গ্লোবাল ওর্য়ামিং সম্পর্কে যত জানা অজানা কথা!

 গ্লোবাল ওর্য়ামিং সম্পর্কে যত জানা অজানা কথা!

গ্লোবাল ওর্য়ামিং’ যার বাংলা প্রতিশব্দ করলে দাঁড়ায় ’বৈশ্বিক উষ্ণায়ন’ ,ইদানিংকালে আমরা হরহামেশাই এই শব্দদ্বয় শুনে থাকি। একবিংশ শতাব্দীর এক ত্রাসের নাম এই ’গ্লোবাল ওর্য়ামিং’। শুধু কি তাই! এটা এমন এক ধরনের সমস্যা যেটি কেবল একটি আঞ্চলিক গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সমগ্র বিশ্বের কেউই এর অভিশাপ হতে মুক্ত নয়।

জলবায়ু পরির্বতনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে। আসুন ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করা যাক। ধরুন একটি বরফ খন্ডকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস টেম্পেরেচারে রাখা হলো, একই সাথে অপর একটি বরফ খন্ডকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস টেম্পেরেচারে রাখা হলো। এর ফলাফল কি হবে তা সহজেই অনুমেয়! হয়তো এক টুকরো বরফ খন্ড গলে যাওয়া নিয়ে এত ঢাক পেটানোর প্রয়োজনও কেউই বোধ করবে না। তবে যে বিষয়টি বুঝাতে বরফ খন্ডের অবতারণা করা হয়েছে সেটি নিছক ফেলনা কিছু নয়। যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন পৃথিবীর মেরুদ্বয় সুবিশাল বরফখন্ড দ্বারা আচ্ছাদিত। এইসব অঞ্চল সাধারণত ’ফ্রিজড জোন’ নামে পরিচিত।

পৃথিবী পৃষ্ঠের টেম্পেরেচার বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় মেরুদ্বয়ের এই এলাকাগুলোতে। ফলশ্রুতিতে বরফখন্ডতে ফাটলসহ, গলে যাওয়ার মতো ঘটনা খুব দ্রুতহারেই বেড়ে গিয়েছে। যা বিগত শতাব্দীর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। মেরুদ্বয়ের বরফ গলা নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথার দরকার কি? এই প্রশ্ন হয়তো আমাদের মনে উঁকি দিতে পারে। এর উত্তরও খুব সহজ! বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়, আর সেই পানি মিশে যাবে সমুদ্রের জলধারায়। ব্যাপারটা এতক্ষণে ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। এতে করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে, উচ্চতা বেড়ে যাওয়া মানে উপকূলীয় যেসব নিম্ন এলাকা রয়েছে তা অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এবার হয়তো আমরা ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরেছি।

অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি বাদ দিয়ে যদি শুধু এর ব্যাপকতা বুঝতে যায় তাহলে তা মোটেও সুখকর কিছু নয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এভাবে চোখের পলকেই যেকোনো সময় এই মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাহলে এর জন্য দায়ী কারা? কোন কারণেই বা বৈশ্বিক উষ্ণতা লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে? এর দায়ভার কি শুধু উন্নত বিশ্বসমূহের? চলুন জেনে নেওয়া যাক। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড ডাইঅক্সাইড কে। হ্যাঁ, প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে গ্যাস টি শরীর থেকে বেড়িয়ে যায় সেটিই। তাহলে কি প্রশ্বাস নেওয়াটাই বন্ধ করে দিতে হবে! নিশ্চয়ই না। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? শিল্প বিপ্লবের পর থেকে শুরু করে আজ যে আমরা উন্নত প্রযুক্তির ছোয়ায় নিজেদের জীবনকে অনেক আরামদায়ক করে তুলেছি, এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবেই পরিবেশে অতিমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানীর বাড়ন্ত ব্যবহার এই কার্বন বৃদ্ধির প্রধান কারণ।কিন্ত CO2 গ্যাস এর পরিমাণ বাড়লে সমস্যা কোথায়? আমরা সূর্য থেকে আলো ও তাপ পেয়ে থাকি,এর প্রয়োজনীয় অংশটুকু বাদে বাকি তাপ বিকিরিত হয়ে আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে বেরিয়ে যায়। কার্বন সহ অন্যান্য ‘গ্রীণ হাউজ গ্যাস’ খুব সহজেই এই তাপকে ধরে রাখতে পারে। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়া মানে তাপধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যাওয়া। কার্বন ডাই-অক্সাইড অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় ভারী বিধায় ভূ-পৃষ্ঠ এর কাছাকাছি অবস্থান করে। এত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড এর ধারণকৃত তাপ সামগ্রিকভাবেই বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলাফল হলো এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং।

বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য কমবেশি আমরা শিল্পোন্নত দেশসমূহকেই দুষে থাকি এবং সেটা মিথ্যেও নয়। কেননা এসব দেশ থেকেই প্রতি বছর বিলিয়ন টন কার্বন পরিবেশে উন্মুক্ত হচ্ছে। যার জন্য ভুগতে হচ্ছে আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে। আগেই বলা হয়েছে এটা কোনো আঞ্চলিক ব্যাধি নয় যে তাকে অঞ্চল বেধেই দমন করা যাবে। এর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যার যার অবস্থান থেকে। কারণ দিনশেষে পৃথিবীটা আমাদের, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখার দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মের ওপর বর্তায়।

লিখেছেনঃচয়ন বড়ুয়া

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।