রবিহীন বাইশে শ্রাবণ

 রবিহীন বাইশে শ্রাবণ

সারাদিন জুড়ে মেঘলা আকাশে তর্জন-গর্জন। বাহিরে কান পাতলে শোনা যায় রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ। এভাবেই দেখতে দেখতে বর্ষার স্নিগ্ধতা, প্রাণচ্ছোলতা শেষ হতে চললো। শ্রাবণ মাস শেষ হবার বাকি মাত্র‍ কয়েকদিন।

আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০ তম প্রয়াণ দিবস। বাংলাসাহিত্যে যে অমৃতের সন্ধান তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৪১ সালের আজকের এই দিনে মধ্যাহ্নে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে কবি সেই অমৃতলোকের পথে যাত্রা করেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েকমাসে আগে ১৯৪১ সালের ১৩ই মে রোগশয্যায় শুয়েই লিখেছিলেন, ‘আমারই জন্মদিনে মাঝে আমি হারা’। বিস্ময় হলেও সত্যি যে, তাঁর মৃত্যুদিবস ১৯৪১ সালের ৭ই অগাস্ট এবং জন্মদিবস ১৮৬১ সালের ৭ই মে৷ পৃথিবীতে খুব কম ভাগ্যবান আছেন কবিগুরুর মত যাঁদের জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস একই তারিখে হয়।

রবীন্দ্র সাহিত্য প্রেমীদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ভাবে আজকের দিনটি ভীষণ শূন্যতার। দিনটি যদি প্রবল বর্ষণময় হয়, তাহলে সেই শূণ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কেউবা কবির কবিতা পাঠ করে ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও চেয়ে…আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাস বেয়ে…। কারো ঘরের কোণে বেজে উঠে কবির আবেগময় গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান। এভাবেই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করার হরেক আয়োজন চলে রবীন্দ্রনাথ প্রেমীদের।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কম-বেশি সবাই জানে। ছোটবেলার ‘মেঘের কোলে রোদ উঠেছে, বাদল গেছে ছুটি’ কবিতার মাধ্যমে কবির সাথে পরিচয় শুরু। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম এত অসামান্য প্রতিভার অধিকারী যে কারো পক্ষে কবিকে বিস্তৃতভাবে জানা প্রায় অসম্ভব। বাংলাসাহিত্যে বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে ছোটগল্পের পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠশিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত। পারিবারিক জমিদারির তদারকির সূত্রে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে অবস্থানকাল রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার স্বর্ণযুগ। সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোও একই সময়ে রচনা করেন। তাঁর ছোটগল্পে যেন প্রকৃতির পটে জীবনকে স্থাপন করে জীবনের গীতময় বিশ্বজনীন প্রকাশ এক অপূর্ব মহিমায় চিত্রিত হয়েছে। কিন্তু বিশ শতকের রচিত গল্পগুলোতে বাস্তবতাই প্রাধান্য পেয়েছে। আবার, আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষও তিনি। মানবধর্মের জয় ও সৌন্দর্যতৃষ্ণা ছিল তাঁর কবিতার মূলসুর। কবিতা ছাড়াও ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও সংগীত রচনায় কালজয়ী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তাঁর প্রতিভার ছোঁয়া পায়নি। এত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেও মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে কবি নিজের অপূর্ণতার কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করেছিলেন। দীর্ঘ জীবন পরিক্রমণের শেষপ্রান্তে পৌঁছে স্থিতপ্রজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ পেছন ফিরে তাকিয়ে সমগ্র জীবনের সাহিত্যসাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব খুঁজেছেন “ঐকতান কবিতায়”। কবিতায় বলেছেন ‘বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি……এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক – রয়ে গেছে ফাঁক।” এভাবেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছিলেন নিজের অকিঞ্চিৎকরতা স্বরুপ।

কবির মহাপ্রয়াণ দিবসে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। কবি বেঁচে থাকবেন চিরকাল আমাদের অন্তরে, মননে ও চিন্তাধারায়৷ তরুণ প্রজন্মের মাঝে রবীন্দ্র সাহিত্যের চর্চা অব্যাহত থাকুক।

লিখেছেন:বৃন্তি সাহা

RedLive

Related post