ডক্টর স্পেনসার জনসনের লেখা ”হু মুভড মাই চীজ?” বইটির রিভিউ

 ডক্টর স্পেনসার জনসনের লেখা  ”হু মুভড মাই চীজ?” বইটির রিভিউ

“হু মুভড মাই চীজ” একটি আত্মউন্নয়নমূলক বই। লেখক ডক্টর স্পেনসার জনসন বইটিতে একটি গল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে ব্যক্তি জীবনে এবং কর্মজীবনে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। হু মুভড মাই চীজ ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি সবসময়ের সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলোর মধ্যে একটি। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বইটি মোট ৩৭টি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে এবং ২৬ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। 

মাত্র বত্রিশ পাতার এই বইটিতে রয়েছে আমাদের জন্য চমৎকার কিছু শিক্ষা। হু মুভড মাই চীজ এর গল্পটি দুটি ইঁদুর- স্নিফ (Sniff) ও স্কারি (Scurry) এবং দুটি বামনাকৃতির মানুষ- হও (Haw) ও হেমকে (Hem) নিয়ে যারা একটি গোলকধাঁধায় বাস করে এবং চীজ এর সন্ধান করে প্রতিনিয়ত। স্নিফ, স্কারি, হেম এবং হও রোজ সকালে গোলকধাঁধার ভেতরে চীজের সন্ধানে বের হতো। স্নিফ এবং স্কারি গন্ধ শুকে শুকে চীজ স্টেশন খুঁজে পেতো যেখানে রয়েছে চীজের বিশাল ভাণ্ডার। অন্যদিকে হেম এবং হও তাদের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে চীজ স্টেশন খুঁজে বের করতো এবং প্রতিবার অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চীজ স্টেশন খুঁজে বের করার সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতিটি বেছে নিতো। অনেক সময় তারা সফল হতো আবার কিছু সময় বিফলও হতো। তবে দিন শেষে চারজনই চীজ স্টেশন খুঁজে পেয়ে যেতো। 

পরিবর্তনের জন্য তৈরি থাকা

চীজ স্টেশনে পৌঁছে গেলেও স্নিফ এবং স্কারি তাদের জুতো খুলে গলায় ঝুলিয়ে রাখতো, যেন আবার দৌড়ানোর প্রয়োজন হলে সহজেই জুতো পাওয়া যায়। অর্থাৎ তারা সর্বদাই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতো। অন্যদিকে হেম এবং হও চীজ স্টেশনে পোঁছে সব ভুলে শুধু চীজ উপভোগ করতো। তাই যখন চীজ স্টেশন-সি থেকে সব চীজ উধাও হয়ে গেলো, তখন হেম এবং হও হতাশ হয়ে পড়লেও স্নিফ এবং স্কারি জুতো পায়ে আবার বেরিয়ে গেলো গোলকধাঁধায় নতুন চীজ স্টেশনের সন্ধানে। 

কল্পনাশক্তি এবং ইতিবাচক দৃষ্টান্ত

মানুষ মাত্রই কল্পনাপ্রবণ। তবে কল্পনাকে ইতিবাচক দিকে চালাতে হবে। জীবন সর্বদাই চলমান এবং পরিবর্তনশীল। তাই কখনও কোনো পরিস্থিতিতে কমফোর্টেবল হয়ে গেলে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে চিরকাল এভাবেই চলবে, কোনো পরিবর্তন আসবে না। তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে হবে এবং পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নিতে হবে।

পরিবর্তনকে মানিয়ে নেওয়া

জীবনের পথে পরিবর্তন আসবেই। অনেক সময়ই আমরা এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারি না। কেননা আমরা কমফোর্ট জোনে থাকতেই বেশি পছন্দ করি। অথচ কমফোর্ট জোনে থেকে গেলে কিন্তু আমাদের বিকাশ হয় না। নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকি আমরা। তাই পরিবর্তনকে ভয় না বরং গ্রহণ এবং অভিযোজন করে নিতে হবে। জীবনের পথে নতুন রাস্তা বেছে নিতে হবে। 

অতীতের শিক্ষাকে কাজে লাগানো

অতীতের ভুলগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ভুলগুলো নিয়ে আক্ষেপ না করে বরং ভুলগুলোর উপর হেসে সংশোধন করে নিতে হবে। 

কেনো পড়বেন বইটি

চমৎকার এই বইটি পড়তে এক ঘণ্টারও কম সময় লাগবে। সব বয়সী পাঠকদের জন্য বইটি। অনেকসময় দেখা যায় আত্মউন্নয়নমূলক বইগুলো পড়তে একঘেয়েমি লাগে। তবে হু মুভড মাই চীজ বইটির বেলায় তা হবেনা। 

বইটিতে ‘চীজ’-কে একটি রুপক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। এই চরিত্র গুলো কিন্তু আমাদের জীবন থেকেই নেওয়া। আর চীজ হলো আমাদের জীবনের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা যেগুলোর পিছে আমরা ছুটে চলছি। হোক সেটা গাড়ি-বাড়ি, চাকরি বা অন্যকিছু। লেখক স্পেনসার জনসন গল্পটিতে খুবই সাবলীল ভাষায় জীবনের কঠিন সত্যগুলো তুলে ধরেছেন। সাথে এটাও দেখিয়েছেন যে পরিবর্তন এর সাথে খাপ খাইয়ে নিলে জীবন আসলে অতটাও কঠিন নয়! 

লিখেছেনঃ মালিহা মাহমুদ

RedLive

Related post