হল এলরড এর “দ্য মিরাকল মর্নিংঃবুক রিভিউ

 হল এলরড এর “দ্য মিরাকল মর্নিংঃবুক রিভিউ

মানব সভ্যতার শুরু ও মানবজাতি সভ্য হওয়ার পর থেকে সভ্য সমাজে যে জিনিসটির কদর সবসময় বেশি তা হচ্ছে বই। কারণ বই পড়েই মানুষ সভ্য হয়, বই পড়েই মানুষ আত্মিকভাবে সমৃদ্ধ হয়। আর বিভিন্ন ধরনের বইয়ের ভেতর মোটিভেশনাল ও আত্মউন্নয়নমূলক বই আমাদের জীবনে সরাসরি একটা প্রভাব রাখে।আজ আমরা সেরকমই একটি অমূল্য বই ‘The Miracle Morning’ নিয়ে আলোচনা করব।

“Early to bed and early to rise,makes a man healthy, wealthy and wise.”
এই ইংরেজি প্রবাদটি আমাদের সবারই জানা।এটি শুধুমাত্র একটি প্রচলিত বাক্যই নয়, বিভিন্ন গবেষণায়ও সকালে ঘুম থেকে উঠার সুফল প্রমাণিত হয়েছে। ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’ বইটিতে লেখক হল এলরড সকালে ঘুম থেকে উঠে লাইফ সেভারস (The Life S.A.V.E.R.S) নামে ছয়টি অভ্যাসের কথা তুলে ধরেছেন, যা জীবনযাপনের এক নতুন পদ্ধতি, নতুন অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে আপনার জীবনকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলবে। সকালের এই কার্যক্রম ও তা থেকে সৃষ্ট প্রভাবকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’।


Image Source : Pixabay

নীরবতা (Silence)

S.A.V.E.R.S শব্দটির প্রথম S থেকে এসেছে Silence বা নীরবতার কথা। আমাদের কোলাহলপূর্ণ, প্রচন্ড গতিশীল ও বহুল-চর্চিত জীবন থেকে উন্নতির পথে নীরবতা প্রথম পদক্ষেপ। এখানে নীরবতা বলতে ঘুম থেকে উঠে কিছুটা সময় নীরবে সময় কাটানোর কথা বলা হয়েছে। বাস্তবজীবনে আমরা অনেকেই ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা করে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু লেখক সারাদিনের কর্মব্যস্ত সময়টাকে অতিবাহিত করার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করতে শান্ত হয়ে দিন শুরু করার কথা বলেছেন,যা সারাদিনের চাপ নিয়ন্ত্রণ করবে,সক্ষমতা আনবে, একই সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা ও কাজ করতে সাহায্য করবে। নীরবতার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য মোটিভেশন, প্রার্থনা, রিফ্লেকশন ইত্যাদি করা যেতে পারে।

ইতিবাচক আত্মকথন (Affirmation)

আপনি নিজেকে নিয়ে কি ভাবছেন সেটা সাফল্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আপনার আত্মকথন হয় আপনার পক্ষে ভূমিকা রাখছে বা বিপক্ষে। নির্ভর করে আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণের উপর। নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে আপনার সামর্থ্য বুঝতে সাহায্য করে। এছাড়া আপনার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ও বাস্তবায়িত করতে আত্মচিন্তার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় আশি ভাগ মানুষ নিজের নেতিবাচকতা (ফিগার,চাকরি, মানুষের মন্তব্য ইত্যাদি)  নিয়ে নিজের সাথে কথপোকথন করে,যা শুধুমাত্র হতাশার জন্ম দেয়। তাই সবার আগে নিজের চিন্তাগুলোকে বিন্যাস করুন, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন,সেই লক্ষ্যের পেছনে কারণ খুঁজে বের করুন,বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করুন এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে নিজের কাছে প্রতিশ্রুতি দিন।

দৃশ্যায়ন বা কল্পনা (Visualization)

দৃশ্যায়ন হল আমাদের মনের কল্পনা বা মানসিক মহড়া। দৃশ্যায়নের মাধ্যমে কল্পনায় নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাব্য উপায় ব্যবহার করে ফলাফল পর্যালোচনা করা যায়। এতে আপনি সবথেকে কার্যকরী উপায়টি বাস্তবে ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা বেশিরভাগ সময়ে আগের ভুল বা ব্যর্থতা নিয় ভাবতে থাকি। এতে নতুন কিছু নিয়ে ভাবার স্থান পাই না। আত্মকথনের পরেই দৃশ্যায়ন শুরু করা জরুরি। আপনি লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে পরিকল্পনা করেছেন তা নিয়ে ভাবতে থাকুন এবং কল্পনায় পর্যায়ক্রমে সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পরিকল্পনা ঠিক কিনা।

শরীরচর্চা (Exercise) 

প্রত্যেক সকালে ব্যায়াম করা আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাস হওয়া উচিত। আপনি যদি কয়েক মিনিটের জন্যেও ব্যায়াম করেন আপনার শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সক্ষমতা বাড়বে। ব্যায়াম করার পদ্ধতি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। আপনি জিমে যেতে পারেন, দৌড়াতে পারেন কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। তবে লেখক ব্যক্তিগতভাবে যোগব্যায়ামকে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ যোগব্যায়াম শরীরের জড়তা কাটাতে, শক্তি বৃদ্ধি করতে,শ্বাস-প্রশ্বাস  নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া যোগব্যায়ামকে আপনি মেডিটেশনের একটি ধরন হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

Image Source : Pixabay


পঠন (Reading) পড়া

Life S.A.V.E.R.S এ পঞ্চম উপাদান হলেও জীবনে যে কোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য এটাই প্রথম উপাদান। জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করার জন্য যে জ্ঞান ও পরিকল্পনা প্রয়োজন তা অর্জন করতে ‘পঠন’ সব থেকে কার্যকর উপায়। লেখক দৈনিক পড়ার অভ্যাস গঠন করতে বলেছেন। দিনে অন্তত দশ পৃষ্ঠা পড়ুন। যদি তাও না পারেন তাহলে পাঁচ পৃষ্ঠা পড়ুন। এভাবে পড়ার অভ্যাসে আপনি বছরে কমপক্ষে আঠারোটি বই শেষ করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কি ধরনের বই পড়বেন।  পড়ার ক্ষেত্রে আপনি নিজস্ব পছন্দকে গুরুত্ব দিন, তবে লেখক এমন বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন যা আপনার বাস্তব জীবনেও প্রতিফলন ঘটাবে।
লিখন (Scribing)

লেখক হল এলরড ডাইরি লিখতে পছন্দ করতেন। আপনার মনের কথা, কল্পনা,ফ্যান্টাসি যা-ই বলেন না কেন, সেটা ভৌত কাগজে লেখার অনুভূতিই অন্যরকম। এতে আপনি যখনই ডায়েরির পাতা উল্টাবেন তখন ভাবনাগুলো আবার ফিরে আসবে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের পথে আপনার কল্পনার পদক্ষেপের সঙ্গে পরিপার্শ্বের সমন্বয় বাড়বে। ডায়েরি লেখার সুফলের অভাব নেই। নিয়মিত ডায়েরি লিখে যখন একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আপনি লেখাগুলো পড়বেন তখন আপনি নিজের সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন। ডায়েরি না লিখে আপনি বইও লিখতে পারেন। এটা আপনার নিজস্ব ইচ্ছা। তবে যাই লিখুন আত্ম উপলব্ধি আসাটা জরুরি। 

‘দ্য মিরাকল মর্নিং’ বইটির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর উজ্জীবনী শক্তি। কোনো অভ্যাসই একদিনে গড়ে ওঠে না। আপনি যদি স্ব-আরোপিত সীমাবদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান, অন্তন ত্রিশ দিন এই অভ্যাসগুলো চর্চা করার চেষ্টা করুন। তবে এসবের জন্য সবথেকে বেশি যা প্রয়োজন তা হচ্ছে নিজের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।

লিখেছেনঃছাদাপ জাহান দিনা

RedLive

Related post