ছাদের সৌন্দর্য কিংবা প্রয়োজন মেটাতে ছাদ বাগান

 ছাদের সৌন্দর্য কিংবা প্রয়োজন মেটাতে ছাদ বাগান

Image Source : Pixabay

আমাদের ঢাকা শহরে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ছাদ আছে। ছাদে বাগান করে লাভটা হচ্ছে এই যে, তার সুন্দর একটা সময় কাটানো হচ্ছে। একটা শখ পূরণ সম্ভব হচ্ছে। মানুষজন ট্র্যাডিশনাল যে সমস্ত কাজ কর্ম করে থাকে, তা থেকে একটা ভিন্নধর্মী কাজের সাথে  মিশে যেতে পারছে। তাছাড়াও নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি, ফলমূল এর চাহিদা মেটাতে অনেকে বেছে নিচ্ছেন ছাদ বাগানের উদ্যোগ। 

 ছাদের পরিমাপ:

ছাদের পরিমাপ ছোট বা বড় যেমনই হোক না কেন প্রয়োজন নিজেদের চেষ্টা, আগ্রহ ও সময়। আমার ছাদ যদি ছোট হয় তাহলে পাঁচ থেকে দশটা টব হলেই হবে। আর ছাদ যদি বড় হয় তবে তো কথাই নেই ইচ্ছেমতো নানা ডেকোরেশনের মাধ্যমে গাছগুলোকে সাজিয়ে নিতে পারবেন। ছাদে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ছোট চৌবাচ্চা বা বড় বড় ড্রামে মাছ চাষ অথবা বিকেলে আরাম আয়েশের জন্য দোলনার ব্যবস্হা করতে পারেন। কেউ ফুলের বা নানা ধরনের পাতাবাহারের করতে পারে। কেউ ফলের গাছ, কেউ সবজী করতে পারে। এটা কিন্তু খুব ন্যাচারাল বিষয় এবং এখানে কোন মাত্রা নেই, মানে এখানে কোন হিসাব নিকাশ নেই। 

Image Source : Unsplash

ভালো বাগানের জন্য যেটা দরকার: 

একটা গাছের জন্য সাধারণত যেটা দরকার আলো, বাতাস আর পানি। মাটিতে লাগালে যেটা দরকার, ছাদে লাগালেও সেটা দরকার, ঘরে লাগালেও ঠিক সেটাই দরকার। ঘরে যদি আলো থাকে যে পরিমাণ ঐ গাছটার জন্য দরকার, তাহলে কিন্তু ঘরেও হতে পারে। এই কারণে ছাদে আমাদের ঐ পরিবেশটা তৈরি করতে হবে। ভালো মানের মাটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। যেখানে গাছ হবে, গাছের জন্য রোদ লাগবে এবং সাথে বাতাসতো আছেই। এটাই হলো একটা গাছের জন্য পরিবেশ। এটা কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে, তাহলে একটা ভালো বাগান হতে পারে। টবের মাপ ছোট বড় নানা সাইজের হতে পারে। ইদানিং হাফ ড্রামের পদ্ধতিতে ড্রামের নিচের দিকে ছিদ্র করা হয় যাতে বাড়তি পানি জমে না থাকে। আবার স্হায়ী বেড পদ্ধতিতে ছাদের চারিদিকে ১.৫ থেকে ২ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরি করে তাতেও গাছ লাগানোর চলন শুরু হয়েছে। 

গাছের যত্নআত্নি:

মাটিতে উর্বর শক্তির জন্য নিয়মিত পচা গোবর, জৈব সার টিএসপি, এমওপি সার দিতে হবে। এছাড়াও আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা প্রতিদিন যে সবজি বা ফল  খাই তার খোসাগুলো একটা পাত্রে রেখে শুকিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি কিংবাডিমের খোসা গুড়ো করে গাছের গোড়ায় দিলে তা থেকে গাছ প্রচুর পুষ্টি পাবে। লম্বা গাছকে পেছনে রাখতে হবে। বছরে একবার মাটি পরিবর্তন করে নতুন মাটি দিতে হবে। প্রতি ছয় মাস পর গাছের জন্য পরামর্শদাতার শরণাপন্ন হতে হবে। বড় গাছগুলো মাঝে মাঝে ছেঁটে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন যাতে চারা লাগানোর সময় কয়কে ইঞ্চি করে ফাঁকা দেওয়া হয় তা না হলে বড় হলে ঠিকমত বড় হতে বাধাপ্রাপ্ত হবে।

Image Source : Pixabay

যে ধরনের গাছ লাগাবেন:

যদি আপনার ছাদে আলো  ও বাতাসের পরিমান বেশি থাকে তবে সে ধরনের গাছ বেছে নিবেন। কম আলো ও বাতাসের ক্ষেত্রে পরিবেশ উপযোগী গাছ বেছে নিবেন। খুব দ্রুত সবজি ও ফল দেয় এমন গাছ না লাগানোই ভালো। বরং কয়েক মাস সময় লাগে এমন ও বারোমাসি এমন গাছ লাগাবেন। আপেল, কুল, পেয়ারা, আমড়া, আম, কদবেল, জলপাই, ডালিম, স্ট্রবেরি, কামরাঙা, জাম, কলা আবার সবজির মধ্যে পটল, লেবু, বরবটি, গাজর, ক্যাপসিকাম, ঢেঁড়স, আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, পেঁয়াজ, আদা, রসুন,  সজিনা, লালশাক, পালংশাক, পুদিনা পাতা, লেটুসপাতা এককথায় নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন। পাতাওয়ালা যেমন করলা, পুইশাক, চিচিঙ্গা এ ধরনের গুলোকে বড় গাছগুলোর সাথে লাগাতে পারেন তাতে বাড়তি জায়গা বেঁচে যাবে। সবজি ও ফলের মাঝে মাঝে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ফুলের গাছ লাগালে কিন্তু বেশ লাগবে। 

ছাদবাগান প্রযুক্তি:

এটা হল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং জিনিস। যদি কেউ গাছ বা ফসল করবে, সবজি বা ফল করবে এটা কিন্তু প্রাইমারিলি ইনোভেসন লাগবে, প্রযুক্তি লাগবে। প্রচুর পরিমানে রিসার্চ করতে হবে। কি ধরণের কমপজিশনে মাটি থাকা দরকার, কি পরিমান অরগানিক ফার্টিলাইজার দিতে হবে যাতে বাতাস শিকড়ের কাছে যেতে পারে, পানিটা কিভাবে দেওয়া দরকার। আমরা যদি সকাল বেলা পাঁচ গ্লাস পানি খেয়ে নেই আর সারাদিন যদি পানি না খাই, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল কিছু হলো না। ঠিক তেমনি, গাছের ক্ষেত্রেও তাই, যখন যতটুকু দরকার, তখন তটটুকুই দিতে হবে। তাতে গাছের গ্রোথ ভাল হবে এবং স্যাঁতস্যাঁতে হবে না, নিচে ছাদ নষ্ট হবে না। সেখান থেকে যে ফল হবে, ফুল হবে, তার কোয়ালিটি অনেক বেটার হবে । পট, বীজ, মাটি এবং অরগানিক ফার্টিলাইজার সাথে সাথে গাছের গ্রোথের জন্য হরমোন লাগবে। সাথে সাথে বুকলেট এবং যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সেটা থেকে আমি মনে করি অনেক ফার্স্ট আগাবে। আমরাতো দেখতে পাচ্ছি এটা একটা মনের খোরাক। মনের খোরাকের কারনেই কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ কিছু কিনে ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, ছাদবাগান বা ছাদে গাছ অনেক কন্ট্রিবিউট করবে, মনের খোরাক মেটাবে এবং দ্রুত এটা গ্রো করবে।

Image Source : Unsplash

ছাদবাগানের সুফল:

এটা কমার্শিয়াল উদ্যোগ না। আমার যতটুকু জায়গা আছে, আমার যতটা সামর্থ্য আছে, আমি যা পছন্দ করি, তা নিয়েই শুরু করা । আমার একটা গাছে ১০টা লেবু ধরেছে। ১০ টা লেবু বিক্রি করলে কত পাওয়া যাবে? খুব বেশী হলে ৫০ টাকা বা ৬০ টাকা। ৫০ বা ৬০ টাকার জন্য নিশ্চয়ই পট দিয়ে এত বড় আয়োজন করতে যাব না। আমার দেখার মেন্টাল একটা সেটিসফিকশন যে, আমার গাছে লেবু ধরেছে। একইভাবে সবজির ক্ষেত্রেও তাই হবে। এটা অবশ্য পরিবেশের জন্যও একটা বিরাট ব্যাপার। গাছ থাকলে অন্তত এই ২-৩ ডিগ্রী তাপমাত্রা নামিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ এই ছাদে যখন রোদ পড়ে, তখন কিন্তু সেখানে হিট শোষণ হয় এবং রাতের বেলায় কিন্তু এগুলো ছাড়তে শুরু করে। যেহেতু এখানে গাছের ছায়া আছে, সেক্ষেত্রে কিন্তু তাপ শোষণ হচ্ছে না। তখন কিন্তু এই ২-৩ ডিগ্রী তাপমাত্রা নামিয়ে রাখা সম্ভব।

 আমরা বলতে পারি ছাদ বাগান শুধু মনের খোরাক মিটায় না, পরিবেশের বিরাট বড় উপকার করে। পাশাপাশি অক্সিজেনের কোয়ালিটি বাড়ায়, যেটা আমাদের খুব দরকার। একদিকে ঠা- ঠা, একদিকে অক্সিজেন কোয়ালিটি, আরেকদিকে দেখতে সুন্দর লাগে। আমি মনেকরি ছাদ বাগান করার উদ্যোগ সবারই নেওয়া দরকার। যান্ত্রিক জীবনে একটু সবুজের স্বস্তি।

লিখেছেনঃ সামিহা আতিকা

RedLive

Related post