সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ঃ এক কিংবদন্তী অভিনেতার জীবন গল্পের শেষ অধ্যায়

 সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ঃ  এক কিংবদন্তী অভিনেতার জীবন গল্পের শেষ অধ্যায়

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তিনি গত শতকের কিংবদন্তী অভিনেতা। সৌমিত্রকে মহাতারকা হিসেবে অভিহিত করলেও ভুল হবে না। কেননা বাংলার মানুষের হৃদয়ের খুব কাছেই তার অবস্থান। আর আজ আমরা এই প্রবাদ পুরুষের জীবনী সম্পর্কে জানব।

বিশ শতকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আদি নিবাস অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কয়া গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তার জন্ম, ১৯৩৫ সালের জানুয়ারির ১৯ তারিখে। বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং মা আশালতা চট্টোপাধ্যায়।

সৌমিত্রের বাবা, মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ওকালতিকে। কিন্তু ওকালতির পাশাপাশি চর্চা করতেন আবৃত্তি এবং অভিনয়। মূলত বাবার কাছ থেকেই সৌমিত্রের আবৃত্তি এবং অভিনয়ে হাতেখড়ি।

কিংবদন্তির সিনেমা জগতের বর্ণিল চরিত্রসমূহের একঝলক

সিনেমার প্রতি সৌমিত্রের ঝোঁক ছিল ছেলেবেলা থেকেই। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতেন তিনি।

বাবা, মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায়কে চাকরির সূত্রে জায়গা বদল করতে হত প্রায়শই। সৌমিত্রকে বদলাতে হত স্কুল। হাওড়া জিলা স্কুল থেকে স্কুলজীবনের লেখাপড়ার ইতি টানেন তিনি। এরপর কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন আইএসসি। পরবর্তীতে সেই কলেজেই বাংলায় অনার্স সম্পন্ন করেন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টসে দুই বছর পড়াশোনা করেন। সাহিত্য নিয়েই সৌমিত্রের লেখাপড়ার জগৎ। সাহিত্যিক হওয়াই একরকম ভবিতব্য ছিল তার। কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত নির্মাতা, সত্যজিৎ রায়ের সংস্পর্শে এসে সৌমিত্রের জীবনের গতিপথ বদলে গেল একেবারেই!

বাংলার শাহেন শাহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সত্যজিৎ রায়ের সর্বমোট চৌত্রিশটি সিনেমার চৌদ্দটিতেই অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন সৌমিত্র। অপুর সংসারের অপুর মন ভোলানো অভিব্যক্তি, চারুলতার উচ্ছল অমল কিংবা জয় বাবা ফেলুনাথের তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন ফেলুদা – তুখোড় অভিনয়ে সৌমিত্রের জুড়ি মেলা ভার! সিনেমার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন নাটক, যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিকে। লিখেছেন নাটক এবং কবিতা। অভিনয়, সম্পাদনা, কবিতাপাঠ, রবীন্দ্রচর্চা – সবকিছুতেই সৌমিত্রের অবাধ পদচারণা।

সৌমিত্রের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী দীপা চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র-দীপা দম্পতির পুত্র সৌগত চট্টোপাধ্যায় এবং কন্যা পৌলমী বসু।

শিল্পচর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য সৌমিত্র ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান, “Officier des Arts et Metiers” – এ ভূষিত হয়েছেন। ভারতের সম্মানজনক পদ্মভূষণ সম্মাননা অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুই দুই বার!

লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কার হাতে কিংবদন্তী

মহান এই শিল্পী কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন দীর্ঘ ৪১ দিন ধরে। মাঝখানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও শেষ রক্ষা সম্ভব হয়নি। অগত্যা আজ, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মহানক্ষত্রের হলো মহাপ্রয়াণ।

লিখেছেন : নবনীতা প্রামানিক

RedLive

Related post