কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাঃ একবিংশ শতাব্দীর সেরা প্রযুক্তির আদ্যোপান্ত – ২

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাঃ একবিংশ শতাব্দীর সেরা প্রযুক্তির আদ্যোপান্ত – ২

ইতোপূর্বে, আমরা জেনেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নাটকীয় ইতিহাস ও আজকের দিনের প্রযুক্তির সুপার হিরোর উত্থান-পত্থানের গল্প। কিন্তু এখন এর গাঠনিক বৈশিষ্ট জানার পালা। কিভাবে এআই এর কাজ সম্পাদিত হয় তা নিয়েও হবে বিষদ আলোচনা। আমরা অনেকেই এআই এর সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা সম্পর্কে অবগত নই। আমরা প্রায়ই মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিং এর কথা শুনে থাকি; আবার ডেটা সায়েন্স ও বিগ ডেটার কথাও শুনে থাকি। কিন্তু সমস্যা হয় এর স্পষ্ট ধারণা নিয়ে, আমরা দ্বন্দ্বে পড়ি এইটা ভেবে যে, এআই এর সাথে এদের সম্পর্ক কি? এদের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও কেমন সম্পর্ক রয়েছে বা কেমন পার্থক্য রয়েছে? এইসব নিয়েই হবে এই অংশের আলোচনা।

এআই কে তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে তিনটি মৌলিক ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

  •  ন্যারো বা উইক এআই
  • জেনারেল বা স্ট্রোং এআই এবং
  • সুপারিন্টেলিজেন্স এআই

যেসকল এআই মেশিন বা সফটওয়্যার খুব স্বল্প পরিসরের ক্ষমতায় লিমিটেড থাকে তাদের উইক বা ন্যারো এআই বলা হয় (এ ক্ষেত্রে আমরা সনির অ্যাইবো’র কথা ভাবতে পারি)। আর যেসকল এআই মেশিন বা সফটওয়্যার মানুষের মত বুদ্ধিমত্তা ও বিচার ক্ষমতা সম্পন্ন, তাদের জেনারেল বা স্ট্রোং এআই বলা হয় (এ ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীর প্রথম রোবট নাগরিক সোফিয়া’র কথা ভাবতে পারি)। আর যেসকল এআই মেশিন বা সফটওয়্যার মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমত্তা ও বিচার ক্ষমতা সম্পন্ন, তাদের সুপারিন্টেলিজেন্স এআই বলা হয় (এক্ষেত্রে কোনো রোবট এখনো তৈরি হয়নি যা মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমত্তা ও বিচার ক্ষমতা সম্পন্ন) ।

এআই ডায়াগ্রাম

উপরের ডায়াগ্রামের সর্বনিম্ন বা ভিতরের স্তরটি হলো ডিপ লার্নিং। মেশিন কে গভীরভাবে বা বিষদভাবে কিছু শেখানোর ব্যাপারটা এই ডিপ লার্নিং এ চলে আসে। আর ডিপ লার্নিং নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক। ডিপ লার্নিং এর পুরো ব্যাপারটা খোলসের মতো লেগে থাকে নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক। এখন ব্যাপারটা একটু টেকনিক্যালভাবে বুঝা যাক, “যখন নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে কোনো একটি স্মার্ট কাজ মেশিন দিয়ে করানো হয়, তখনি এটাকে বলে ডিপ লার্নিং”।

এখন প্রশ্ন হলো, এই নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক কি?

নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে জানতে হলে আমাদের আগে যে বিষয়টি জানতে হবে তাহলো, পার্সেপট্রোন (Perceptron)। পার্সেপট্রোন ২ রকমের।

১। সিংগেল লেয়ার পার্সেপট্রোন (Single Layer Perceptron) এবং ২। মাল্টিলেয়ার পার্সেপট্রোন (Multilayer Perceptron) ।

আগে মূলত সিংগেল লেয়ার নিয়েই কাজ করা হতো। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে এখন মাল্টিলেয়ার চলে এসেছে। সিংগেল লেয়ার পার্সেপট্রোন বলতে বুঝায় একটি বাইনারি ক্লাসিফিকেশন, অর্থাৎ কোনো একটা অবজেক্টে দু’টি নির্দিষ্ট ক্লাসে ভাগ করা যায় কিনা (দু’টির বেশি ক্লাস থাকতে পারবে না)? যারা বাইনারি সম্পর্কে জানেন তারা অবশ্যই বুঝে গেছেন ব্যাপারটা মূলত কি! বাইনারি ক্লাসিফিকেশন বলতে বুঝায় দু’টি এমন ক্লাস যার মধ্যে অবজেক্ট থাকবে অথবা থাকবেনা। অথবা সিদ্ধান্ত নিবে বা নিবে না। কোনো কিছুর জন্য YES অথবা NO ক্লাসের মধ্যে রাখা। ধরুন, মেশিন কে বুঝতে হবে আপনার রুমের লাইট অফ নাকি অন। অর্থাৎ সব অবজেক্টের জন্য মাত্র দুইটা সিদ্ধান্ত ০ অথবা ১। এরকম অনেক গুলো পার্সেপট্রোন একসাথে কাজ করানো হলে একে মাল্টিলেয়ার পার্সেপট্রোন বলা হয়, আর তখনি একে নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক বলা হয়। অর্থাৎ অনেক গুলো পার্সেপট্রোন এর নেটওয়ার্ক হয়ে এক বা একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজ করাকে বুঝায়।

অনেকের কাছেই পার্সেপট্রোন ব্যাপারটা স্পষ্ট নাও হতে পারে, তাই আমরা এর স্পষ্ট ধারণা পেতে হিউম্যান ব্রেইন কিভাবে কাজ করে তা একটু বুঝার চেষ্টা করবো। মূলত নিউরোন কিভাবে কাজ করে এইটা বুঝতে পারলেই আমাদের পার্সেপট্রোন ও নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক বুঝা হয়ে যাবে। আশা করি, সবাই নিউরোন কি জানেন। তবুও নিউরোন এর একটা মৌলিক কনসেপ্ট তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

স্ট্রাকচার অব নিউরন

নিউরোন হলো ব্রেইন এর মৌলিক একক। নিউরোন এর প্রধান ৩ টি অংশ থাকে (উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে) ।

১। ডেন্ড্রাইটস (Dendrities),

২। সোমা বা সেল বডি এবং

৩। আক্সোন (Axon);

উপরের চিত্রের সেল বডি বা সোমা থেকে বেরিয়ে আসা ছোট ছোট শাখা গুলোর প্রত্যেকটি হলো ডেন্ট্রাইট, নিউরোনের এই অংশে ইনপুট আসে। এরপর সেল বডি বা সোমা অংশে লজিক ক্যালকুলেশন বা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেজাল্ট আউটপুট হিসেবে আক্সোন দিয়ে বের হয়। এভাবে এই আউটপুট আরেকটি নিউরোন এর ইনপুট হিসেবে ডেন্ট্রাইট দিয়ে প্রবেশ করে, সেল বডি তে রেজাল্ট ক্যালকুলেশনের পর আক্সোন দিয়ে চলে যায় আরেকটি ডেন্ট্রাইটে অন্য নিউরোনের জন্য। এভাবেই পুরো ব্রেইন জুড়ে চলতে থাকে বিশাল লজিক নেটওয়ার্কিং এর কাজ।

স্ট্রাকচার অব সিংগেল লেয়ার পার্সেপট্রোন

ঠিক একইরকমভাবে সিংগেল লেয়ার পার্সেপট্রোন এর ক্ষেত্রে ইনপুট X1, X2, X3, ….Xn (একে ইনপুট লেয়ার বলা হয় একটি পার্সেপট্রোনের) যথাক্রমে W1, W2, W3, …Wn (একে হিডেন লেয়ার বলা হয় একটি পার্সেপট্রোনের) দিয়ে প্রবেশ করে Sum function এ গিয়ে ক্যালকুলেশন শেষ করে Y output হয়ে Activation function (একে আউটপুট লেয়ার বলা হয় একটি পার্সেপট্রোনের) এ যায়। এভাবে একটি পার্সেপট্রোনের রেজাল্ট ইনপুট হয়ে অন্য পার্সেপট্রোনে যায়। এভাবে অনেক গুলো সিংগেল লেয়ার পার্সেপট্রোন কাজ করেই মাল্টিলেয়ার পার্সেপট্রোন এর কাজ সম্পন্ন করে। আর এই মাল্টিলেয়ার পার্সেপট্রোন এর পুরো ঘটনাটিকে বলা হয় নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক।

তাহলে মেশিন লার্নিং কি? মেশিন লার্নিং হলো ডিপ লার্নিং, নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য কিছু মডেল এর সমন্বয়। অন্যান্য মডেল গুলো বলতে স্ট্যাটিস্টিকাল কিছু অ্যালগোরিদম, ডিসিশন ট্রি (Decision Tree), র‍্যান্ডোম ফরেস্ট (Randon Forest), লিনিয়ার রিগ্রেশন (Linear Regression), ভেক্টর সাপোর্ট মেশিন (Vector Support Machine) এবং কে-মিন্স ক্লাস্টার (K-Means Cluster) । একটা মেশিন লার্নিং সমস্যা দুইভাবে সমাধান করা যেতে পারে; স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যালগোরিদম ব্যাবহার করে অথবা ডিপ লার্নিং ফ্রেমওয়ার্ক ব্যাবহার করে।

মেশিন লার্নিং শিখারও ৩ টি প্রসেস রয়েছে।

  • সুপারভাইজড লার্নিং (Supervised Learning)
  • আনসুপারভাইজড লার্নিং (Unsupervised Learning)
  • রেইনফোর্সমেন্ট লার্নিং (Reinforcement Learning)

রেইনফোর্সমেন্ট লার্নিং কে সেমি-সুপারভাইজড লার্নিং (Semi-supervised Learning) ও বলা হয়।

সুপারভাইজড লার্নিং এর ডাটাসেটের মধ্যে আবার ২ টা অংশ, লেভেল এবং ফিচার। আনসুপারভাইজড লার্নিং ডাটাসেটের কোনো লেভেল থাকেনা, শুধু ফিচার থাকে। ফিচারের মাধ্যমে ডাটার সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করা হয়। ফিচার আর লেভেল এর বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে করবো।

এবার আসি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কাঙ্খিত কনসেপ্ট এর স্ট্রাকচার এর ব্যাপারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো ডিপ লার্নিং, নিউর‍্যাল নেটওয়ার্ক ও মেশিং লার্নিং এর সাথে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়্যাজ প্রসেসিং, ভিশন, এক্সপার্ট সিস্টেম, ফাজি লজিক, স্পিচ (স্পিচ টু টেক্সট এবং টেক্সট টু স্পিচ), ভিশন (ইমেজ রেকোগনিশন ও মেশিন ভিশন) ও রোবটিক্স এর সমন্বয়।

এক্সপার্ট সিস্টেমঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়, এক্সপার্ট সিস্টেম একটি কম্পিউটার সিস্টেম যা কোনও হিউম্যান-এক্সপার্টের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অনুকরণ করে। এক্সপার্ট সিস্টেমগুলি প্রচলিত প্রক্রিয়াজাত কোডের পরিবর্তে মূলত-তখন বিধি হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে জ্ঞানের সংস্থাগুলির মাধ্যমে যুক্তি দিয়ে জটিল সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

এক্সপার্ট সিস্টেমের একটি সমস্যা ডোমেন (Problem Domain) রয়েছে, যেমন, মেডিসিন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ইত্যাদি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট জ্ঞান। এক্সপার্ট সিস্টেমের জ্ঞানকে জ্ঞান ভিত্তি বলা হয় এবং এতে সিস্টেমে লোড এবং পরীক্ষা করা হয়েছে এমন একত্রিত অভিজ্ঞতা থাকে। অনেকগুলি অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমগুলির মতো, এক্সপার্ট সিস্টেমের জ্ঞানটি জ্ঞানের ভিত্তিতে অ্যাড-অন(Add-ones) বা নিয়মগুলিতে সংযোজন দিয়ে বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ সিস্টেমে যত বেশি অভিজ্ঞতা প্রবেশ করাবে তত বেশি সিস্টেম তার কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে।

বিশেষজ্ঞ সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য:

  • অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল
  • নির্ভরযোগ্য
  • বোধগম্য
  • উচ্চ পারদর্শিতা

ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়্যাজ প্রসেসিংঃ

ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়্যাজ প্রসেসিং (NLP) এর মধ্যে

 ১. কনটেন্ট এক্সট্র্যাকশন

২. ক্লাসিফিকেশনঃ

  • ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়্যাজ আন্ডার্সটেন্ডিং (লেক্সিক্যাল এম্বিগ্যুইটি, সিনথেটিক্যাল এম্বিগ্যুইটি এবং রেফারেন্টাল এম্বিগ্যুইটি)।
  • ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়্যাজ জেনারেশন (টেক্সট প্ল্যানিং, সেন্টেন্স প্ল্যানিং এবং টেক্সট রিয়ালাইজেশন ও লেভেল অব NLP এর লেক্সিক্যাল, সিনথেটিক্যাল, সিমেন্টিক, মরফোলজিকাল, ফোনোলজিকাল, প্রোগ্রাম্যাটিকাল এনালাইসিস সমূহ ও ডিসকোর্স ইন্টিগ্রেশন)

এর মাধ্যমে এআই এর আন্ডার্সটেন্ডঅ্যাবিলিটি বা বোধগম্যতা বাড়ানো হয়।

ফাজি লজিকঃ


Fuzzy Logic হলো “True or False” (1 or 0) বুলিয়ান লজিকের পরিবর্তে Degrees of truth এর উপর ভিত্তি করে কম্পিউটিংয়ের একটি পদ্ধতি যা আধুনিক কম্পিউটার ভিত্তিক। ফাজি লজিকের ধারণাটি প্রথমে ১৯৬০-এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ লোটফি জাদেহ উন্নীত করেছিলেন। ডাঃ জাদেহ Natural Language কম্পিউটারকে বোঝানোর সমস্যা নিয়ে কাজ করছিলেন। Natural Language কে (জীবনের বেশিরভাগ ক্রিয়াকলাপ এবং প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্ব) সহজেই 0 এবং 1 এর নিখুঁত শর্তগুলিতে অনুবাদ করা যায় না ( কম্পিউটারকে কিছু তথ্য খাওয়ানো হয়, যেন প্রায়শই কম্পিউটার ফলাফল দিতে পারে), NLP এর লজিকটি যেভাবে কাজ করে তা বাইনারি বা বুলিয়ান লজিক কেবল এটির একটি বিশেষ ঘটনা হিসাবে দেখতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে কিংবা সবধরনের প্রবলেম সলভিং-এর ক্ষেত্রে বাইনারি বা বুলিয়ান লজিক এর মাধ্যমে এক্সপ্রেশন ও ক্যালকুলেশন করা সম্ভব নয়।

ফাজি লজিকের কনসেপ্ট ব্যাপকভাবে যেসব ফিল্ডে কাজ করে তাঁর মধ্যে অন্যতম হলোঃ

  • মহাকাশযানের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ
  • স্যাটেলাইটের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ
  • এয়ারক্রাফটের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ
  • নিষ্ক্রিয় গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষণযোগ্য ফাজি সিস্টেম
  • স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালনের জন্য শিফ্ট শিডিউলিং পদ্ধতি
  • ইন্টেলিজেন্ট হাইওয়ে সিস্টেম
  • ট্রাফিক কন্ট্রোল
  • অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের দক্ষতা উন্নয়ন
  • ডিসিশন মেকিং সাপোর্ট সিস্টেম
  • সমুদ্রের নিচের টার্গেট রেকোগনেশন
  • থার্মাল ইনফ্রাড ইমেজের অটোমেটিক টার্গেট রেকোগনেশন

এছাড়াও নৌ সিদ্ধান্ত সমর্থন সহায়তা, একটি হাইপারভেলোসিটি ইন্টারসেপ্টারের নিয়ন্ত্রণ, ফাজি ন্যাটো (NATO) সিদ্ধান্ত নেয়ার মডেলিং, ভিডিও ক্যামেরার অটোমেটিক এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ, একটি পরিষ্কার কক্ষের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, ওয়শিং মেশিন টাইমিং, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ভ্যাকিউম ক্লিনার, ব্যাংকনোট ট্রান্সফার কন্ট্রোল, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্টোক মার্কেট প্রেডিকশন, সিমেন্ট ভাটা তাপ এক্সচেঞ্জার নিয়ন্ত্রণ, সক্রিয় কাদা বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট কন্ট্রোল, অটোপাইলট শিপ, অপটিমাল রুট সিলেকশন, অটোনোমাস আন্ডারওয়াটার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, শিপ স্টেয়ারিং, মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সাপোর্ট সিস্টেম, অ্যানাসথেসিয়া চলাকালিন ধমনী চাপ নিয়ন্ত্রণ, অ্যানাসথেসিয়ার মাল্টিভেরিয়েবল কন্ট্রোল, আলঝেইমার রোগীদের নিউরোপ্যাথোলজিকাল ফলাফলগুলো মডেলিং, রেডিওলজি ডায়াগনোসিস, ডায়াবেটিস ও মূত্রথলির ক্যান্সার এর ফাজি ইনফেরেন্স ডায়াগনোসিস, ফাজি লজিক ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ও প্রিভেনশন, ফাজি লজিক ফেসিয়াল ক্যারাক্টারেস্টিক এনালাইসিস, সিকিউরিটি ট্রেডিং এর জন্য ডিসিশন সিস্টেমস, বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি এপ্লিকেশন্স, অটোমেটিক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন অপারেশন , ট্রেন সিডিউল কন্ট্রোল, রেইলওয়ে এক্সেলেরেশন, ফাজি লজিক স্পিচ রেকোগনেশন, ফাজি লজিক হ্যান্ডরাইটিং রেকোগনেশন, কমান্ড এনালাইসিস, ফাজি ইমেজ সার্চ এবং ফাজি লজিক Human Behavior এনালাইসিস সহ নানারকম এআই ভিত্তিক ও নন-এআই ভিত্তিক টেকনোলজিতে ফাজি লজিকের ব্যাবহার রয়েছে।

স্পিচ ও ভিশনঃ

এআই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্পিচ ও ভিশনের ব্যাপারটাও অনেক মজার। ভাবতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি চলে আসে, যে একটি মেশিন বা সফটওয়্যার আমাদের সাথে কথা বলবে, দেখবে আবার আমাদেরকে শুনবে। শুধু তাও নয়, রিয়েল ওয়ার্ল্ড এবং রিয়েলটাইম যেকোনো অবজেক্টকে চিনতে পারা বুঝতে পারা একটি মেশিন বা সফটওয়্যার, অবশ্যই আমাদের মনে অনেক আগ্রহের জায়গা দখল করে থাকে।

স্পিচ রেকোগনেশন এর পাশাপাশি, মেশিন বা সফটওয়্যার কে স্পিচ টু টেক্সট এবং টেক্সট টু স্পিচ ট্রান্সফার করতে ও বুঝতে পারার সক্ষমতা প্রদান করাই হলো স্পিচ অংশের কাজ।

আবার ইমেজ রেকোগনেশন ও মেশিন ভিশনের সক্ষমতা এবং দেখে বুঝতে পারার সক্ষমতা প্রদান ভিশন অংশের কাজ।

রোবটিক্সঃ

রোবট কথাটি শুনলে মানুষের মাথায় প্রথমেই ভেসে উঠে হলিউড নির্মিত বিখ্যাত সব সিনেমা গুলোর কথা। মনে আছে, অস্কার বিজয়ী ওয়াল-ই (Wall-E) সিনেমার কথা? আমার মতে, সবচেয়ে রোমান্টিক অনুভূতিজাতক সিনেমা। এছাড়াও দ্য ম্যাট্রিক্স সিনেমার ভয়াবহ পরিণতিও আমাদের দিয়েছে থ্রিলিং ও একশনের মিশ্র অনুভূতি। এই সিনেমা এমনভাবে মানুষের মস্তিষ্কে গেঁথে আছে যে, রোবট নিয়ে এখন বিশাল তর্ক চলে আসে; আদৌ কি রোবট মানব কল্যাণে নাকি মানবজাতির ধ্বংসে? এই তর্কে জড়ানোর কোনো মানে হয় না। তাই রোবটিক্স কি সেখানে ফিরে যাই।

রোবটিক্স হলো বিজ্ঞান, প্রোকৌশল ও প্রযুক্তি (এককথায় এআই সম্পন্ন হার্ডওয়্যার বা মেশিন) দ্বারা নির্মিত মেশিন যাকে রোবট বলা হয়; যা মানুষের ক্রিয়াগুলির প্রতিলিপি বা বিকল্প করে।

এদের মধ্যে প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে রয়েছে- প্রিপ্রোগ্রামড রোবটস (Preprogrammed Robots), হিউম্যানোয়েড রোবটস (Humanoid Robots), অটোনোমাস রোবটস (Autonomous Robots), টেলিপোর্টেড রোবটস (Teleoperated Robots) এবং অগমেন্টিং রোবটস (Augmenting Robots) ।

লাইন ফলোয়ার রোবট, সকার বট, ফাইটিং বট এগুলো প্রিপ্রোগ্রামড রোবট।  Herbert Televox (প্রথম হিউম্যানোয়েড রোবোট), Honda Debuts ASIMO, Aldebaran Robotics এর Nao, NASA এবং General Motors এর Roboaut 2, Softbank Robotics এর Pepper এবং Hanson Robotics এর Sophia হলো হিউম্যানোয়েড রোবট। NASA’র Mars rovers MER-A(Spirit Rover) এবং MER-B (Opportunity Rover) অটোনোমাস রোবট।

টেলিপোর্টেড রোবট বলতে টেলিপ্রেজেন্স রোবট, যা আপনাকে ভিডিও কনফারেন্সিং অভিজ্ঞতায় কোথাও বেড়াতে বা কাউকে দেখতে অনুমতি দেয়। কল শিডিওল করার দরকার হয় না, টেলিপোর্ট ইন করে নিজের পছন্দ মতো নিজেকে যেকোনো জায়গায় সন্ধান করা যায়। এই রোবট তৈরির মূল উদ্দেশ্যই হলো যেকোনো জায়গায় থাকা, যেকোনো জায়গা থেকে। টেলিপোর্ট রোবটের মাধ্যমে, রাজ্য, দেশ এবং বিশ্বজুড়ে কথোপকথন আরও আরামদায়ক এবং পরিচিত অভিজ্ঞতার সুযোগদেয়। আপনাকে চারপাশে দেখানোর জন্য আর আপনার ভিডিও কলটির প্রাপকের উপর যেনো নির্ভর করতে না হয়, আপনি পরিস্থিতিগুলির সমস্ত পদ্ধতিতে নিজের মতো করে অন্বেষণ করতে এবং আচরণ করতে পারেন। Ava 500, PadBot P2, PadBot P3 এবং VGo  টেলিপোর্টেড রোবট।

অগমেন্টিং রোবট বলতে সাধারণত কোনো ব্যক্তির ইতিমধ্যে থাকা ক্ষমতাগুলি প্রতিস্থাপন করে বা কোনো ব্যক্তি যে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে তা প্রতিস্থাপন করে। যেমনঃ নিচে HAL দ্বারা তৈরি বায়োনিক ট্রাউজার ২ জন পড়ে আছেন।

বায়োনিক ট্রাউজার

এইতো কিছুদিন আগেই, অক্টোবর ২০২০ এ জাপানের একজন ৭২ বছরের বৃদ্ধাকে বায়োনিক আই(Bionic Eye) অপরেশনের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রদান করা হয়। এছাড়াও মানুষের দেহে আর্টিফিশিয়াল হার্ট প্রতিস্থাপন করা ও সুদূর ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ব্রেইন প্রতিস্থাপনেরও চিন্তা করা হচ্ছে।

এছাড়াও রয়েছে মানুষের ব্যাবহার ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটস, কনজিউমার রোবটস, ডিজাস্টার রেস্পন্স রোবটস, ড্রোনস, এজুকেশন রোবটস, ইন্টারটেইনমেন্ট রোবটস, মেডিকেল রোবটস, সিকিউরিটি ও মিলিটারি রোবটস, রিসার্চ রোবটস, অ্যারোস্পেস রোবটস, অটোমেটিক সেলফড্রাভিং রোবটস এবং অ্যাকোয়াটিক রোবটস। ম্যানুফেকচারিং এর উপর ভিত্তি করে রয়েছে – আর্টিকিউলেটেড রোবটস, SCARA Robots, ডেল্টা রোবটস এবং কার্তেসিয়ান রোবটস।

রোবট তাঁর কার্যক্ষমতা, বৈশিষ্ট, ইন্ডাস্ট্রি ও প্রয়োজন ভেদে বিভিন্ন শৃঙ্খলায় জড়িয়ে রয়েছে। এর আলোচনা শেষ হবার নয়; তবুও আজ এখানেই শেষ করছি। সবশেষে আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অথবা রোবটিক্স এর কোন বিষয়টি আপনাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের জায়গা তৈরি করেছে?

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ রুবেল দেওয়ান

ছদ্মনামঃ রাহসান

RedLive

Related post