ছাত্রসমাজ বনাম অভিভাবক সমাজ

 ছাত্রসমাজ বনাম অভিভাবক সমাজ

“একটু মনযোগ দিয়ে পড় বাবা,তোকে যে ডাক্তার হতেই হবে”

“তুই যদি আবার মেডিকেলের পড়াশোনা  বাদ দিয়ে  কবিতা লিখা শুরু করিস,তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি”

উপরোক্ত কথাগুলো আমরা প্রায়ই বলতে শুনি কিংবা নিজেরাও এসবের স্বীকার হই। কিন্তু কেন? এভাবে অভিভাবকেরা আমাদের উপর এসব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন? কেনই বা আমরা চাইলেও কিছু করতে পারি না?

এসবের উত্তর লেখার চেষ্টা করবো এই আলোচনায়।

প্রথমেই আসা যাক, অভিভাবকেরা কেন তাদের সিদ্ধান্ত গুলো চাপিয়ে দেন এসবের কারণ খুঁজতে। প্রথমত তারা ভাবেন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হলেই ছেলে/মেয়ের অর্থনৈতিক চাহিদা নিয়ে আর সমস্যা থাকবেনা। পাশাপাশি নামডাক,প্রশংসা তো আছেই।তাদের ছেলে-মেয়েরা উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে।
°তারা ভাবেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেই ছেলে/মেয়ের সামাজিক মর্যাদায় সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে। সমাজে নিজেদের একটা কর্তৃত্ব থাকবে।

° অনেক বাবা-মা বিভিন্ন কারনে নিজেদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না। তাদের নিজেদের অতীত ব্যর্থতার ফলে অপূরণীয় স্বপ্ন/মনোভাব যেটা পূরণ হয়নি সেটা ছেলে-মেয়ের মাধ্যমে পূরণ করতে সচেষ্ট হন।


°অন্যান্য পেশার চেয়ে ডাক্তারি/ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা  তাদের কাছে অনেক বেশিই নিরাপদ বলে মনে হয়। অর্থাৎ তারা চাকুরি নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে আসেন। অন্যান্য  পেশায় যেমন রিস্ক থাকে সেটা উপরোক্ত দুই পেশায় থাকেনা বললেই চলে।

°আমাদের সমাজে উপরোক্ত পেশা সমূহকে অনেক বেশি মর্যাদা দেওয়া হয় এবং একইসাথে অন্যান্য পেশার মানুষদের নিয়ে প্রায় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ট্রলের শিকারে পরিণত করা হয়।

°আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় উপরোক্ত দুই পেশার শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের যতটা মেধাবী ভাবা হয় ঠিক ততটাই অবহেলা করা হয় অন্যান্য ক্ষেত্রে। ধরেই নেওয়া হয় ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটি হয় ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর যদি সে এটি না করে তাহলে বিভিন্নভাবে সমালোচনার স্বীকার হয়।

উপরোক্ত কারনগুলো মূলত মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

এবার যদি উপরোক্ত মনোভাব বদলাতে চাই তাহলে আমরা কি করতে পারি সেটাই এবার আলোচনা করবো।

প্রথমতই প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনের।

°জীবনমূখী শিক্ষার প্রয়োগও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

°সমাজে অভিভাবকদের  ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

° সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,নির্ভরশীলতা এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। যা মানুষকে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করবে।

সমাজের প্রত্যেকটা পেশাকেই সম্মানের চোখে তাকাতে হবে। বুঝতে হবে প্রত্যেকটি পেশা প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি পেশার মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজের জীবনের সর্বোচ্চ বিকাশ অর্জনে সক্ষম হতে পারে।

 সমাজের জন্যে কিছু বিশেষ কাজ করতে পারে।সর্বোপরি সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। সমাজের কুসংস্কারের বিপক্ষে কথা বলতে পারে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

আর এই সচেতনতা তৈরির জন্যে প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের সেমিনার,আলোচনা অনুষ্ঠান, অভিভাবকদের সাথে শিক্ষক/স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ।

লিখেছেন : ইমরান হোসেন ,ক্যাম্পাস এক্সিকিউটিভ, রেড লাইভ

Brinty Saha

Related post