সাহিত্যের পরিধি কত?

 সাহিত্যের পরিধি কত?

সাহিত্য শব্দটির উৎপত্তি ‘সহিত’ শব্দ থেকে।’সহিত’ শব্দমূলের সঙ্গে ‘য’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘সাহিত্য’ শব্দটি গঠিত হয়েছে।’সহিত’ অর্থ-সংযুক্ত, সমন্বিত, সঙ্গে, মিলন, যোগ, সংযোগ, সাথে বা সম্মিলন। ‘সাহিত্য’ শব্দের আভিধানিক অর্থ-সহিতের ভাব, মিলন বা যোগ, অথবা জ্ঞানগর্ভ বা শিক্ষামূলক গ্রন্থ; আবার কাব্য-উপন্যাসাদি রসাত্মক বা রম্য রচনা, যাতে এক হৃদয়ের সঙ্গে অপর হৃদয়ের মিলন ঘটে।


সাহিত্য বলতে কি বুঝি?


সাহিত্য বলতে যথাসম্ভব কোনো লিখিত বিষয়বস্তুকে বুঝায়।সাহিত্য শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত হয় অথবা এমন কোন লেখনী, যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা। মোটকথা, ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য। ধরন অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনী বা বাস্তব কাহিনী কিংবা পদ্য, গদ্য এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। পদ্যের মধ্যে ছড়া,কবিতা ইত্যাদি,গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এছাড়াও অনেকে নাটককে আলাদা প্রধান শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।নাটকের মধ্যে নাটিকা, মঞ্চনাটক ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কারো মতে, যা মানুষকে আনন্দ দেয়,মানুষের মনের খোরাক যোগায়, মানুষের অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে, ‘মানুষ’ বুঝতে শেখায় এবং আমাদের ‘মানুষ’ হতে সাহায্য করে।


সাহিত্যের পরিধি

সাহিত্যের পরিধি-অনেক বড়।তার মধ্যে কবিতা, মহাকাব্য, নাটক, কাব্যনাট্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, গদ্য-পদ্য, ভ্রমণকাহিনি, বিভিন্ন লেখকের চিঠি,আত্মজীবনী থেকে শুরু করে কবিতার বিভিন্ন ভাগ, নাটকের বিভিন্ন ভাগ, উপন্যাসের বিভিন্ন ভাগ, বিভিন্ন রকম সমালোচনা পত্র, ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই সাহিত্য। সাহিত্যের এই বিভিন্ন ভাগগুলোকেই আমরা এক কথায় সাহিত্যের রূপ বলে থাকি।


সাহিত্য কেন পড়বো

সাহিত্য হচ্ছে মানব মনের দর্পণ স্বরূপ। সাহিত্য মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ বন্ধু। বই বিনা স্বার্থে আপনাকে জ্ঞান ভাণ্ডার উপহার দিবে, আনন্দ দিবে।সাহিত্য চর্চা একজন মানুষকে সুশিক্ষা দেয়, সচেতন হতে সাহায্য করে, জ্ঞানের সাগরে ডুব দিতে সাহায্য করে, ন্যায়, অন্যায় সম্পর্কে জ্ঞাত করে, প্রকৃতি প্রেমী করে। সাহিত্য চর্চায় আমাদের শব্দ ভাণ্ডারের পরিধি বাড়ে।কেননা-
১. সাহিত্য আপনাকে সমাজের না দেখা বিষয়গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আপনার সমাজের বাস্তব অবস্থা যা আমি বা আপনি দেখতে পাইনা, সাহিত্যিকগণ সেগুলো তাদের দূরদর্শিতার দ্বারা দেখতে পান এবং সেগুলোই লেখার মাধ্যমে সমাজের বাকিদের দেখিয়ে দেন। সমাজকে দেখার মত দেখতে এবং বুঝার মত বুঝতে চাইলে সাহিত্য পড়ুন।


২. আপনি যখন পড়বেন, তখন আপনি বিভিন্ন চিন্তা চেতনার সঙ্গে পরিচিত হবেন। একেক লেখকের চিন্তাধারা একেক রকম। তখন আপনিও ধীরে ধীরে একজন স্বাধীন চিন্তাশীল ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকবেন এবং আপনার চিন্তার পরিধি আর সীমাবদ্ধ থাকবেনা। আপনার মন সুস্বাস্থ্য সম্পন্ন হয়ে উঠবে। দেহের চেয়ে মনের স্বাস্থ্য ঠিক থাকা আরো জরুরি।


৩. মহান লেখকদের লেখা পড়ে আপনি নিজেকে অন্যভাবে খুঁজে পাবেন, নতুন করে আবিষ্কার করবেন, আপনার আত্মোপলব্ধি ঘটবে। কোনো বই আমরা তখনি উপভোগ করি, যখন সেটি আমাদের ব্যক্তিগত গন্ডির বাইরের বিষয়াদি নিয়ে ভাবায়। সাহিত্য পাঠহীন জীবন একরৈখিক ও আত্মকেন্দ্রিক, যেখানে আমরা আমাদের জীবনটাই যাপন করি, নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
মানুষ প্রকৃতির মতো কিছুই সৃষ্টি করতে পারেনা। পারে রূপান্তর করতে, মূল্য সংযোজন করতে। কিন্তু যে অমূল্য জিনিসটি যে সৃষ্টি করতে পারে, তার নাম শিল্প-সাহিত্য। সাহিত্য মানুষের এমন এক সৃজনশীল কর্ম, যার লক্ষ্য-উপলক্ষ, স্রষ্টা-সৃষ্টি তথা পাত্রপাত্রী, চরিত্রগুলো, অংশীজন বা উপকারভোগী, উদ্দেশ্য-বিধেয় সবই মানুষ। এককথায়, সাহিত্যের কর্তা, কর্ম, করণ-সবই মানুষ।


সাহিত্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষিদের উক্তি


আমি তাকে করুণা করি সে প্রতিদিন প্রচুর মাখন খায় কিন্তু বই পড়ে না” – টমাস হুড
“শিল্প সাহিত্যের মধ্যে বেঁচে থাকায় রয়েছে গভীর প্রশান্তি” – টমাস ফুলার
“গৃহের কোনো আসবাবপত্র বইয়ের মতো সুন্দর নয়” – সিডনি স্মিথ
“যিনিই যাই বলুন সাহিত্যচর্চা যে শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই” – প্রমথ চৌধুরী

সাহিত্যের রূপ অন্তহীন। কখনো হয়েছে জীবনের রঙ্গমঞ্চ, কখনো হয়েছে জীবনালেখ্য, কখনো সমাজের প্রতিচ্ছবি, কখনো জীবন ও সমাজের প্রতিফলন, কখনো সময়ের দর্পণ, কখনো হয়েছে অনুভূতির বাঁধভাঙা প্রকাশ, আবেগের আতিশায্যে উদ্বেল, কখনো সমকালের মুখপাত্র, কখনো শব্দ ঝংকার, কখনো মিলনের মোহনা, কখনো প্রাণোচ্ছ্বাসের প্রেরণা, কখনো বিরহের বিলাপ, কখনো শোকের আর্তনাদ, আবার কখনো প্রেমিক, কখনো বিপ্লবী, কখনো বা বঞ্চিতের সঞ্চিত ভোরের শব্দপ্রকাশ, আবার কখনোবা হয়েছে – একান্ত শিল্পের জন্যই শিল্প।
সাহিত্যের মাঝেই আছে সত্যের উপলব্ধি, যেখানে আমরা আনন্দ কে দেখতে পাই। সত্যের অসম্পূর্ণ উপলব্ধিই আনন্দের অভাব।
জগতের মহান ব্যক্তিরা সবাই বইপ্রেমী। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটস বছরে শতাধিক বই পড়েন। ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন একটি করে বই পড়েন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের সঙ্গী ছিল বই।সাহিত্যচর্চা আমাদের সৃজনশীলতা ও চিন্তাচেতনার জগৎকে পরিবর্তন করে। মুক্তবুদ্ধি ম চর্চার দ্বার উন্মুক্ত করে।
সাহিত্য হলো আমাদের চোখের মতো ক্ষুদ্র অথচ চারপাশের সবকিছুকে বিশালাকারে দেখতে পায়। ফুল যেমন বাগানকে সুশোভিত করে, সাহিত্য তেমনি ভাষাকে অলংকৃত করে। সাহিত্য না থাকলে পৃথিবীতে এত গান, সুর, গল্প, কবিতা সৃষ্টি হতো না। সাহিত্যচর্চা মানবমনকে জাগতিক ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দান করে। মুক্ত আত্মাই কেবল শুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে সভ্যতার বাতিঘরে অতন্দ্র প্রহরী পৌঁছোতে পারে। সুতরাং, সাহিত্য পাঠের মূল্য জগতের যেকোন কিছুর বিচারে শ্রেষ্ঠ।

লিখেছেনঃ শারমিন মনিকা

ফিচার ইমেজ ক্রিয়েটেড বাইঃ হাসিন মাহতাব

© All rights reserved by RED LIVE

RedLive

Related post