এখন সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার!

 এখন সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার!

চিন্তা করতে পারার সক্ষমতা মানুষের বড় বৈশিষ্ট্য। এই চিন্তাভাবনার কাজটি সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয় বুদ্ধিমত্তা। চিন্তাভাবনা ও স্মৃতি- এ দুইটি মূলের ওপর গড়ে ওঠে ‘বুদ্ধিমত্তা’। আর এই বুদ্ধিমত্তা মানুষের ভেতরে থাকে প্রাকৃতিকভাবেই। অর্থাৎ, মানুষ জন্মগতভাবেই বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। ধীরে ধীরে বয়স ও অভিজ্ঞতার কারণে ক্রমান্বয়ে সেগুলো বৃদ্ধি পায়।

আর মানুষের বাইরে, অর্থাৎ যন্ত্রে ব্যবহৃত বুদ্ধিমত্তাকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি যন্ত্র তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণপূর্বক নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। প্রাকৃতিকভাবে নয়, মানুষ নিজে যন্ত্রে এই বুদ্ধিমত্তা সংযোজন করে দেয়।

তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে কৃত্রিমভাবে প্রদত্ত এই বুদ্ধিমত্তা বাস্তবায়ন হয় প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইংরেজী রুপ-ই হলো Artificial Intelligence, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আজকাল যার সংস্পর্শে আমরা সবাই-ই আসছি।

অনলাইনে ফরম পূরণ থেকে শুরু করে রোবটের মানুষের ভাষা বুঝতে পারা বা গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়া- এগুলো তাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হলেও আদতে এগুলো কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়। বর্তমান অনলাইনভিত্তিক এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়তা করছে নানাভাবে।

ইতিহাসঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান টিউরিং। ১৯৫০ সালে টিউরিং এর করা ‘টিউরিং টেস্ট’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূলভিত্তি স্থাপন করে দেয়। কোন যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কি না তা বুঝতে পারা যায় এই টেস্টের মাধ্যমে। কোন যন্ত্র টিউরিং টেস্ট পার করতে পারলেই বলা হয় সে যন্ত্রটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে। এরপর ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন ম্যাকার্থি সর্বপ্রথম ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ পরিভাষার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন।

ছবিঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভ্রমণকাল

এরপর থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিন দিন বিস্তার লাভ করেছে এবং অনলাইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ে এখনও তা বিস্তার লাভ করছে। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ নিম্নস্তরের বুদ্ধিমত্তা, উচ্চস্তরের বুদ্ধিমত্তা এবং অতি উচ্চস্তরের বুদ্ধিমত্তা।

সুবিধাঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজতর হচ্ছে। কম্পিউটার সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট এবং রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হয়।

স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালানোসহ বিভিন্ন প্রতিযোগীতাতেও এর ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি, আবহাওয়া, মার্কেটিং, শহর ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, আর্থিক সেবাদান, ব্যাংকিং বা সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আমরা দেখতে পাই। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সার্জারি, এক্স-রে বা অপারেশনের মতো কাজগুলো সহজে সম্পন্ন করা যাচ্ছে এর দ্বারা। দুর্গম জায়গায় বা গভীর সমুদ্র তলদেশে খনিজ সম্পদ, পেট্রোল ও জ্বালানী অনুসন্ধান করা যায় সহজে।

২০৪৯ সালের মধ্যে রোবট এর মাধ্যমে বেস্ট সেলার বই লেখা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন। পরবর্তী দেড়শো বছরের মধ্যেই মানুষের সব কাজই বুদ্ধিমান যন্ত্রের মাধ্যমে করা যাবে বলে ধারণা করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদল।

অসুবিধাঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের দ্বারা যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ার কারণে চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে। ফলে মানুষের সৃজনশীলতা দিন দিন কমে যাবে। আর এর প্রয়োগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যক্রম বাড়বে বলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। আবার এর প্রয়োগের জন্য খরচও বৃদ্ধি পাবে।

ভুয়া তথ্য প্রচার, সিস্টেম হ্যাক করা অথবা ড্রোনকে ক্ষেপনাস্ত্রে রূপান্তরের মাধ্যমে মানবজাতির বিনাশে কাজও করা যেতে পারে। এরইমধ্যে স্টিফেন হকিংসহ পৃথিবীর বড় বড় প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন।

প্রতিটি জিনিসেরই সুবিধা-অসুবিধা থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারেও ঠিক তাই। আমাদেরকেই লক্ষ্য রাখতে হবে এই তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে আমরা কিসের জন্যে এর ব্যবহার করছি আর এর মাধ্যমে নিজেদের কতটুকু উন্নতি ঘটাতে পারছি। তাতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

লিখেছেনঃ শাহনেওয়াজ আহমদ

RedLive

Related post