সারঃ উদ্ভিদের আশির্বাদ নাকি অভিসম্পাত!

 সারঃ উদ্ভিদের আশির্বাদ নাকি অভিসম্পাত!

মানবদেহের দৈহিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য পরিমিত পরিমাণের সুষম খাদ্য যেমন অপরিহার্য তেমনি ভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্যেও পর্যাপ্ত পরিমাণের সার প্রয়োগ অপরিহার্য। উদ্ভিদের জন্য সার মূলত আশীর্বাদস্বরূপ হলেও অধিক মাত্রায় সার প্রয়োগ উদ্ভিদের জন্য অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসতে পারে। আজকের আলোচনায় এই বিষয়টি নিয়েই আলোকপাত করা হবে।
উদ্ভিদে প্রধাণত ইউরিয়া, টিএসপি, মিউরেট অফ পটাশ, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরাক্স প্রভৃতি সার ব্যবহার করা হয়।


ইউরিয়া:


ইউরিয়া একটি নাইট্রোজেন গঠিত সার যা উদ্ভিদের শাখা,প্রশাখা, পাতা ও কাণ্ড উৎপাদনে সাহায্য করে। এর মাঝে থাকা নাইট্রোজেন ক্লোরোফিল উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্ভিদকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদান করে থাকে। এছাড়াও ধান গাছে কুশি উৎপাদনে সহায়তা করে।
অধিক মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। পোকা মাকড় ও রোগ আক্রমণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এমনকি পাতার অংশ ভারী হয়ে গাছ হেলে পড়ে।


টিএসপি:


টিএসপি বা ট্রিপল সুপার ফসফেট একটি ফসফরাস সংবলিত সার। এটি প্রধাণত উদ্ভিদের কোষ বিভাজনে সহায়তা করে। গাছের শিকড় গঠনে সাহায্য করে। গাছের কাঠামো শক্ত করে গাছকে নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ফসফরাস ফুল,ফল ও বীজের গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ফসফরাস প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে উদ্ভিদের ফলন কমে যায়। এমনকি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।


মিউরেট অফ পটাশ :


পটাশ সারে প্রায় ৫০ ভাগ পটাশিয়াম থাকে যা মূলত উদ্ভিদ কোষের ভেদ্যতা রক্ষা করে। পটাশ সার উদ্ভিদে পানি পরিশোষণ, আত্তীকরণ ও চলাচলে সহায়তা করে। লৌহ ও ম্যাংগানিজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদের কাঠামো শক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পটাশ সারের প্রয়োগ বেশি মাত্রায় হলে উদ্ভিদের পানি নিঃসরণের হার কমে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পায়।


জিপসাম:


জিপসাম মূলত সালফার সংবলিত সার যা উদ্ভিদে প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
জিপসাম সার জমিতে বেশি প্রয়োগ করলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায় ফলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়।


জিংক সালফেট:


জিংক সালফেট সারের মূল উপাদান জিংক যা ক্লোরোফিল উৎপাদনে সাহায্য করে। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জিংকের প্রয়োগমাত্রা বেশি হলে উদ্ভিদে বিষক্রিয়া দেখা দেয় যার ফলে প্রোটিন উৎপাদন ব্যাহত হয়।


বোরন:


বোরন গাছের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং চিটা রোধ করে। বোরনের প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে কচি পাতা এবং ডগা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়।

উদ্ভিদের জন্য সার যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এর অধিক প্রয়োগ কেবল উদ্ভিদ নয় মানবজাতির জন্যেও হুমকিস্বরুপ। মাটি দূষণ, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ সহ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাব পড়ে। তাই উদ্ভিদ ও মানবজাতির কল্যাণের জন্য সারের পরিমিত ব্যবহার বাস্তবায়ন করা অধিক জরুরি।

লিখেছেনঃ শরীফ মেহেরিয়া

ফিচার ইমেজ ক্রিয়েটেড বাইঃ হাসিন মাহতাব

All rights reserved by RED LIVE

RedLive

Related post