২০২১ সালে যে ১২টি বিষয় একজন সফল উদ্যোক্তা হতে আপনার জানা প্রয়োজন

 ২০২১ সালে যে ১২টি বিষয় একজন সফল উদ্যোক্তা হতে আপনার জানা প্রয়োজন

২০২০ পেরিয়ে ২০২১ আসবে এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। তারপরও এই স্বাভাবিকতার মাঝে যেন অস্বাভাবিকতা রয়েছে। তার কারণ চারপাশের পরিবর্তন। যার জন্য আগামী উদ্যোক্তাদের কতগুলো দক্ষতা নিজের মধ্যে প্রণোয়ন করতে হবে যদি আপনি আপনার ব্যবসায় অগ্রগতি চেয়ে থাকেন। কতকগুলো বিষয় তাদেরকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে।

১. ক্রেতাদের গুরুত্ব দেওয়া

যদি এমন হয় যে, আপনি ব্যবসায় লাভের পর ক্রেতাদের চাহিদা, সুবিধা -অসুবিধার দিকে খেয়াল না করে নিজের মতো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনি ভুল করছেন। ক্রেতারা আপনার প্রথম সম্পদ। তাই তাদের ইচ্ছে -অনিচ্ছের দিকে খেয়াল রাখবেন।

২. ক্লায়েন্ট ও পার্টনারদেরকে গুরুত্ব দেওয়া

আপনি যদি কয়েকজনের সাথে ব্যবসা শুরু করেন সেক্ষেত্রে সবার উচিত, সবার মতামত নিয়েই কোন কিছু করে থাকা। যে ২০% বা ১০% অংশীদার তার কথাও গুরুত্বের সাথে নেওয়া।ক্লায়েন্টদের সময় ও চাহিদাও বিশেষ বিবেচনায় নিবেন। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত না থেকে ক্লায়েন্টদেরকেও গুরুত্ব দিবেন।

৩. ব্যবসার উদ্দেশ্য ভুলে না যাওয়া

অনেকেই দেখি ব্যবসা শুরু করার কয়েক বছর পরই জগাখিচুড়ি অবস্থা করেন। এমনটা কখনোই করবেন না। আপনার উদ্দেশ্যগুলো ভুললে চলবেনা। বরং কি ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রয় করবেন, দাম কেমন রাখবেন, কাদের কাছে বিক্রয় করবেন তার তালিকা সবসময় মনে রাখবেন। আর অতিরিক্ত পরিকল্পনা করতে গিয়ে সময় অপচয় করবেন না, বরং কাজে সময় বেশি দেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

৪. ঝুঁকি নেওয়া

ধরুন, পুরোনো নিয়মে আপনার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভেবেচিন্তে আপনাকে নতুন করে কোনো উপায় বের করে, প্রয়োজনে ঝুঁকি নিতে হবে অথবা পুরনো নিয়মের ভেতরেই পরিবর্তন আনতে হবে যেটা আপনার ক্রেতা বা বাজার চায় না। ইংরেজিতে অনেক বিজনেস জায়ান্টকে বলতে দেখা যায়, “A true businessperson is the one who can take risk. Without risk something different will not be invented.” অথবা, “Taking no risk is the biggest risk”।

৫. পরিচালনায় পারদর্শিতা

কোন প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবে চালাতে হলে আগে চাই সঠিক পরিচালিনার রীতিনীতি। যে প্রতিষ্ঠান যত সূক্ষ্মতার সাথে পরিচালনার মাঝে দিয়ে যাবে সেই প্রতিষ্ঠান তত বেশি উন্নয়ন করবে।

৬. স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেগে থাকা

সবসময় একটা গতির মধ্যে আপনার ব্যবসা চালনা করা দরকার। খুব বেশি তাড়াহুড়ো নয় আবার খুব ধীরগতিতেও নয়। ধরুন আপনি বেশ লাভবান হলেন বাজারে, আপনার কাজের গতিকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিলেন। তাহলে কিন্তু ক্ষতির দর্শনের দিকে এগোবেন।

৭. টেকনোলজির সাথে তালমেলানো

মাত্র এক বছর আগেও কেউ আজকের মতো অনলাইনের উপর নির্ভর করতো না। আপনি হয়তো ভাবছেন, সময় ঠিক হলে এই অভ্যাস চলে যাবে। এটা আসলে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যেহেতু পেশাজীবি মানুষেরা দেখছে অনলাইনেও ভালো প্রোডাক্ট ও সেবা পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তারা করোনা চলে গেলেও কিন্তু অনলাইন নির্ভর হয়েই থাকবে। আজকাল মফস্বল শহর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও কিন্তু অনলাইনে অনেককিছু অর্ডার করে থাকে। তাই আপনার ব্যবসাকেও টেকনোলজির সাথে অ্যাডজাস্টমেন্ট করে নেওয়াটাই শ্রেয়।

৮. দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন

আপনার দায়িত্বগুলোকে আপনার উচিত নিজে নিজেই সময়মত পালন করা। অন্য আরেকজনের উপর ছেড়ে না দেওয়া। কারণ সে আপনার কাজকে গুরুত্বের সাথে নাও নিতে পারে।

৯. প্রতিযোগিতার জন্য মান না হারানো

বাজারে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আপনার প্রোডাক্ট খারাপ হয়ে গেলে আপনার ব্যবসার ক্ষতি হতে বেশি সময় লাগবেনা। কারণ সুন্দর বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা চালানোও কিন্তু বড় ব্যাপার। আমাদের দেশেই কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুই তিনজন বাজে মন্তব্য করলেও সবাই কিন্তু বিশ্বাস করেনা। তার কারণ তারা সবসময় চেষ্টা করে বাজারের প্রতিযোগিতা নয় বরং ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে দরকার পণ্যের মান ঠিক রাখা। আবার কিছু উদ্যোক্তা বেশি লাভ খুঁজতে গিয়ে আজকে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন।

১০. সহকর্মী ও কর্মচারীদের সাথে সুসম্পর্ক

কর্মীচারীরা আপনার প্রতিষ্ঠানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাদের সাথে চেষ্টা করবেন সবসময় সুসম্পর্ক রাখতে।কারণ তারা আপনার আইডিয়া গুলোকে কাজের মাধ্যমে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার। যদি আপনি তাদের সাথে রূঢ় ব্যবহার, কথা বলেন, ঠিকমতো পেমেন্ট না করেন তাহলে তারা আপনার সাথে কাজ করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। তাদের পরিবারের সাথে যদি সুসম্পর্ক রাখতে পারেন তাহলে কিন্তু আরো ভালো। তাদের মাঝে থেকে কেউ যদি কোন ধারণা দেয় তবে সেটা শোনা অথবা আপনি যদি দেখেন সেটা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে তবে সেটাকে গ্রহণ করা।আবার এমন না যে তাদেরকে বেশি স্বাধীনতার মাঝে রাখবেন। তাহলে কাজের গতি হারাবেন। বাংলায় সবাই যেমন বলে উপরে কঠিন, ভেতরে নরম। এমনটা হওয়ার চেষ্টা করবেন।

১১. সামাজিকতা বজায় রাখা

যে মানুষ সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার ও কথা বলে তাকে কিন্তু সবাই পছন্দ করে। তাই চেষ্টা করবেন ক্রেতা, ক্লায়েন্ট, পার্টনারকে নিয়ে সাধ্যমতো অনুষ্ঠান করা। এছাড়াও পণ্যের ভালোমন্দ জানতে হলেও ক্রেতার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করতে হবে।যাদের থেকে ঋণ নেন সেটি পরিশোধ হলেও পরবর্তীতে যোগাযোগ রাখা। কারণ কিছু সময় দেখবেন ঋণ পরিশোধে সময় লাগলেও আপনাকে প্রেশার দিবেনা।

১২. চারপাশ থেকে শিক্ষা নেওয়া

আপনার চলমান ব্যবসার মাঝে নতুন বা সৃষ্টিশীলতার জন্য দরকার চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সেখান থেকে দরকার হয় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমীতার উদ্ভব করা।আরবিতে একটা কথা আছে, “দোলনা হতে কবর পর্যন্ত ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করো।” আপনি আজ কোন বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে এই নয় যে আপনার আর শেখার দরকার নেই। বরং যে কারো থেকেই আপনি শিখতে পারবেন।

নতুন ব্যবসা বা নতুন বছর অথবা নতুন উদ্যোক্তা মানেই কিন্তু চ্যালেঞ্জিং গ্রহণ করা। তাই দৃষ্টি ও চিন্তাকে প্রসারিত করে নতুন বা সৃষ্টিশীল উদ্যোগকে নিয়েই এগিয়ে যাওয়াটা একজন সফল উদ্যোক্তার মূলমন্ত্র।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post