মধুওয়ালাঃ সুস্বাস্থ্য জীবনে নির্ভেজাল খাবারের বিশ্বস্ততার নাম

 মধুওয়ালাঃ সুস্বাস্থ্য জীবনে নির্ভেজাল খাবারের বিশ্বস্ততার নাম

প্রতিবেদকঃ রিয়ানুর ইসলাম

খাদ্য প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের মাত্রা তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানের বদৌলতে খাবারের প্রক্রিয়াজাত করে এর চাহিদা মেটানোর চেষ্টায় জৈব ও প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন খাবারের এখন বড্ড অভাব। গ্রামগঞ্জে এখনো এই জৈব খাবার গুলো উৎপাদিত হয়ে থাকলেও শহরের মানুষের হাতে পৌঁছানোর সুযোগ খুবই কম। ঠিক এই সময়ে গড়ে উঠে কিছু প্রতিষ্ঠান যারা মানুষের হাতে বানানো খাবার থেকে শুরু করে, প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া খাবারও এখন পাওয়া যায় দেশবিদেশ জুড়ে; এদের মধ্যে ‘মধুওয়ালা‘ এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। আজ কথা বলবো, মধুওয়ালা এর মালিক মোঃ রিফাত ইসলামের সাথে।

প্রতিবেদকঃ প্রথমে আপনাদের পরিচয়টি জানতে চাইবো?
রিফাতঃ মোঃ রিফাত ইসলাম জন্ম শৈশব,কৈশোর এবং বড় হওয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার সুন্দর একটি গ্রামে।২০২১ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি শিক্ষার্থী। বাবা ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে অনেক ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনা এর পাশাপাশি ব্যাবসাকে খুব প্রাধান্য দিয়েছি।পড়াশোনা এর সুবাধে ঢাকায় অবস্থান করার সময় দেখেছি ঢাকার সবাই অর্গানিক পন্য পেয়ে থাকেন না তাই চেষ্টা করছি গ্রামের অর্গানিক পণ্য গুলো সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার।

ছবিঃ ‘মধুওয়ালা’ এর মালিক মোঃ রিফাত ইসলাম

প্রতিবেদকঃ কিভাবে আপনার উদ্যাগটি শুরু করেছেন?

রিফাতঃ ছোট বেলা থেকেই বিজনেসের প্রতি একটি আলাদা ঝোক ছিল বিশেষ করে পড়াশোনা এরজন্য ঢাকায় থেকে গ্রামের খাটি পণ্যের খুব অভাব বোধ করেছি, তখন ভাবলাম আমার মত অনেকেই গ্রামের খাটি পণ্য পেয়ে থাকেন না, তাই আমি প্রথম কাজ করি মধু নিয়ে। এবং খাটি মধু পুরো দেশে ছড়িয়ে দেবার পণ করলাম। এইভাবেই ২০১৯ সালে নভেম্বরে মাত্র ১০০০ টাকা নিয়ে মধুওয়ালা নামে পেইজ দিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। প্রথম অর্ডার আসতে আমার ৮ দিন সময় লেগেছিলো তারপরের সময়ে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে তখনো মানে ২০১৮ সালের শেষের দিকেও উদ্যোক্তা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না।

আমি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে উই তে একই সাথে ডিজিটাল স্কিল গ্রুপে যোগদান করে উদ্যোক্তা শব্দের অর্থ খুজে পাই এবং তখন এসব নিয়ে কাজ করা শুরু করি ধীরে ধীরে গরুর ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেল এবং ঘি আমি আমার উদ্যোগ মধুওয়ালাতে যুক্ত করি এবং মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে উই এর কল্যানে আমার মাসিক সেল লাখ টাকা হয়ে গেল। পরবপরবর্তীতে লিচু এবং আমের সিজন আসল আমার উপর উই এর অনেকের আস্থা চলে আসল চিন্তা করলাম নিজের বাগানের লিচু এবং আমগুলো সবার ঘরে পৌছানো যায় কি না যেমন চিন্তা তেমন কাজ শুরু করে দিলাম এবং গত বছরেই আমি প্রায় ২০ হাজার লিচু এবং ৪ টন হাড়িভাংগা আম বাজারজাতে সক্ষম হই। এই ক্ষেত্রে উই এর অবদান পুরোটাই। আমি সারাজীবন একটি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব আর তিনি হলেন রাজীব আহমেদ স্যার। উদ্যোক্তার শুরু প্রথম দিকে স্যারের অডিও আড্ডা থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

ছবিঃ ‘মধুওয়ালা’ এর খাটি গাওয়া ঘি

প্রতিবেদকঃ আপনার এমন উদ্যোগের পিছনের কারণ কি?

রিফাতঃ আমার উদ্যোগের মূল কারণ ছিল নিজের একটি পরিচয় তৈরী করা এবং অবশ্যই আমার প্রথম থেকেই চিন্তা ছিল অন্তত একজন মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা। আর অর্গানিক পণ্য নিয়ে কাজ করার কারণ হচ্ছে বড় ভাইয়া ঢাকায় থাকে তার গ্রামীণ খাদ্যের প্রতি যে একটি ভালোবাসা তা দেখে এই পণ্য নিয়ে কাজ করা।

ছবিঃ ‘মধুওয়ালা এর বাজারজাতকরে ফর্মালিন মুক্ত দেশীয় বাগানের লিচু

প্রতিবেদকঃ আপনি কি কি সেবা নিয়ে কাজ করছেন?

রিফাতঃ আমি এখন বিভিন্ন ধরনের মধু, ঘি এবং কাঠের ঘানির সরিষার তেল নিয়ে কাজ করছি। মৌসুমী ফল নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে নিজেদের বাগানের লিচু, আম নিয়ে কাজ করছি। এজন্য দ্রুতই নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরী করব যেহেতু আমার পুরো উদ্যোগটি এখন অবধি অনলাইন নির্ভর।

প্রতিবেদকঃ একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় এবং তা কিভাবে সমাধান করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

রিফাতঃ আসলে বাস্তবে উদ্যোক্তা হওয়া এবং উদ্যোক্তা হব চিন্তা করা সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট। অর্গানিক পণ্য নিয়ে কাজ করলে সবথেকে বেশি যে সমস্যা হয় তা হল ডেলিভারি সমস্যা। আমাদের পণ্য গুলো রংপুর থেকে আসে তারপর ঢাকায় কাষ্টমারদের হোম ডেলিভারি করা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবুও কেন জানি দিন শেষে একটি প্রাপ্তি থেকেই যায় যে হ্যা আমি পেরেছি কারো হাতে খাটি কোন পণ্য পৌছে দিতে। এবং দিনশেষে কাস্টমার দের সুন্দর রিভিউ গুলো মন ভরে দেয়।

প্রতিবেদকঃ এই উদ্যোগ নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

রিফাতঃ আমি চাই মধুওয়ালা একটি ব্র্যান্ড হবে যেখানে বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য পাওয়া যাবে। বিশেষ করে আমি সরিষার তেল নিয়ে অনেক আশাবাদী কারণ বিষাক্ত সয়াবিন ছেড়ে সবাই সরিষার তেল ব্যবহার করবে। তাও তা মধুওয়ালা ব্রান্ডের এক্ষেত্রে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে থাকা কাঠের ঘানিগুলো বেচে থাকবে হয়তো। বিষাক্ত ফল থেকে মানুষকে বাচানো আমার আর একটি লক্ষ। আমি গত বছরের ন্যায় এবারো লিচু এবং আম নিয়ে কাজ করতে চাই (আমার জানামতে বাংলাদেশের মানুষ এই দুইটা ফল বেশি খেয়ে থাকে পরিণামে এই দুই ফলে প্রচুর পরিণামে বিষাক্ত উপাদান দেয়া হয়)। হাড়িভাংগা আম উত্তরাঞ্চলের একটি বিশেষ জাতের আম এবং দেশের প্রথম শ্রেণির আম কিন্তু অনেকেই এই আমকে চিনে না আমি চাই দেশের সর্বত্র এই আম ছড়িয়ে পড়ুক।

প্রতিবেদকঃ আপনাকে ধন্যবাদ, রিফাত।

RedLive

Related post