সুপারি পাতার খোলেই শুরু হতে পারে সৃষ্টিশীলউদ্যোগ

 সুপারি পাতার খোলেই শুরু হতে পারে সৃষ্টিশীলউদ্যোগ

ছোটবেলায় গ্রামে-গঞ্জে বেড়ে ওঠা অনেকেই হয়তো চিনে থাকবেন এই সুপারি পাতার খোল। অনেকেই হয়তো সুপারি পাতার খোল দিয়ে অনেক মজার মুহূর্তও কাটিয়েছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগের দৌরাত্ন্যে এই শৈশব হারিয়ে গেছে শিশু-কিশোরদের জীবন থেকে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, সুপারি পাতার খোল দিয়েই তৈরী হতে পারে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব অনন্য সব তৈজসপত্র। চলুন জেনে নেই কিভাবে সাধারণ একটি সুপারি পাতা অসাধারণ একটি উদ্যোগে পরিণত হতে পারে।

স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম্যখেলা

সুপারি গাছ হলো অ্যারিকেসি পরিবারের একটি প্রজাতি। এরা বৃহৎ অশাখ এবং সরল কান্ডবিশিষ্ট হয়ে থাকে। অ্যারিকেসি পরিবারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এদের পাতার গোঁড়ায় শক্ত সীথ বা খোল রয়েছে, যা থেকেই মূলত বিভিন্ন ব্যবহারপযোগী আসবাবপত্র তৈরী হয়ে থাকে। এই দীর্ঘ পত্রখোল বা খোলা কান্ডের সাথে যুক্ত থাকে।

প্রকৃতির সাজে সুপারি গাছ

সুপারি গাছ বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। এই সুপারির জন্ম ফিলিপাইন বা মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ করে বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি জেলায় প্রচুর সুপারি জন্মে। এই সুপারির পাতা সংগ্রহ করে এবং সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষ পরিবর্তন করছে নিজেদের ভাগ্য।

সুপারির খোলে আসবাস্পত্র বানানোর কারিগর ও তাঁর কারিগরি

সুপারি পাতা এবং তার খোল দিয়ে তৈরী তৈজসপত্র অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। সুপারি পাতার খোল ছাঁচের মেশিনে বসিয়ে বিভিন্ন আকারের আসবাবপত্র তৈরী করা হয়।  তবে কাজ শুরুর পূর্বেই সুপারি পাতার খোল গুলোকে সংগ্রহ করে ব্যবহার উপযোগী করে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে ঝরে পড়া পাতা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমেই পাতা গুলোকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। এরপর তাপ এবং চাপ প্রয়োগ করে চাহিদা অনুযায়ী ছাঁচে বসিয়ে নানান আকৃতি প্রদান করা হয়,যেমনঃ গোলাকার বাটি,গোলাকার প্লেইট,চৌকোণা প্লেট,বাটি,ট্রে প্রভৃতি। এরপর তৈরী জিনিসগুলোকে নিখুঁত আকৃতি প্রদানের জন্য অবান্ঞ্ছিত অংশগুলো কাচিঁ কেটে বাদ দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া। এই তৈরীকৃত প্লেইট,বাটি গুলোকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে জীবাণুমুক্ত ও টেকসই করে নেওয়া হয়। জীবাণুমুক্ত করার পর এদের  প্যাকেজিং শুরু হয়।

নান্দনিক শিল্পের চমৎকার শিল্প

বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে,বনভোজন এবং বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সময় আমরা প্লাস্টিকের তৈরী ওয়ান টাইম প্লেট, বাটি, গ্লাস ব্যবহার করে থাকি। এসব পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সুপারি পাতার খোলে তৈরী তৈজসপত্র একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য অনুকূল, অপরদিকে এটি বেশ নান্দনিক ও বটে। রেস্তোরাঁয়,অতিথি অ্যাপায়নে কিংবা ভ্রমণে খুব সুন্দরভাবে সুপারি পাতার খোলের তৈরী প্লেট,বাটি দিয়ে সকলের জন্য চমৎকার এক খাদ্য পরিবেশনা হতেই পারে। অনেকই আবার খোল দিয়ে তৈরী নানান আকৃতির প্লেইট কিংবা ট্রে এর উপর রং-তুলির আঁচড়ে  ফুটিয়ে তুলছেন নানা নকশা,ছবি,গ্রামীণ লোকগাঁথা প্রভৃতি যা দিয়ে ঘরকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলা যায়।

এছাড়া এই খোল দিয়ে ব্যাগ, জুতা প্রভৃতি তৈরী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেই ভাবতে পারেন, এসব পণ্যের দামটা অনেক বেশি হবে। কিন্তু তা একেবারেই নয়,খুব অল্প দামেই এই পণ্যগুলো হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় ও এসব পণ্যের কিছু স্টল দেখতে পাওয়া যায়।

বর্তমানে অনেকেই সুপারি পাতার খোল দিয়ে তৈরী জিনিসপত্র নিয়ে কাজ শুরু করলেও তার সংখ্যাটা খুবই কম। হাতেগোনা কিছু মানুষ এইসব বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। এই কারণে বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক  বাজারেও এর চাহিদা অনেক। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বর্তমানে পরিবেশবান্ধব বা বায়োডিগ্রেডেবল জিনিসপত্র ব্যবহার করার জন্য জনগণকে উৎসাহী করা হচ্ছে। যেকোনো ব্যবসার মতো এই ব্যবসায় ও প্রয়োজন মেধা, ধৈর্য্য এবং শ্রমের পরিপূর্ণ ব্যবহার। তাই যে কেউ পর্যাপ্ত মূলধন এবং শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই এই উদ্যোগ নিয়েই এগিয়ে যেতে পারবেন বহুদূর।

লেখাঃ অংকিতা দাশ

RedLive

Related post