‍এ.পি.জে আব্দুল কালামের লেখা ‘উইংস অব ফায়ার’ বইটির রিভিউ

 ‍এ.পি.জে আব্দুল কালামের লেখা ‘উইংস অব ফায়ার’ বইটির রিভিউ

“স্বপ্ন তা নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে,স্বপ্ন হলো সেটাই যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তাকে ঘুমাতে দেয় না।”
এই মহান উক্তিটি আমাদের সকলের  পরিচিত। উক্তিটি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পৃথিবীর একজন বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের। যার প্রতিটি কথাই মানুষের জীবনে প্রাসঙ্গিক। আজ আমরা আলোচনা করব আবদুল কালামের আত্মজীবনীমূলক বই ‘উইংস অব ফায়ার’ নিয়ে।

একটি অল্প শিক্ষিত পরিবার থেকে উঠে এসে কিভাবে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন সবকিছু পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে।আভুল পাকির জয়নুলাবদিন আবদুল কালাম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ সালে,ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রামেশ্বরে। তার বাবা ছিলেন একজন মাঝি। কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে ঘাটতি থাকলেও মানবিক ও মূল্যবোধ শিক্ষার কোনো অভাব ছিল না তাদের  পরিবারে।

এই বইয়ে নিজের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠার অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছেন তিনি, একই সাথে তার পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো। তার শৈশবের একটা ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমে তিনি ধর্ম-বৈষম্য সম্পর্কে তার মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। ঘটনাটি ছিল এমন-“যখন তিনি পঞ্চম শ্রেনিতে ছিলেন,একদিন একজন নতুন শিক্ষক তাদের ক্লাসে আসেন।একজন মুসলমান হিসেবে তিনি সবসময় মাথায় টুপি পড়তেন।সেদিন তিনি প্রথম সারিতে একজন হিন্দু সহপাঠীর সাথে বসেছিলেন।কিন্তু নতুন শিক্ষক হিন্দু-মুসলমান দুজন শিক্ষার্থীর একসাথে বসার বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারলেন না। তিনি আবুল কালামকে পেছনের সারিতে বসতে বললেন।এতে কালাম ও তার বন্ধু দুজনই মনে মনে কষ্ট পেলেন এবং বাড়িতে গিয়ে তাদের বাব-মাকে জানালেন। পরেরদিন তাদের অভিভাবকেরা গিয়ে শিক্ষককে বললেন, একজন শিক্ষক হিসেবে ছোট শিশুদের ধর্মীয়  ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে এ ধরনের নেতিবাচক শিক্ষা দেয়া তার উচিত হয় নি।”

এ ঘটনার মাধ্যমে আবদুল কালামের পারিবারিক শিক্ষা কতটা দৃঢ় ছিল তা বোঝা যায়।তিনি প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার  ‘ভারতরত্ন’ অর্জন করেন। এই বইয়ে আছে ভারতের স্যাটেলাইট ও মিসাইল প্রোগ্রাম তৈরির পেছনের সেই দুর্বোধ্য কাহিনী। এছাড়াও ভারতের মহাকাশ নিয়ে গবেষণার পেছনে বিক্রম সরভী,ড. ব্রাহম প্রকাশ সহ আরও অনেক কৃতী ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ রয়েছে।আবদুল কালাম অগ্নি,পৃথ্বী, আকাশ, ত্রিশূল, নাগ নামক বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছিলেন, যার কারণে ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক থেকে ভারত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়।

তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার জন্য সবথেকে কঠিন মুহুর্ত ছিল যখন তাকে আদালতের দেওয়া মৃত্যুদন্ড এর ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করতে হয়।কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক কারণে বিকারগ্রস্ত  হয়ে তারা অপরাধের পথ বেছে নেয়।অনেকের হয়ত প্রশ্ন থাকতে পারে এমন একজন গুণী মানুষ, তিনি কি কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই একজন সফল ও মহান মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন!

সফলতার পথে প্রত্যেকটি মানুষকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ পি জে আবদুল কালামও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি একজন যোদ্ধা পাইলট হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য বিমানবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ হারান, কারণ উক্ত পরীক্ষায় ভারতের বিমানবাহিনীর আটজন কর্মী প্রয়োজন ছিল, তিনি নবম হয়েছিলেন। স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হয়ে তিনি অনেক হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু এই হতাশাকে কাটিয়েই পরবর্তীতে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি বলেছিলেন, “কখনো তোমরা ব্যর্থতার জন্য আশেপাশের পরিবেশকে দোষারোপ করো না,বরং তোমার বর্তমান সময়কে কাজে লাগাও যা তোমার ভবিষ্যতকে নতুন রূপ দেবে।

যারা বই পড়তে পছন্দ করেন, প্রত্যেকেরই এই অসাধারণ বইটি পড়া উচিত। বইটিতে আবদুল কালাম তার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা ও জীবন থেকে নেয়া অনেক ইতিবাচক শিক্ষা দিয়েছেন, যা একজন মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আলোকিত মানুষ হতে সাহায্য করবে। সবশেষে  এ পি যে আবদুল কালামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উক্তি তুলে ধরা হলো-
“মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার,বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।”
“যদি সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চাও,তাহলে তোমাকেই প্রথমে সূর্যের মতো পুড়তে হবে।”
“জীবন আর সময় হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।”
“স্বপ্ন দেখতে হবে,স্বপ্ন থেকেই চিন্তার জন্ম হয় আর চিন্তা জন্ম দেয় কাজের।”
লিখেছেন : ছাদাপ জাহান দিনা 

RedLive

Related post