্যই মানুষ বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জনে সম্পর্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। তবে জ্ঞান যদি সুবিন্যস্ত না হয় তাহলে তা সফলতা অর্জনে প্রভাব ফেলে না। তাই কোনো ব্যক্তির যদি খুব বেশি জ্ঞান নাও থাকে, তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিতে তিনি লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে তার দরকার হবে ‘মাস্টার মাইন্ড গ্রুপ’ অর্থাৎ একদল মানুষ যাদের সংস্পর্শে এসে তিনি সুসংগঠিত ও বিশেষায়িত বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

কল্পনাশক্তি

কল্পনাকে আক্ষরিক অর্থে মনের ওয়ার্কশপ বা কর্মশালা বলা চলে যেখানে মানুষ সব রকমের পরিকল্পনা সৃষ্টি করে। মানুষ যা কল্পনা করে তার সবকিছুই সৃষ্টি করতে পারে। এই কল্পনাশক্তির মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। কল্পনার দুটি রূপ। একটি সিনথেটিক ইমাজিনেশন,যার সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন পরিকল্পনার মিশ্রনে নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে পারেন। আরেকটা হলো ক্রিয়েটিভ ইমাজিনেশন,যার মাধ্যমে মানুষ সকল বেসিক বা নতুন আইডিয়ার ভিত্তি স্থাপন করেন।

সিদ্ধান্ত

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,ব্যর্থতার জন্য অন্যতম কারন হলো সিদ্ধান্তের অভাব।যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত মানুষকে সফলতা এনে দেয়।আর সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বদাই সাহসের প্রয়োজন।

ধৈর্য্য

সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য বা লেগে থাকার গুণ একটি প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর। আর ধৈর্য্যের ভিত হলো ইচ্ছাশক্তি। যার ধৈর্য্য নেই সে জীবনে সফল হতে পারে না। হাজারো মানুষের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে বেশিরভাগের দুর্বলতাই হলো ধৈর্য্যের অভাব। তবে চেষ্টা করলে এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা যায়। এজন্য মনে প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে।


এই বইয়ে সফল হওয়ার জন্য যে উপায়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, ধৈর্য্য নিয়ে সেগুলো অনুসরণ করার কথা বলেছেন লেখক নেপোলিয়ন হিল।

লিখেছেনঃ ছাদাপ জাহান দিনা

RedLive

Related post