পাওলো কোয়েলহোর বিশ্বজয়ী মাস্টারপিস উপন্যাস ‘দ্য আলকেমিস্ট’

 পাওলো কোয়েলহোর বিশ্বজয়ী মাস্টারপিস উপন্যাস ‘দ্য আলকেমিস্ট’

দ্য আলকেমিস্ট, পাওলো কোয়েলহো এর মাস্টারপিস সর্বকালের সেরা বইয়ের তালিকায় থাকা উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৮০টি ভাষায় অনুবাদ করা এই বই একটি উপন্যাসের ইতিহাস করেছে। যার গল্পেও বিস্ময়ের সমুদ্র। আর এই বিস্ময়ের সমুদ্রের নাবিক সান্তিয়াগো।

এটি শুধু আমার বেলায় হয়েছিল কি না জানি না! আমি যখন বইটির নাম প্রথম শুনেছিলাম, ভেবেছিলাম রসায়ন বা বিজ্ঞান বিষয়ক বই হবে হয়তো! আপনারাও এমন ভেবে বোকা হয়ে যেতে পারেন, তাই বলছি; বইটি মোটেও রসায়ন বা বিজ্ঞান বিষয়ক নয়, বরং বইটি খুব সাধারণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে অসাধারণ দার্শনিকতা ও জীবনের দিক নির্দেশনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সান্তিয়াগো, ফিরছি বিস্ময় নাবিক গল্পের মূল চরিত্রে। সে ছোটবেলা থেকেই চায় পৃথিবী টা ঘুরে দেখতে। তার কাছে ঈশ্বর আর পাপ সম্পর্কে জানার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবীটাকে জানা। একদিন তার বাবাকে বলেই ফেলে তার ইচ্ছার কথা।বাবা বলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য মেষপালক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।সান্তিয়াগো যথারীতি মেষ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীটাকে দেখতে।তার কাছে নিজেকে খুব সুখি সুখি মনে হয়। আসলেই তো এই মহাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র সুজলা সুফলা গ্রহ পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখার চেয়ে সুখের আর কী আছে!

এভাবে তার সময় কেটে যেতে থাকে। একদিন সে স্বপ্ন দেখে গুপ্তধনের। এর পর থেকে সে ছুটে চলে তার স্বপ্নের পিছে। সমু্দ্র পড়ি দিয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায়। সে চলে যায় আরবে। আরবে এসে এক ঠকবাজের কাছে তার জমানো সকল সম্পদ হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে যায়। অচেনা দেশ,অজানা গন্তব্য,অজানা মানুষ এসবে সে থেমে থাকে না। সে বর্তমানকে স্বীকার করে এগিয়ে চলে। সে স্ফটিকের দোকানে কাজ নেয়। সেখানেও তার বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতা দিয়ে ব্যবসায় সফলতা আনে।এখানে দোকানের মালিকের কথাটা স্মরণ করতে হয়- ‘সারা জীবন আমার দোকানটা কে এ আকারে দেখতে চেয়েছিলাম।তাই বাড়েনি।পরিবর্তনকে ভয় পাই কারণ জানি না পরিবর্তনের পর কী আসবে….. ‘জীবনে সফলতা পেতে পরিবর্তন টা আবশ্যক’। হয়ত সে পরিবর্তনে তোমার ক্ষতি হবে কিন্তু চেষ্টা না করলে লাভের মুখ টাও দেখতে পাওয়া যায় না।

এরপর সে আবার বেরিয়ে পড়ে স্বপ্নের গুপ্তধনের খোঁজে।প্রকৃতির ইশারা থেকে ঠিক করে নেয় যাত্রাপথ। সে জানত তার স্বপ্নের গুপ্তধন সে পাবেই। তাই পথের শত বাধাবিপত্তি তাকে তার লক্ষ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ‘যখন তুমি কিছু পাবার জন্য চেষ্টা করবে তখন পুরো বিশ্ব ভ্রমাণ্ড তা পাইয়ে দিতে ফিসফাস করবে’।

এবার গল্পে যার নামে মূলত বইয়ের নাম তার আবির্ভাব হয়। হ্যাঁ, দ্যা আলকেমিস্ট। আলকেমিস্ট হলো এমন এক রহস্যময় ব্যক্তি যে লোহাকে স্বর্ণে রূপান্তর করতে পারে। সে জানে মহাবিশ্বের ভাষা।
সন্তিয়াগোর নিজ লক্ষের প্রতি অবিচলতা দেখে আলকেমিস্ট মুগ্ধ হয়। নায়ককে পথ দেখিয়ে তাকে পৌঁছে দেয় পিরামিডের কাছে।ছেলেটা পিরামিডে পৌঁছে গুপ্তধন খুঁজতে ঢিবি খুঁড়তে শুরু করে দেয়।তখন এক দলপতি এসে বলে যায় ‘স্বপ্নে বিশ্বাস করতে নেই। সে-ও একসময় পৃথিবীর একপ্রান্তে গুপ্তধন পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল……’তার কথা শুনে সান্তিয়াগো বুঝে যায় গুপ্তধন পিরামিডে নেই। সে বুঝতে পারে আসলে গুপ্তধন কোথায় আছে। পেয়েও যায় গুপ্তধন।অর্থাৎ যত অসম্ভব স্বপ্নই হোক আমরা যদি তার পেছনে লেগে থাকি সফলতা আসবেই। কিন্তু আমার মনে হয় আসল গুপ্তধন তার পাওয়া স্প্যানিশ স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি একটা বাক্স নয়।তার আসল অর্জন ও গুপ্তধন টা আসলে কোথায় ছিল, মহাবিশ্বের ভাষা কী এসব বুঝতে হলে পড়তে হবে ‘দ্যা আলকেমিস্ট’ বইটি।

সম্পূর্ণ বইটি জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মূল্যবান বাণী ও জীবন দর্শন। ”সবসময় মনে রেখ,ভালোবাসা কখনো কাউকে লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দিতে চায় না। কেউ যদি লক্ষ্য ছেড়ে দেয়,বুঝতে হবে সে ভালোবাসা সত্যি নয়।”
একবার এক জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে তেল ভর্তি একটি চামচ নিয়ে তার নান্দনিক প্রাসাদ ঘুরে আসতে বলে এবং চামচে থাকা তেল যেন না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলে। সে বেরিয়ে পড়ে ঘুরে দেখতে কিন্তু যখন সে ফিরে আসে তখন দেখে তার চামচে থাকা তেল নেই।তখন তিনি বলেন।
‘সুখের গোপন উৎস হল তোমাকে পৃথিবীর সব বিস্ময় দেখতে হবে,সেইসাথে মনে রাখতে হবে চামচের পরে থাকা এক বিন্দু তেলের কথাও’।

লিখেছেনঃ আদৃতা ইদ্রিস দিশা

ফিচার ইমেজঃ
ক্রিয়েটেড বাই হাসিন মাহতাব

All rights reserved by RED LIVE

RedLive

Related post